Bangladesh

প্রশাসনে বছর জুড়ে ‘নিষেধাজ্ঞা’ উৎকণ্ঠা

প্রশাসন-পুলিশ কর্মকর্তাদের মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা উৎকণ্ঠার বছর ছিলো ২০২৩। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে সম্পন্ন করার পথে যে বা যারা অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে, তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের স্পষ্ট ঘোষণা আছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। এর বাইরে মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ওপর দেশটির নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যাদের সন্তান বিদেশে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পড়াশোনা করছে এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা যারা পরবর্তী নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর তারা অস্বস্তিতে ভুগছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেশের জন্য লজ্জাজনক। কিন্তু নির্বাচন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য সরকার ও প্রশাসনেরও দায় আছে। মার্কিন ভিসা নীতির পরও যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা না হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আরও চাপ বাড়ানোর সুযোগ পাবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচনায় ছিলো।
নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের সম্পৃক্ততা বেশি থাকায় তাদের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠাও কাজ করছে বলে জানা গেছে। মাঠ প্রশাসনের বাইরে যারা নির্বাচনী দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন কর্মকর্তাদের ভিসানীতি নিয়ে দুশ্চিন্তা কম। ডেনিলউইজ পুলিশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ ও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগছে প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি অংশ, যদিও তারা কেউই প্রকাশ্যে এটি স্বীকার করতে চাইছেন না এটি ২০২৩ সালে বছর জুড়ে ছিলো দেশের প্রশাসনে আলোচনা ও সমালোচনা ঝড় তুলে ছিলো। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে মার্কিন কংগ্রেস ও সরকার ১৪ মাস সময় নিয়েছিল বলে জানা গেছে। ৮৬ জন সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার মধ্যে ২৯ জনের সন্তান বিদেশে পড়াশোনা করছে বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। এছাড়া সরকার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সন্তানদেরও তথ্য নিয়েছে।
এদিকে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছিলেন, ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করে খুব ভালো করেছে। তারা ( যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে, যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের বিধিনিষেধ দেবে। সরকার বলেছে, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। বাধা দিতে চাই না। তিনি বলেছিলেন, প্রধান বিরোধী দল বলছে, তারা নির্বাচন হতে দেবে না। তার মানে কীভাবে হতে দেবে না? একটাই পথ ভায়োলেন্স । ভিসা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে যারা নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের জন্য। বিধিনিষেধের তালিকায় তো অপজিশনের নামও আছে।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এত বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেবে না দেশটি। গত ২২ সেপ্টেম্বর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, বিরোধী দল, সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা, জুডিশিয়ারি ও সিকিউরিটি সার্ভিসের সদস্যরা ভিসা নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কর্মকর্তাদের কার্যকলাপ যাচাই করবে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন আমলা। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র গত ২টি জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় নিলে বিপুল সংখ্যক আমলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গত ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ডিসিরা এখন সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা। তাদের অনেকেই অবসরে চলে গেছেন। অন্যদিকে, গত ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ডিসিরা এখন যুগ্ম সচিব পর্যায়ের পদে রয়েছেন, যদিও তাদের মধ্যে কেউ কেউ অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন প্রশাসনে।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অতীতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ক্ষুণ্ন করার জন্য কাজ করেছে বলে অভিযোগ থাকা ব্যক্তিদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন,এই নীতি আগামী দিনের জন্য, যার অর্থ আমরা আশা করছি যে এই নীতি সহিংসতা প্রতিরোধে এবং বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে সহায়তা করবে। কিন্তু ডোনাল্ড লুর এই বক্তব্য বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের খুব একটা স্বস্তি দেয়নি, কারণ সর্বশেষ স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঘোষণায়ও বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নীতি আরোপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই ধরনের ব্যবস্থা নেয় কি না এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন কয়েকজন আমলা। আমলাদের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের প্রায় অর্ধেক পরিচালিত হয় ইউরোপীয় দেশগুলোতে। যদি ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে তাদের প্রশিক্ষণ অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে। পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলে ছিলেন, শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানেন যে বর্তমান সরকার আবার ক্ষমতায় আসতে ব্যর্থ হলে তারা সমস্যায় পড়বেন। এই কর্মকর্তারা সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এই কর্মকর্তাদের নিজস্ব ্রএক্সিট প্ল্যানগ্ধ আছে এবং তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পরপরই ডিএমপির মুখপাত্র ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলে ছিলেন,যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। মার্কিন ভিসা নীতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের ব্যাপারে অ্যাপ্লাই করা হয়েছে। যদি ভিসা নীতি আসে, তারা হয়তো যুক্তরাষ্ট্র যেতে পারবেন না। পুলিশ আইনের আওতার মধ্যে কাজ করে এবং ভিসা নীতি বাহিনীটির কর্মক্ষমতায় কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে বলেছেন, আমেরিকার ভিসা নীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা কাকে ভিসা দেবে, নাকি দেবে না, সেটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। আমরা সংবিধান অনুযায়ী দেশ চালাব। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে।
প্রশাসনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যাদের সন্তান বিদেশে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পড়াশোনা করছে এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা যারা পরবর্তী নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর তারা অস্বস্তিতে ভুগছেন। ভিসা বিধিনিষেধ কিছু সিনিয়র কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। গত ১৫ আগস্ট কমিশনের এক ব্রিফিংয়ে প্যানেল বক্তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, মানবাধিকারকর্মীসহ বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ এবং আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। এসব বিষয়ে তারা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করেন। ‘হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ: অ্যান আপডেট’ শীর্ষক ভার্চুয়াল ব্রিফিং বলা হয়ে ছিলো, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব ঘটনা তদন্ত করে সরকার নিরপেক্ষ ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের চলমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত হবে না।
ব্রিফিংয়ের আয়োজক কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্য জেমস পি ম্যাকগভর্ন ও রিপাবলিকান সদস্য ক্রিস্টোফার এইচ স্মিথ। তারা এই কমিশনের কো-চেয়ারম্যান। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের বিদেশি আইন বিশেষজ্ঞ তারিক আহমেদ। ব্রিফিংয়ে প্যানেল আলোচক ছিলেন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন অ্যান্ড এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ফেলো ক্রিস্টি উয়েদা, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্ল্যাকনার ও যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব পিসের সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামসের ভিজিটিং এক্সপার্ট জেফ্রি ম্যাকডোনাল্ড। ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন অ্যান্ড এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আগের মতোই অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। যদিও র‌্যাব ও এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় একটা তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব দেখা গেছে। র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমেছে। বাংলাদেশিদের যে মূল্য গুনতে হচ্ছে, তার মাত্রা কমিয়ে আনতে হিউম্যান রাইটস কমিশনকে পূর্ণ শক্তি ব্যবহারের আহ্বান জানান তিনি। তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে ২ হাজার ৬৮৩টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আটজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্ল্যাকনার বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব তৈরি হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম তাৎক্ষণিকভাবে কমে এসেছে। কিন্তু এখনো লোকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, বেআইনিভাবে আটকে রাখা হচ্ছে। পরে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বা আদালতে হাজির করা হচ্ছে। কারা হেফাজতে নির্যাতনের কথাও শোনা যাচ্ছে। গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষুণ্নকারী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। তবে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সহিংসতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতন বাড়ছে বলা হয়।
জেফ্রি ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে যে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বাংলাদেশি এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক দেশটির সর্বশেষ দুটি জাতীয় নির্বাচন (২০১৪ ও ২০১৮ সালের) খুবই ত্রুটিপূর্ণ, সহিংসতাপূর্ণ ও অনিয়মে ভরা ছিল। যে দলই জয়লাভ করুক না কেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে সে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার। এর আগে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য র‌্যাব এবং এর কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এই বছর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ভোট কারচুপির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।
এর প্রেক্ষাপটে রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লিটিগেশনবিষয়ক ফেলো ক্রিস্টি ইউয়েদা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আমরা যেমনটা দেখেছিলাম, ঠিক তেমনি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের নির্বাচনকে সামনে রেখে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং সরকারের সমালোচকদের টার্গেট করে নাগরিক অধিকার সঙ্কুচিত করার ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। ক্রিস্টি ইউয়েদা বলেন, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে সাংবাদিকদের ওপর ১৫১টি হামলা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ছাড়াও সরকার মিডিয়ার ওপর আক্রমণ করেছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রবিরোধী খবর প্রকাশের অভিযোগে সরকার ১৯১টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর বলে ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগেই আমাদের সতর্ক করেছে। তারা মে মাসের ২৪ তারিখ এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। আসলে তখন থেকেই তারা কাজ শুরু করেছে। তারপরও যদি আমরা ব্যবস্থা না নিই। আমাদের মতো আমরা কাজ করেই গিয়ে থাকি তাহলে তারা এখন সেকেন্ড সিগন্যাল দিচ্ছে যে তারা তাদের ভিসা নীতি কার্যকর শুরু করেছে। এই সময়ে তারা কে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে তার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে। তারা ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে যে সামনে তারা এটা নিয়ে তাদের কাজ অব্যাহত রাখবে। আমরা যদি এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা না করি তাহলে এটা আমাদের জন্য জটিলতা আরো বাড়াবে। কারণ এখানে তো শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, দুইদিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবেনা। তাদের সঙ্গে পুরো পাশ্চাত্য জগত। এগুলো যদি আমরা ধর্তব্যের মধ্যে না নিই তাহলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। দেশের মানুষের কষ্ট বাড়বে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button