Bangladesh

প্রণোদনায় কাটছাঁট চাপে রপ্তানি খাত

শিল্পে অনাকাঙ্খিত ঝুঁকি ও বিপর্যয় ডেকে আনবে: বিজিএমইএ

রপ্তানি প্রণোদনা হ্রাসের বিষয়টি সময়োচিত হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন রপ্তানিকারকরা। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এতে শিল্পে অনাকাঙ্খিত ঝুঁকি ও বিপর্যয় ডেকে আনবে। বিশেষ করে অর্থবছরের মাঝামাঝি এ ধরণের সিদ্ধান্তে বাজার হারানোর আশঙ্কা করছেন তারা। ডলারসংকটের এ সময়ে পণ্য রপ্তানি বাড়ানো জরুরি, তবে রপ্তানি সেভাবে বাড়ছে না। এমন সময়ে পণ্য রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা বা ভর্তুকি দেওয়া থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তারপর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমেছে। এই কঠিন সময়ে গত বছর রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার কমানো হয়েছে। প্রতিনিয়ত ব্যবসার খরচ বাড়ছে। গ্যাসের সংকট কাটছে না। অথচ ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করে রাখা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে হঠাৎ নগদ সহায়তা কাটছাঁট করার সিদ্ধান্তে বড় চাপের মধ্যে পড়বে দেশের রপ্তানি খাত।

নগদ সহায়তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হচ্ছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। তবে এখন নগদ সহায়তা কাটছাঁট করা হলে তৈরি পোশাকশিল্পের কমপক্ষে অর্ধেক পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা পাওয়া যাবে না। 

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মান্নান (কচি) ইত্তেফাককে বলেন, পাঁচটি প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর নগদ সহায়তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এগুলো হল টি শার্ট, সোয়েটার, নিটেড শার্ট, পুরুষদের আন্ডার গার্মেন্টস, ওভেন ট্রাউজার ও জ্যাকেট। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই পাঁচ পণ্যে প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে; যা মোট পোশাক রপ্তানির ৫৫ শতাংশের বেশি। বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ প্রচলিত ব্যবস্থা কর্তন শিল্প ও অর্থনীতির জন্য সহায়ক সহায়ক পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি না।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারে জানায়, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে একত্রে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ না করে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই সরকার বিভিন্ন ধাপে নগদ সহায়তা/ প্রণোদনার হার অল্প অল্প করে হ্রাসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকেই হ্রাসকৃত প্রণোদনা হার কার্যকর হয়েছে, যা ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। অর্থনীতিতে পরিমাণের দিক থেকে পোশাক খাতই সবচেয়ে বেশি প্রণোদনা পায়। নতুন নীতিতে, তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তার হার ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ক্রাস্ট লেদার রপ্তানিতে রপ্তানি প্রণোদনা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন বাজারগুলোয় রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রণোদনার হার ৪ শতাংশ  থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এই হ্রাসের আওতাভুক্ত হয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, কৃষিপণ্যসহ আরও অন্যান্য খাত।

সার্কুলারটি কার্যকর হওয়ার আগে, প্রণোদনার সর্বোচ্চ হার ছিল কৃষিপণ্যের জন্য। যেমন আলু ও প্রক্রিয়াজাত মাংস রপ্তানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো, যা এখন কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রধান তিনটি নতুন বাজার অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানে রপ্তানিতে ৪ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হতো। নতুন সার্কুলারে, এসব বাজারকে প্রচলিত বাজারের তালিকায় আনা হয়েছে, যেক্ষেত্রে নগদ সহায়তার হার হলো শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।

এস এম মান্নান বলেন, নতুন বাজারের তালিকা থেকে বাদ পড়া তিনটি দেশে চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বরে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৪৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই বাজারগুলো বাদ দেওয়ার ফলে সেখানে আমাদের রপ্তানি বিপর্যয় হবে। সামগ্রিক ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী প্রণোদনা প্রায় ৭০ শতাংশ কর্তন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এরকম একটি গুরুতর সিদ্ধান্ত শিল্পকে চরম ভাবে বিপর্যস্ত করবে বলে তিনি মনে করেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button