বিএনপির অবরোধের পরিকল্পনা, মহাসমাবেশ থেকে আসবে আলটিমেটাম, আওয়ামী লীগেরও শোডাউনের প্রস্তুতি: টানটান উত্তেজনা
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে কঠোর অবস্থানে বিএনপি। দ্রুত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া আন্দোলন চাঙ্গা করে ঢাকা অবরোধের পরিকল্পনা করেছে। আর এ কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দাবি আদায় করে নিতে চায় বিএনপি। এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে এক দফা দাবি আদায়ে সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার আগেই আন্দোলনের কৌশল চূড়ান্ত করে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচনের আগে পদযাত্রা ও সমাবেশের মতো নিয়মিত কর্মসূচির পাশাপাশি রাজধানীতে কয়েক দফা মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের পর এক পর্যায়ে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করে। ওই কর্মসূচিতে সারাদেশ থেকে রাজধানীতে বিপুল সংখ্যক লোক জড়ো করে বড় ধরনের শোডাউন এবং প্রয়োজন মনে করলে রাস্তায় বসে পড়ার চিন্তাভাবনাও রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।
বৃহস্পতিবারের মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়েই সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে চায় বিএনপি। তবে এই দিন রাজধানীতে রাজপথের বিরোধী দলখ্যাত বিএনপি ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে চারিদিকে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপির মহাসমাবেশ ও আওয়ামী লীগের ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল থেকে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল নিজ নিজ কর্মসূচি সফল করতে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে উপস্থিত থাকতে বিভিন্ন ইউনিট কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের অনুমতি পেলে ২৭ জুলাই দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি। এই মহাসমাবেশ কর্মসূচিতে সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিট ও আশপাশের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর এই মহাসমাবেশ থেকেই আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। একই দিন দুপুর ২টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমন্বয়ে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ করার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপির মহাসমাবেশের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি নেতাকর্মী জড়ো করতে চায় আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার সমন্বয়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। আর মহাসমাবেশ পল্টন কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। পুলিশের অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। আর এ মহাসমাবেশ চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আরও ১০টি সমাবেশ করবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলো। একই দিনে বিএনপির দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতও রাজধানীতে মিছিল কর্মসূচি পালন করতে পুলিশের অনুমতি চেয়েছে। আর এই মহাসমাবেশ-সমাবেশ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটতে পারে, সেদিকে তীক্ষè নজর রাখছে পুলিশ।
সূত্রমতে, বৃহস্পতিবারের মহাসমাবেশ সফল করতে কেন্দ্র থেকে সারাদেশের সব স্তরের নেতাকর্মীদের রাজধানীতে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য বিএনপির ১০টি সাংগঠনিক বিভাগ, ৮২টি সাংগঠনিক জেলা ও সব উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দূরের জেলাগুলো থেকে যেন আগেভাগেই নেতাকর্মীরা চলে আসেন, সে বিষয়টিও জানিয়ে দেওয়া হয়। আর প্রতিটি জেলা কমিটি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন উপজেলা কমিটিকে নিয়ে বৈঠক করেছে। এভাবে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মহাসমাবেশে আসার বিষয়ে তাগিদ দিয়ে ঢাকায় একটি বড় ধরনের শোডাউন করার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি পান্থপথে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাব অথবা মৎস্য ভবনের সামনে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির সামনে, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি যৌথভাবে মতিঝিলে, আমার বাংলাদেশ (এবি পার্টি) পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, নুরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ পল্টনে, বাংলাদেশ লেবার পার্টি পল্টনে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পল্টনের আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য জাতীয় প্রেসক্লাবে এবং জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে মহাসমাবেশ করবে।
এদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশ করার নামে বিএনপি বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবিলা করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বিশৃঙ্খলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনে বাধা দিলে পরিণতি ভালো হবে না।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, বৃহস্পতিবারের দুই বড় দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সার্বিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। কারণ, বিএনপির এখন পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই তারা আরও কঠোর কর্মসূচি দিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। এ পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবারের সমাবেশ হয় কি না, বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন আশঙ্কাও বিরাজ করছে।
১২ জুলাই নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বড় ধরনের সমাবেশ করে ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ দেশব্যাপী দুইদিনের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরপর ২২ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তারুণ্যের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের শোডাউন করে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। এই কর্মসূচি যুগপৎভবে সব সমমনা দল পালন করবে বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবারে মহাসমাবেশ হলে সেখান থেকে এক দফা দাবি আদায়ে সরকারকে আলটিমেটাম দেবে বিএনপি। এরপর কিছুদিন স্বাভাবিক কর্মসূচি পালন করবে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আগে-পরে কিছু কর্মসূচি পালন থেকে বিরত আবার আন্দোলন জোরদার করা হবে। এরপর সেপ্টেম্বর রাজধানীতে একটি মহাসমাবেশ ও পরবর্তীতে আরও একটি মহাসমাবেশ শেষে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে বিএনপি। এরপরও দাবি আদায় না হলে নির্বাচন বর্জনের পথে যাবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, সরকার এক দফা দাবি না মানলে বিএনপিকে কঠোর আন্দোলনের পথেই যেতে হবে। তবে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই দাবি আদায় করতে চাই। কিন্তু সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দাবি মেনে না নিলে এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
সূত্র জানায়, বিএনপি আপাতত অহিংস কোনো আন্দোলনে যেতে চায় না। তবে সরকার বিএনপির দাবি মানার বিষয়ে অনমনীয় অবস্থানে থাকলে শেষ দিকে বিএনপিকে বাধ্য হয়েই কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে। তাই ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর যেভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি ঘোষণা করে সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঢাকা আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন, এবারও ঢাকা অবরোধের ডাক দিয়ে সেভাবে সবাইকে ঢাকা আসতে বলা হবে। এভাবে ঢাকায় একটি বড় ধরনের গেদারিং করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দাবি আদায়ের শেষ চেষ্টা করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবি, ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ডান, বাম ও মধ্যপন্থি প্রায় তিন ডজন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করতে দীর্ঘদিন আগে থেকেই চেষ্টা শুরু করে বিএনপি। সমমনা দলগুলোকে নিয়ে গত সাত মাসে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি যুগপৎভাবে শতাধিক কর্মসূচি পালন করে। এর মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে সক্রিয় করার চেষ্টা করে। ২০০১ সালের আগে চারদলীয় জোট করে যেভাবে রাজপথ দখলে রেখে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে, এবারও সেভাবে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করে এক দফা দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে বিএনপি।
Hey there! I simply would like to offer you a big thumbs up for your excellent
info you’ve got right here on this post. I am coming back to your blog for more soon.