Bangladesh

বিচারকের আদালত অবমাননায় দিনভর নাটকীয়তা: সকালে কারাদন্ড দুপুরে জামিন বিকেলে সাজা স্থগিত

এক মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেয়ার ৩ ঘন্টার মাথায় আপিলের শর্তে দন্ডিত বিচারককে জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তাকে আত্মসমর্পণ করতেও বলা হয়। যখন কারাদÐ দেয়া হয়, তখন সকাল সাড়ে ১১ টা। দুপুরে সেই আপিলের শর্তে কারাদন্ডপ্রাপ্ত বিচারককে জামিন দিয়েছেন একই আদালতে। আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সেই দন্ডাদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট। কুমিল্লার তৎকালিন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতে দিন ভর চলে নাটকীয়তা।

বিচারপতি মো: বদরুজ্জামান এবং বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের ডিভিশন বেঞ্চে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিচারকের পক্ষে লিভ টু আপিল করলে শুনানি শেষে হাইকোর্টের আদেশটি বিকেলে স্থগিত করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট এম.ইনায়েতুর রহিম। এ তথ্য জানিয়েছেন বিচারক সোহেল রানার আইনজীবী শাহ মনজরুল হক হক নিজেই।

এর আগে সকালে আদালত অবমাননার অপরাধে মো: সোহেল রানাকে এক মাসের বিনাশ্রম দন্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট। এর ৩ ঘণ্টার মাথায় তাকে আবার ১ মাসের জামিনও দেয়া হয় আপিল করার শর্তে। এর কিছুক্ষণ পর বিকেলে চেম্বার কোর্ট স্থগিত করেন হাইকোর্টের দÐাদেশ। মো: সোহেল রানা বর্তমানে আইনমন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন।

শাহ মঞ্জুুরুল হক আরও জানান, একটি ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ৫৬১ (এ) ধারার ওই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন আদালত। পরবর্তীতে এ আদেশের কপি কুমিল্লার তৎকালিন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানার কাছে যায়। তিনি হাইকোর্টের ওই আদেশ অগ্রাহ্য করে বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। এ কারণে আদালত অবমাননা মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। এই আদেশ অমান্যের কারণে তাকে সাজা দেয়া হয়।

মামলার তথ্য মতে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামুন চৌধুরী ও রিয়া আক্তার দম্পতির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে মামুন-রিয়া দম্পতির করা এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট মামলাটির কার্যক্রম চার মাসের জন্য স্থগিত করেন। একইসঙ্গে রুল জারি করেন। ২০১৯ সালের ৬ মার্চ হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন।

স্থগিতাদেশ সত্তে¡ও সোহেল রানা গত ১০ এপ্রিল মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনকালে আদালতে মামুন উপস্থিত ছিলেন। রিয়া অনুপস্থিত থাকায় তাঁকে পলাতক ঘোষণা করেন আদালত। এ অবস্থায় উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সোহেল রানাকে হাজির হতে নির্দেশনা দেয়ার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন মামুন। তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।

এ ধারাবাহিকতায় গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট সোহেল রানাকে তলব করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গত ২১ আগস্ট তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তিনি আদালতে হাজির হন। পরবর্তী সময়ে জবাব দাখিল করেন। তবে জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২৮ আগস্ট সোহেল রানার প্রতি স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে ৯ অক্টোবর তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়। আদালত অবমাননার রুলের পর গত ৩১ আগস্ট সোহেল রানা মামলাটির অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রত্যাহার করেন। ্র ধার্য তারিখে সোহেল রানা সময়ের আবেদন দেন। হাইকোর্ট ১২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ রাখেন। গতকাল শুনানি শেষে তাকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদÐ দেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button