বিদেশি দুতিয়ালি এখন প্রকাশ্যে
সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ ও নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম দেখতে আগামী অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-পর্যালোচনা নির্বাচনী টিম ঢাকা আসবে :: নির্বাচনের পর কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, সোমালিয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো কিছু করার চেষ্টা হলে ভোটের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আসবে : অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন ব্যাপারী :: সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে পিটার হাস হাসিমুখে পশ্চিমা কূটনীতির মারপ্যাঁচে কী বার্তা দিলেন?
কিতাবের ভাষায় কূটনীতি শব্দের অর্থ হলো কৌশলপূর্ণ নিয়ম। কূটনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ ডিপ্লোম্যাসী’র উদ্ভব প্রাচীন গ্রিক শব্দ থেকে। বিশ্বপরিম-লে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ক, স্বার্থ বিষয়ক কর্মকা- বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কূটনীতি এমন নীতি যে কূটনীতিকরা দুই পক্ষ কথায় শান্তির নহর বইয়ে দেয়; কিন্তু পর্দার আড়ালে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। কূটনীতিতে কোনো রাগ, ক্ষোভ, মান-অভিমানের যায়গা নেই সবকিছু পানির মতো সোজা। কিন্তু বাস্তব তার একেবারে বিপরীত। আর পশ্চিমারা কূটনীতিতে এতোই ঝানু যে, তারা শত্রুর বক্তব্যও হাসিমুখে শোনেন।
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে পর্দার আড়ালে যে, কূটনীতি এক বছর ধরে চলছে; জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্দার আড়ালে কূটনৈতিক পর্যায়ে দুতিয়ালি করছে; এখন সেই দুতিয়ালি কার্যত প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঢাকা সফরে আসা প্রতিনিধি এবং ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা এবং প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে সভা সমাবেশ করার সমান সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এবং বিদেশীরা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে তা বিশ্বাস করেছেন; সেই বিশ্বাসে কার্যত ফাটল ধরেছে। ২৯ জুলাই বিএনপির ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে যে সংঘাত-সংঘর্ষ ও রক্তপাত ঘটেছে এবং এটা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা যে ‘একচোখা বক্তব্য’ দিয়েছেন তাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাসের মোহভঙ্গ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন ইস্যুতে এতদিন পর্দার আড়ালে থেকে চাপ দেয়া এবং দুতিয়ালি করলেও সেটা কার্যত প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন।
একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিল, এটা সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। ভোটের ৬ মাসের মধ্যে ফের নির্বাচন দেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রসব বিদেশি শক্তি সেটা বিশ্বাস করে। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন। সংলাপের আয়োজন করা হয়। কিন্তু প্রতিবেশি ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তারা বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বাধ্য করবে। কিন্তু ভারত ওই সময় পাতানো নির্বাচনের আওয়ামী লীগকে সহায়তা করেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত প্রতারণা করায় এবার দিল্লিকে দূরে সরিয়ে রেখেই যুক্তরাষ্ট্র কোমর বেঁধে মাঠে নেমে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার এবার প্রতিষ্ঠা করবেই।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষা এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের পর কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, সোমালিয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তারা সেটা করবে না। নির্বাচনের আগেই নিষেধাজ্ঞা দিতে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। যদি সরকার আইন শৃংখলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো কিছু করার চেস্টা করে তাহলে ১৪ কংগ্রেসমানের চিঠি কার্যকর হয়ে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উজারা জেয়া ও ডোনাল্ড লু’কে অবাধ, সুষ্ঠু এবং সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। শুধু তাই নয়, বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলকে সভা সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করতে দেয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
উজারা জেয়া ঢাকা ত্যাগের আগে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকেও তারা এ প্রতিশ্রুতি দেন। এমনকি বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বিঘেœ সভা সমাবেশ করতে পারবে এমন নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। উজারা জেয়া ঢাকায় অবস্থানকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে। এতে তিনি দুই দলের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু ২৯ জুলাই ঢাকার কয়েকটি স্থানে বিএনপি নেতাদের ওপর পুলিশের নির্যাতন, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের হেলমেট বাহিনী মিলে বিএনপির নেতাদের বিতাড়িত করা এবং অবস্থান কর্মসূচিতে আইনশৃংখলা বাহিনীর রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের সচিত্র প্রতিবেদন দেশি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। ভয়াবহ লোমহর্ষক এ দৃশ্য দেখে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্টের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার প্রায়ই সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেন। কিন্তু গত এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতির বিষয় সেখানে খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রায়ই বাংলাদেশের নির্বাচন, মানবাধিকার, আইনের শাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। এসব খবর আল-জাজিরা, বিবিসি, সিএনএনসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ করা হলেও রয়টার্স তেমন গুরুত্ব দেয় না। বিশ্বের গণমাধ্যম জগতে রয়টার্সে’র মর্যাদা অনেক ওপরে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তাজা খবর তারা প্রকাশ করে থাকে। আন্তর্জাতিক পরিম-লে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরাও ধরে নেন রয়টার্সের খবর খুবই তৎপর্যপূর্ণ। সেই রয়টার্স ঢাকার রাজপথে বিএনপির নেতা রক্তাক্ত করার ঘটনায় বাংলাদেশে রাজনীতি, নির্বাচন নিয়ে তৎপর্যপূর্ণ খবর প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সংবাদ সম্মেলনের খবরও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমটি প্রচার করেছে গুরুত্বসহকারে।
যুক্তরাষ্ট্রের উজারা জেয়াকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ এবং বাধাহীনভাবে সমাবেশ বিক্ষোভ করার প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা দেয়ার পরও বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হেলমেট বাহিনীর তা-ব, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ায় রক্তারক্তি অবস্থায় সৃষ্টি করার প্রতিবাদ জানিয়ে জাতিসংঘ বলেছে, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উৎসাহিত করে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁর ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন, কোনোভাবেই সংঘাত-সংঘর্ষ কাম্য নয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ঢাকার রাজপথে বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রিটেনভিত্তিক ওই মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো অবস্থাতেই বিক্ষোভ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে আগ্নেয়াস্ত্র ও রাবার বুলেট ব্যবহার করা যাবে না। গুটিকয়েক মানুষের সহিংস আচরণে এমন প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে না, যাতে পুরো বিক্ষোভ ‘সহিংস’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এর আগে গত মাসে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের ১৪ সদস্য। একই সঙ্গে তারা জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্যপদ স্থগিত রাখার আহ্বান জানান। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তারা জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ডকে চিঠি দেন। চিঠি পাঠানোর পর রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য বব গুড এক টুইট বার্তায় (বর্তমান এক্স) বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অধিকার রয়েছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর বাংলাদেশ সরকারের সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে আমি ও আমার ১৩ সহকর্মী জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছি।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, রাষ্ট্রের ভয়ঙ্কর সঙ্কট আসন্ন। সরকারের অতিমাত্রায় ক্ষমতার লোভ, রাষ্ট্রের ভয়াবহ সঙ্কট উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই সরকারের অগণতান্ত্রিক শাসনপদ্ধতি অব্যাহত থাকলে রাষ্ট্র উঁচু মাত্রার ঝুঁকিতে পড়বে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্যপদ স্থগিত রাখাসহ ৩ দফা দাবিতে-জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে দেয়া ১৪ কংগ্রেসম্যানের চিঠি মূলত, সরকারের অপশাসনের কারণে দেয়া হয়েছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ডকে ১৪ কংগ্রেস ম্যানের চিঠি দেয়া বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর অশনি সঙ্কেত মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন ব্যাপারী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রশাসনিক সব সিদ্ধান্ত ওপর থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু সেটা নয়। সেখানে নীচ থেকে প্রস্তাব আসে পরে দায়িত্বশীলা তা পাস করেন। যে ১৪ কংগ্রেসমান চিঠি দিয়েছেন তারা কেউ জো বাইডেনের দলের নয়। সবাই ডোনাল্ড ট্রামের দল রিপাবলিকান। তারা যে প্রস্তাব করেছেন সে প্রস্তাব উপরে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে। আমি আতঙ্কিত এই ভেবে যে, বাংলাদেশে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যত্যয় ঘটানোর চেষ্টা হলে ১৪ কংগ্রেসম্যান যে দাবি করেছেন তার সবগুলোই কার্যকর করা হবে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যা চায় জাতিসংঘ তার বাইরে যেতে পারবে না। আমাদের জন্য এটা সমূহ বিপদ। শুধৃু তাই নয় বাংলাদেশে তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্র ক্রয় বন্ধ করলে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া সব দেশ তা বন্ধ করে দেবে। তখন ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়বে দেশ।
উজারা জেয়াকে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও রাজপথে বিএনপির নেতাদের রক্তাক্ত করার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলকে নাড়া দিয়েছে। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতির ওপর আর ভরসা পাচ্ছেন না। তাদের শঙ্কা ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার থেকে যে প্রতিশ্রুতি আন্তর্জাতিক মহলকে দেয়া হয়েছিল তা রাখা হয়নি। এবারও সেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রতিনিধি দলের আদলে বিদেশ থেকে হায়ার করে এনজিওর প্রতিনিধি দল এসে সরকারের পক্ষ্যে ওকালতি করানো হচ্ছে। আইনশৃংখলা বাহিনীকে ইচ্ছামতো বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।
গতকাল ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে নির্বাচন ইস্যুতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠক থেকে বের হয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল তার আগের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রী সরে গিয়ে বলেছেন, চলমান সঙ্কট নিরসনের রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপের আয়োজন করা উচিত। আর পিটার হাস বলেছেন, বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম দেখতে আগামী অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-পর্যালোচনা নির্বাচনী টিম ঢাকা আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকায় যারা আসবেন সেই প্রাক পর্যালোচনা (প্রি-অ্যাসেসমেন্ট) নির্বাচনী দলে থাকবে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট এবং ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউটের বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তুতি নিয়ে যাদের অগাধ অভিজ্ঞতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। যাতে বাংলাদেশের জনগণ সরাসরি ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে দেয়া যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১২ দেশের বিবৃতিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ‘ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন’ অভিহিত করে যে বক্তব্য দিয়েছেন; সেটাকে অগ্রাহ্য করেছেন। পিটার হাস বলেন, ওই বিবৃতিতে ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন হয়নি। বরং অন্য দেশগুলো যখন আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক বিষয় উত্থাপন করেন, তখন আমরা তাদের কথা শুনি, বোঝার চেষ্টা করি। আমরা দেখি তাদের কাছে কী শেখার আছে। আমরা এটাকে ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন মনে করি না। তবে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে পিটার হাস পশ্চিমা কূটনীতির মারপ্যাঁচে নির্বাচন কমিশনকে কী বার্তা দিলেন?