ভারতের ‘জেরক্স ইন্ডিয়া’ হাতিয়েছে ১১২ কোটি, ৭২৭ কোটি টাকার এনএইচডি প্রকল্প দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে ‘ন্যাশনাল হাউজ হোল্ড ডাটাবেজ (এনএইচডি) প্রকল্পের নামে ৭২৭ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই প্রকল্প থেকে ‘জেরক্স ইন্ডিয়া লিমিটেড’ নামক ভারতীয় প্রতিষ্ঠানই হাতিয়ে নেয় ১১২ কোটি টাকার বেশি। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দায়ের করলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংস্থাটি। এ প্রেক্ষাপটে রিট করা হলে শুনানি শেষে বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ নির্দেশ দেন। দুদককে অনুসন্ধান করে ৬ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আবু জাফর শেখ মানিক। দুদকের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
আদেশের বিষয়ে অ্যাডভোকেট আবু জাফর শেখ মানিক বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তথ্য সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল হাউজ হোল্ড ডাটাবেজ (এনএইচডি) প্রকল্পে (জুলাই ২০১৩-ডিসেম্বর ২০২০) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের একটি অভিযোগ দায়ের করা হয় দুদকে। কিন্তু অভিযোগটি আমলে নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। দুদকের এই নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে আমরা একটি রিট দায়ের করি। শুনানি শেষে আদালত আগামী ৬ মাসের মধ্যে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- এই মর্মে রুল জারি করেছেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে দুদকের চেয়ারম্যান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও পরিসংখ্যান ব্যুরো সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিটে উল্লেখ করা হয়, এনএইচডি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো একটি প্রকল্প চালু করে। প্রকল্পের জন্য ৫৪৫ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ দেয়। নিয়োগকৃত জনবলকে দাপ্তরিক বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য উপজেলা ও জেলা পরিসংখ্যান অফিসগুলোতে সংযুক্ত করে। ২০২২ সালের জুন মাসে তাদের ‘জেরক্স ইন্ডিয়া কোম্পানি লিমিটেড’র অধীনে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান ১৪টি জেলার তথ্য আংশিক সংশোধন ও ৫০টি জেলার ডাটা অসমাপ্ত রেখে প্রকল্পের ১১২ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার ৬২২ টাকা হাতিয়ে নেয়।্ এ প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ বাবদ ছিল ৬৮৬ কোটি ৮০ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। বাংলাদেশ সরকার বরাদ্দ দিয়েছিলো ৪০ কোটি, ৫২ লাখ, ৫২ হাজার টাকা। এ প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া ৫৪৫ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে মাসিক বেতন-ভাতাদি উপরোক্ত কর্মকর্তারা প্রদান না করে এবং প্রজেক্টের টিপিপির সুপারিশ অনুযায়ী তাদের রেভিনিউ খাতে নিয়োগ না দিয়ে সরকারি অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ভুক্তভোগী ৭৩ জন প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে আবেদন করেন। সংঘটিত দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা চেয়ে দুদকেও আবেদন করেন। কিন্তু ওই আবেদনে দুদক সাড়া দেয়নি। এ প্রেক্ষাপটে গত ১৩ মে রিট করেন আবেদনকারীরা। ওই রিটের শুনানি শেষে উপরোক্ত নির্দেশ দেন আদালত।