Bangladesh

বছরে ৪ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি করপোরেট ও ধনীদের

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানাভাবেই কর ফাঁকি দিচ্ছে সম্পদশালী ব্যক্তি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। কখনো আইনের মারপ্যাঁচে, কখনো অবৈধ পথে আবার অ্যাকাউন্টিংয়ের কারিশমাতেও কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। যা খুব কম দেশেই রাজস্ব কর্তৃপক্ষের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কর ন্যায্যতা বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ট্যাক্স জাস্টিজ নেটওয়ার্কের (টিজেএন) প্রতিবেদনে কর ফাঁকির এসব তথ্য উঠে এসেছে।

‘স্ট্যাট অব ট্যাক্স জাস্টিস ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কর ফাঁকির কারণে বছরে বাংলাদেশ রাজস্ব হারাচ্ছে ৩৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলার বা চার হাজার ২২১ কোটি টাকা (এক ডলার সমান ১০৯ টাকা হিসাবে)।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকির কারণে বছরে বাংলাদেশ রাজস্ব হারাচ্ছে তিন হাজার ৯৩৭ কোটি চার লাখ টাকা; আর সম্পদশালীদের ফাঁকির কারণে ক্ষতি হচ্ছে ২৮৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর মুনাফা চলে যাচ্ছে ১৪৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ১৫ হাজার ৭৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এতে আরো বলা হয়, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ফাঁকির কারণে বার্ষিক ক্ষতি হচ্ছে জিডিপির ০.১ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের নাগরিকদের অফশোর সম্পদের মালিকানা রয়েছে ১৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার, যা জিডিপির ০.৬ শতাংশ এবং বৈশ্বিক অফশোর সম্পদ মালিকানার ০.০২ শতাংশ। এ ছাড়া ফিন্যানশিয়াল সিক্রেসি ইনডেক্সে (এফএসআই) বাংলাদেশ ৫২তম, স্কোর ৭৪.৬।

মূলত করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা কর ফাঁকি দিতে বিশ্বের বিভিন্ন অফশোর কম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। অর্থ দেশে রাখলে যে হারে কর দিতে হয়, বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেন বা কর স্বর্গ হিসেবে পরিচিত অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে তার চেয়ে অনেক কম হারে কর দিলেই চলে, সে কারণে ধনীরা অফশোর কম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কার্যকরভাবে বৈশ্বিক কর আইনে সংস্কার করা না গেলে আগামী এক দশকে বিশ্বের দেশগুলো এসব কারণেই সম্মিলিতভাবে রাজস্ব হারাবে ৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত ৪৭ দেশের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রাজস্ব হারানোর এ হিসাব অনুমান করা হয়েছে। সংস্থার মতে, প্রকৃত অঙ্ক এর চেয়ে আরো অনেক বড় হবে। ডাটার সীমাবদ্ধতার কারণে যা পূর্ণ হিসাবে আসেনি।

সংস্থাটির মতে, রাজস্ব ফাঁকির ৬৪ শতাংশই করে বহুজাতিক করপোরেশনগুলো।

এগুলো প্রতিহত করতে হলে আন্তর্জাতিক কর আইন সংস্কার খুবই প্রয়োজন। বাকি ৩৬ শতাংশ ফাঁকির কাজটি করেন সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাঁরা অফশোর কম্পানির নামে বিভিন্ন কর স্বর্গে নিজেদের সম্পদ নিয়ে যান।

সংস্থার মতে, বৈশ্বিক উৎপাদন ও আমদানি-রপ্তানির বেশির ভাগই বহুজাতিক কম্পানিগুলোর মাধ্যমে হয়। তাদের কারণে স্থানীয় পর্যায়ের ছোট কম্পানিগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ কর্মসংস্থানের বেশির ভাগই এরা করে থাকে।

ওইসিডির তথ্য বিশ্লেষণ করে ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক দেখাচ্ছে, বহুজাতিক কম্পানিগুলো প্রতিবছর যেসব দেশে করের হার কম, সেসব দেশে ১.১ ট্রিলিয়ন বা এক লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার মুনাফা পাচার করছে। তাতে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রত্যক্ষ কর বাবদ বছরে ৩০১ বিলিয়ন বা ৩০ হাজার ১০০ কোটি ডলার হারাচ্ছে।

দেশে দেশে কর ফাঁকি রোধে সরকার যেভাবে করপোরেট করহার হ্রাস করছে, তাতে প্রত্যক্ষ ক্ষতির তিন গুণ বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গবেষকরা হিসাব করেছেন। অঙ্ক করলে দেখা যাচ্ছে, এভাবে পরোক্ষ ক্ষতি হচ্ছে বছরে এক লাখ কোটি ডলার।

ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক মনে করছে, প্রতিবছর করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কর ফাঁকির কারণে ক্ষতি হচ্ছে ৪৭২ বিলিয়ন বা ৪৭ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d