Bangladesh

ভারতের রাজনীতিতে হঠাৎ বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

ভারতের রাজনীতিতে হঠাৎ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। দেশটিতে ভোটের আবহে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও বিরোধী দল কংগ্রেসের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ স্থান পায়। কংগ্রেসকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বীপ হস্তান্তর প্রশ্নে বিদ্ধ করতেই বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। এরপর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও তার কোনও জবাব দেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিতর্কের অবসানও ঘটেনি।

মোদী-কাড়গের বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে কচ্চতিভু দ্বীপ। ১৯৭৪ সালে ভূখণ্ডটি শ্রীলঙ্কাকে দিয়েছিল ভারত। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এত বছর পর হঠাৎ কচ্চতিভু দ্বীপ প্রসঙ্গটি রাজনীতিতে টেনে আনেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী। তবে এর পেছনে রয়েছে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক পটভূমি। তামিলনাড়ুতে দলের অবস্থান শক্ত করতে বিজেপি এই দ্বীপের হস্তান্তরকে বড় করে তুলে ধরে কংগ্রেসকে দেশদ্রোহী প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে।

কচ্চতিভু দ্বীপ হস্তান্তর প্রসঙ্গে তথ্য জানার অধিকার আইনের (আরটিআই) একটি প্রতিবেদন নিয়ে বিজেপির তামিলনাড়ু নেতৃত্ব কংগ্রেসবিরোধী প্রচার শুরু করামাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিষয়টি হাতিয়ার করে নেন। গত রবিবার তিনি ‘এক্স’ হ্যান্ডলে ওই দ্বীপ শ্রীলঙ্কাকে দেওয়ার তীব্র সমালোচনা করেন।

মোদী লেখেন, “এই চমকপ্রদ আরটিআই রিপোর্ট আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এ থেকে পরিষ্কার, কংগ্রেস কী নিষ্ঠুরভাবে কচ্চতিভু দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দিয়েছিল। দেশের সবাই এতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তখনই বোঝা গিয়েছিল, কংগ্রেসকে বিশ্বাস করা যায় না। ৭৫ বছর ধরে ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতা এভাবেই তারা নষ্ট করেছে। এখনো করছে।”

এরপর রবিবার মোদীর অভিযোগের দীর্ঘ জবাব দেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। সেখানে তিনি টেনে আনেন বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তির প্রসঙ্গ।

খাড়গে তার পোস্টে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, হঠাৎই আপনি দেশের অখণ্ডতা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। সেই উদ্বেগও ধরা পড়ল শাসনের দশম বছরে। সম্ভবত নির্বাচনের কারণেই। এতে আপনার অসহায়তা প্রকট হল।”


স্থলসীমান্ত চুক্তি টেনে খাড়গে লিখেছেন, “১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী যে চুক্তি করেছিলেন তার প্রশংসা করে ২০১৫ সালে আপনিই বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পর্কে বলেছিলেন, এই চুক্তি শুধু জমির পুনর্বিন্যাস নয়, এতে দুই দেশের হৃদয়েরও মিলন ঘটেছে। সেই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছিল আপনার সরকারের আমলে। বন্ধুত্বের প্রমাণ রেখে তাতে আপনার সরকার কিন্তু ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশকে দিয়েছিল, বিনিময়ে পেয়েছিল বাংলাদেশের ৫৫টি ছিটমহল।”

খাড়গে আরও লিখেছেন, “ওই বছর, সেই ১৯৭৪ সালে আরও একটি বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়েছিল ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে, কচ্চতিভু দ্বীপ নিয়ে। তামিলনাড়ুর নির্বাচনের প্রাক্কালে এখন আপনি ওই স্পর্শকাতর বিষয়টির অবতারণা করছেন, অথচ আপনার সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টে বলেছিলেন, চুক্তির মাধ্যমে কচ্চতিভু শ্রীলঙ্কার কাছে গেছে। সেটা ফিরিয়ে নিতে হলে যুদ্ধ করতে হবে। আপনার সরকার ওই দ্বীপ ফেরত নিতে কোনও উদ্যোগ কি নিয়েছিল?”

খাড়গে বলেন, “গান্ধীজি, নেহরু, প্যাটেল, ইন্দিরা, রাজীবের মতো নেতা দেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতার জন্য জীবন দিয়েছেন। সর্দার প্যাটেল ৬০০ জন রাজার রাজত্বকে দেশের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন। অথচ কী বিপুল বৈপরীত্য দেখুন, গালওয়ান উপত্যকায় ২০ জন সেনা শহীদ হওয়ার পর আপনি চীনকে ক্লিনচিট দিলেন! চোখ খুলে দেওয়ার মতো কিছু থাকলে তা আপনারই দান। নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের মতো বন্ধুদেশের সঙ্গে বৈরিতার মাত্রাও আপনি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আপনার পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার দরুন এই প্রথম রাশিয়া থেকে পাকিস্তানও অস্ত্র সম্ভার কিনল!”

মোদীর উদ্দেশে খাড়গে তার পোস্টের শেষ দিকে বলেছেন, “দেশের এমন কোনও গ্রাম নেই, যেখানে রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষায় কংগ্রেসিরা রক্ত ঝরায়নি। সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলা করে জীবন দিয়েছেন ইন্দিরা ও রাজীব গান্ধী। কংগ্রেস নিয়ে এই আচ্ছন্নতা দয়া করে বন্ধ করুন। নিজের ব্যর্থতার দিকে তাকান, যার জন্য দেশকে ভুগতে হচ্ছে।”

রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খাড়গের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেন মোদী। তবে জবাব না দিলেও কচ্চতিভু বিতর্ক কিন্তু বিজেপি ছাড়েনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে এ নিয়ে বিতর্কের উল্লেখ করে বলেছেন, নেহরুর কাছে কচ্চতিভু দ্বীপ ছিল একটা ‘উপদ্রব’। ইন্দিরার সময় ওই দ্বীপের কাছে মাছ শিকারের অধিকার ভারত ছেড়ে দিয়েছিল।

ভোটের আবহে তামিল জেলেদের ধরা পড়াকে বিজেপি ইস্যু করে তুলতে চাইছে। সেজন্য দোষী করতে চাইছে কংগ্রেসকে। তামিলনাড়ুর রাজনীতিবিদ জয়শঙ্কর তাই বলেছেন, সমস্যাটি মোটেই মরে যায়নি। ভালোভাবে জিইয়ে রয়েছে।

কংগ্রেসের তামিল রাজনীতিক সাবেক অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম সোমবার এ জন্য একহাত নিয়েছেন জয়শঙ্করকে। তিনি এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, “এটা ঠিক, ভারতীয় জেলেরা ৫০ বছর ধরে আটক হচ্ছেন। তেমনই শ্রীলঙ্কার জেলেরাও ভারতের হাতে ধরা পড়ছেন। প্রতিটি সরকার এ নিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কথা বলেছে। জেলেদের ছাড়িয়েছে। সেটা হয়েছে জয়শঙ্কর যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ছিলেন, যখন পররাষ্ট্রসচিব ছিলেন এবং যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী—সব সময়েই।”

এরপরই চিদাম্বরম প্রশ্ন করেছেন, “হঠাৎ কী এমন হল যে জয়শঙ্করকে কংগ্রেস ও ডিএমকে’র বিরুদ্ধে গলা তুলতে হচ্ছে? অটল বিহারি বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী কিংবা তামিলনাড়ুতে শরিকদের সঙ্গে মিলে বিজেপি শাসন করছিল, তখন কি ভারতীয় জেলেদের শ্রীলঙ্কা আটক করত না কিংবা ২০১৪ সালের পর নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর?”

জয়শঙ্করের সমালোচনা করে চিদম্বরম আরও লিখেছেন, “মানুষ কত দ্রুত রং বদলাতে পারে, দেখছি। একজন নম্র কর্মকর্তা থেকে এক স্মার্ট পররাষ্ট্রসচিব থেকে আরএসএস-বিজেপির মুখপাত্র হয়ে গেছেন তিনি। ডিগবাজি খাওয়ার ইতিহাসে জয়শঙ্করের জীবন জ্বলজ্বল করবে।”

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d