Bangladesh

বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ: বিদেশি আসছে কম, দেশিরা যাচ্ছে বাইরে, বিনোদনের অভাব অতিরিক্ত ভ্রমণ ব্যয় নেই পরিবেশ, হয়নি পর্যটন ব্র্যান্ডিং

চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে শ্রীলঙ্কা। এক্ষেত্রে দেশটির পর্যটন খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অথচ অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পে এখনো পিছিয়ে। বিশ্বে পর্যটনশিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় পর্যটনে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। অন্যান্য দেশগুলো থেকে বিদেশি পর্যটকরা ঘুরে গেলেও বাংলাদেশে দিনকে দিন বিদেশি পর্যটকের আগমন হার কমছে। এ জন্য সংশ্লিষ্টরা পর্যাপ্ত বিনোদনের অভাব, অতিরিক্ত ভ্রমণ ব্যয়, পর্যটকবান্ধব পরিবেশ গড়ে না ওঠা এবং পর্যটন ব্র্যান্ডিং না থাকাকে দায়ী করছেন। একইভাবে বাংলাদেশের পর্যটন স্পটগুলোতে অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া, খাওয়া, যাতায়াত খরচ বেশি এবং পর্যাপ্ত বিনোদন সুবিধা না থাকায় কম খরচে ভালো সেবা পেতে মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যাচ্ছেন। এতে পর্যটন খাতের বিকাশ যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, একইভাবে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় আজ পালিত হবে বিশ্ব পর্যটন দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ।’ বিদেশি পর্যটক আগমনের তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বের কোনো দেশ পর্যটনে কেমন করছে এর র‌্যাঙ্কিং করে মুন্ডি ইনডেক্স। সংস্থাটির তথ্যে, পর্যটনশিল্পে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম। আর এশিয়ার ৪৬টি দেশের মধ্যে ৪২তম। এ সংস্থার তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে ছয়টি স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।

মুন্ডি ইনডেক্সের তথ্যে ১৯৯৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুই যুগে ৫২ লাখের কিছু বেশি বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আসেন। এর মধ্যে ২০০৮ সালে দেশে সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ৬৭ হাজার বিদেশি পর্যটক এসেছেন। আর বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি)-এর তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশি পর্যটক এসেছিল ৬ লাখ ২১ হাজার ১৩১ জন। কিন্তু ২০২০ সালে ১ লাখ ৮১ হাজার ৫১৮ জন এবং ২০২১ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৬ জন বিদেশি পর্যটক আসেন। করোনা শেষে প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিদেশি পর্যটকদের ঢল নামলেও বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাসহ বেশ কিছু কারণে দেশের পর্যটন স্থানগুলোতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। বিটিবি-এর তথ্যে, বাংলাদেশে ঘুরতে আসা বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের মধ্যে আছেন ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য, জাপান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নেপাল ও সৌদি আরবের মানুষ। এই পর্যটকরা বেশি ঘুরতে যান সুন্দরবন, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে।

মূলত বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকা, ভ্রমণ ব্যয় বেশি, পর্যটকবান্ধব পরিবেশ গড়ে না ওঠায় এবং পর্যটন ব্র্যান্ডিং না থাকা, ভিসা জটিলতাসহ বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশে না এসে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে চলে যাচ্ছেন বিদেশি পর্যটক। অতিরিক্ত ভ্রমণ ব্যয়, বিনোদনের অভাবে বাংলাদেশিরাও ছুটি কাটাতে ছুটে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে। অথচ মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে।

বিদেশি পর্যটকদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর দেশের পর্যটন স্থানগুলোতে বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার বিদেশি পর্যটকদের জন্য বার, ক্যাসিনো, স্পার মতো সেবা দেওয়ার কথা সংশ্লিষ্টরা বারবার বললেও এগুলোর অনুমোদন পাওয়া বেশ কঠিন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেসব বিদেশি পর্যটক ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন তাদের বেশির ভাগই ব্যবসায়িক কাজ, উন্নয়ন সংস্থা ও দূতাবাস সংশ্লিষ্ট কাজে আসছেন। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্যে, করোনার পরে ২০২১ সালে বিদেশি পর্যটক থেকে বাংলাদেশ আয় করে ১৬৭.২ মিলিয়ন ডলার। অথচ করোনার আগে ২০১৯ সালে আয় করে ৩৬৯.৬ মিলিয়ন ডলার।

মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির ‘কম্প্রিহেনসিভ প্রাইভেট সেক্টর অ্যাসেসমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিদেশিদের মাত্র ৫ শতাংশ বাংলাদেশে ভ্রমণের উদ্দেশ্য নিয়ে আসে। ভ্রমণে আসা নাগরিকদের সবচেয়ে বড় অংশ আসে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি হিসেবে, যা মোট বিদেশির ৪০ শতাংশ। এর পরই উন্নয়ন খাতের বিভিন্ন কাজে আসে। এদের হার ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া দূতাবাস সংশ্লিষ্ট কাজে আসেন ১৫ শতাংশ বিদেশি। বিদেশিদের মধ্যে বাকি ৫ শতাংশ প্রকৃত পর্যটক।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, বিদেশি পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। এ দায়িত্ব সরকারের। এ জন্য সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থানগুলো নিয়ে যথাযথ প্রচার নেই। মানুষ যখন জানবে দেশের কোথায় কী ধরনের দর্শনীয় স্থান আছে তখনই সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হবে। আবার বাংলাদেশ নিয়ে বহির্বিশ্বে বেশ কিছু ক্ষেত্রে এক ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা আছে। এ ছাড়া বিদেশি পর্যটকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা দরকার। আরও অধিক সংখ্যক দেশকে অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা দেওয়া উচিত। পাশাপাশি ই-ভিসার প্রচলন করা দরকার। কারণ অন-অ্যারাইভাল ভিসার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।

স্থানীয়রা বিদেশমুখী : বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক যেমন আকর্ষণ করা যাচ্ছে না একইভাবে দেশের পর্যটকদেরও ধরে রাখতে পারছে না পর্যটন সংস্থাগুলো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৯ লাখ ২১ হাজার ৫২০ বাংলাদেশি পর্যটক বিদেশে যান। এদের ৬০ ভাগের বেশি যান ভারতে।

দেশীয় পর্যটকদের মধ্যে উল্লেখসংখ্যকই যান ভারতে। ২০২২ সালে ভারতে যে পরিমাণ পর্যটক গেছেন এর মধ্যে ২০ শতাংশ ছিল বাংলাদেশি, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সে বছর পর্যটকদের মধ্যে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬০ জন বাংলাদেশি ছিল। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে গেছে মোট পর্যটকের ২৩.৫ শতাংশ। পর্যটন ছাড়াও ভিসাসংক্রান্ত কাজ, চিকিৎসা ও ব্যবসার কাজেও বাংলাদেশ থেকে মানুষ ভারতে যাচ্ছে।

দেশীয় পর্যটকরা ভারত ছাড়াও নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও দুবাই ঘুরতে যাচ্ছেন। মূলত বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটের হোটেল ও রিসোর্টের অতিরিক্ত ব্যয় ও খাবার খরচ বেশি হওয়ায় মানুষ বিদেশমুখী পর্যটনে আগ্রহী হচ্ছে। সাধারণত ঈদ ও কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে ধনী ও উচ্চ-মধ্যবিত্তরা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালদ্বীপে ঘুরতে যান আর চিকিৎসা ও কেনাকাটার জন্য ভারত বাংলাদেশিদের পছন্দের গন্তব্য।

টোয়াবের সাবেক সভাপতি মো. রাফিউজ্জামান বলেন, ঈদে দেশীয় পর্যটকদের অনেকে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দুবাই, নেপাল ভ্রমণে যান। তবে ভারতে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ যাচ্ছেন তাদের সবাই পর্যটক নন। এদের কেউ আত্মীয়ের কাছে যাচ্ছেন আবার কেউ যাচ্ছেন চিকিৎসা করাতে। বর্তমানে আমরা দেশীয় পর্যটন খাতের বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। দেশের পর্যটন খাতও এখন বেশ ভালো অবস্থায় আছে। দেশের রাজস্ব ধরে রাখতে আমরা দেশীয় পর্যটন খাতের বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d