Bangladesh

‘ভারতবিরোধিতা’ প্রশ্নে আলোচনা, সিদ্ধান্ত পরবর্তী বৈঠকে: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা

‘ভারতীয় পণ্য বর্জনের’ বিষয়টিকে একটি ‘সামাজিক আন্দোলন’ হিসেবে দেখছে বিএনপি। এতে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির সরাসরি যুক্ত হওয়াটা সঠিক হবে বলে মনে করছেন না দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা। তবে এরই মধ্যে আলোচনায় আসা এই সামাজিক আন্দোলন বিএনপি উপেক্ষা করবে, নাকি কৌশলী অবস্থান নেবে—সে ব্যাপারে দলটি এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়সহ আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। তবে কোনো বিষয়েই সিদ্ধান্ত হয়নি। পরবর্তী বৈঠকে দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি দলের একজন দায়িত্বশীল নেতার ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণার প্রসঙ্গ তুলে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বিষয়টি বৈঠকে আলোচনায় আনেন। একজন সদস্য জানতে চান, ভারতীয় পণ্য বর্জনে তাঁর ঘোষণা দলীয় সিদ্ধান্তে কি না, সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলে সেটি কোথায় হয়েছে। আরেক সদস্য প্রশ্ন তোলেন, বিএনপি ক্ষমতাপ্রত্যাশী একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এখন ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়ে দল ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কী হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘ভারতীয় পণ্য বর্জনের’ বিষয়সহ আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। তবে কোনো বিষয়েই সিদ্ধান্ত হয়নি। পরবর্তী বৈঠকে দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় পণ্য বর্জনে রিজভীর সংহতি প্রকাশের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্থায়ী কমিটিকে জানান, রুহুল কবির রিজভী তাঁর ব্যক্তিগত বিবেচনাবোধ থেকে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিষয়টি তিনি গণমাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন।

প্রসঙ্গত, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ২০ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। এরপর তিনি নয়াপল্টনের বিএনপির কার্যালয়ের সামনে নিজের ব্যবহার করা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা সেখানে চাদরটি আগুন দিয়ে পোড়ান। এর তিন দিন পর রিজভী আরেক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ভারতীয় পণ্য বর্জনে তাঁরা যে সংহতি জানিয়েছেন, তা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে। এ দেশের মানুষ দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, অপমান, লাঞ্ছনা, ক্ষোভ থেকে এটি করছেন।

এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘রিজভী তো বলেই দিয়েছেন, এটা (ভারতীয় পণ্য বর্জনে সংহিত প্রকাশ) তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ২০ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে কমিটির দু-একজন সদস্য উষ্মা প্রকাশ করলেও বৈঠকে সবাই এ বিষয়ে একমত যে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকে হয়েছে। তাঁরা মনে করেন, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাসীন করতে ভারত প্রত্যক্ষভাবে যে ভূমিকা রেখেছে, তা বাংলাদেশের জনমত এবং গণতন্ত্রের বিপক্ষে। বিষয়টি সামনে রেখে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের মূল্যায়ন এবং দেশটির পণ্য বর্জনে গড়ে ওঠা সাম্প্রতিক সামাজিক আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করা দরকার।

অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ বিষয়ে (ভারতীয় পণ্য বর্জন) সিরিয়াস কোনো আলোচনা হয়নি। এটার জন্য আরও আলোচনা হবে।

তবে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মনে করছেন, দেশে দুর্নীতি, দুঃশাসন ও ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণ তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকে নির্বাচনের পর ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। এটি সামাজিক আন্দোলন। কারণ, জনগণ মনে করছে, আওয়ামী লীগকে এতটা ‘বেপরোয়া’ এবং ‘দুর্বিনীত’ করতে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সহযোগিতা করছে ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্র। এতে বিএনপি প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়া সঠিক হবে না।

ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক সামাজিক আন্দোলন মনে করেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির প্রধান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এটা তো সামাজিক আন্দোলন। এটাকে পার্টিজান করা ঠিক নয়, এতে বিএনপির যুক্ত হওয়ার দরকার নেই। সামাজিক আন্দোলন সাধারণ মানুষের বিবেকবোধের আন্দোলন, এটা এভাবেই চলা উচিত।

রিজভী তো বলেই দিয়েছেন, এটা (ভারতীয় পণ্য বর্জনে সংহিত প্রকাশ) তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।

ইকবাল হাসান মাহমুদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য

উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে

বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়েও আলোচনা হয়। সদস্যরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও বর্জনের প্রশ্নে মিশ্র অভিমত প্রকাশ করেন। কেউ কেউ দলীয়ভাবে অংশ না নিয়ে কৌশলী অবস্থান নেওয়ার পক্ষে। এ ক্ষেত্রে দল নির্বাচনে উৎসাহিত করবে না, নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁদের ব্যাপারে সাংগঠনিকভাবে কঠোর না হওয়ার কথা এসেছে। তবে বেশির ভাগ সদস্য বলেছেন, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, সেখানে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া বারবার প্রতারিত হওয়া ছাড়া আর কোনো ফল পাওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা যতই ক্ষমতা দখল করুক, নড়বড়ে অবস্থায় আছে। এ জন্য ঘুম থেকে উঠেই ওরা বিএনপিকে গালি দেয়। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ দখলদারদের জন্য রিলিফ (স্বস্তিদায়ক) হয়ে যায়। এ জন্যই তারা মার্কাও (নৌকা প্রতীক) তুলে দিয়েছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor