Bangladesh

ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে না, অর্থ সংকটের ধাক্কা এমপিদের প্রকল্পে

৩ বছরে বাস্তবায়ন ৪১.৪৯ শতাংশ, মেয়াদ বাড়ছে ২ বছর * সংশোধনের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে

চলমান অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা লেগেছে জাতীয় সংসদ-সদস্যদের (এমপি) জন্য হাতে নেওয়া প্রকল্পে। ফলে আগামী নির্বাচনের আগে এমপিরা অনেক প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারছেন না। ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন-৩’ প্রকল্পের মেয়াদ ৩ বছর পার হলেও বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। চহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া এবং এমপিদের দেওয়া তালিকা পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে চলতি ও আগামী অর্থবছরের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা ১ বছর মেয়াদ বাড়াতে চাইলেও পরিকল্পনা কমিশন ২ বছর বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনী নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। সেখানে ধীরগতিসহ নানা বিষয় উঠে আসে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এসব প্রকল্পের আওতায় রাস্তা তৈরি ও সংস্কার করা হচ্ছে। তবে মূল প্রকল্প থেকে ১৯৩ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক এবং ৪৩ দশমিক ৯১ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক এবং ৫০৫ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কাজ বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে ৩৯২ দশমিক ৫১ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক এবং ২৬৭৪ দশমিক ৫১ কিলোমিটার সেতু-কালভার্ট বাড়ানো হয়েছে।

কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর উপজেলা) আসনের সংসদ-সদস্য এমএ মতিন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, শুধু এ প্রকল্পেই নয়, এমপিদের কাজ করার জন্য যেসব প্রকল্প রয়েছে সবগুলোতেই অর্থ সংকট বিরাজ করছে। যেমন আমার নির্বাচনি এলাকায় ১০১টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে নতুন ভবন তৈরির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩৯টি স্কুলের জন্য টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে হাইস্কুল ও মাদ্রাসা উন্নয়নের জন্য তালিকা চাওয়া হয়। সেখানে ২৪টির তালিকা দিয়ে বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ২-৩টির। এতে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তবে করোনা মহামারিরর কারণে টিকাসহ এর চিকিৎসায় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত অর্থ খরচ করতে হয়েছে সরকারকে। এজন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এটি আমরা সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তবে গ্রেড উন্নীত করে প্রকল্পটিতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় পিইসি সভার সভাপতি এবং পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) একেএম ফজলুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, সংকটের কারণে প্রকল্পগুলোকে যখন ক্যাটাগরিভিত্তিক ভাগ করা হয়েছিল তখন এটিকে ‘বি’ ক্যাটাগরির হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে বরাদ্দের পুরো টাকা পায়নি। সেই সঙ্গে এমপিরা নানা সময় স্কিম পরিবর্তন করেছে এসব কারণেই সংশোধন করতে হচ্ছে।

গত মাসে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খান জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ১১তম জাতীয় সংসদ-সদস্যদের প্রথিমিক ডিওর ভিত্তিতে অনুমোদিত ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) স্কিমের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে এমপিদের বিশেষ পরিস্থিতি ও স্কিমের অগ্রাধিকার ক্রম পরিবর্তনের কারণে অনুমোদিত তালিকা পালটাতে হয়। এ সময় ডিওর মাধ্যমে সংশোধিত বা নতুন তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ফলে বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর ও এমপিদের দেওয়া স্কিম অনুযায়ী ডিপিপি সংশোধন প্রয়োজন। এজন্য ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ধরে প্রকল্পটির সংশোধন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

পরিকল্পনা কমিশন আরও ১ বছর সময় বাড়িয়ে দিয়েছে কেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য একেএম ফজলুল হক বলেন, আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৫৯৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং বাস্তব অগ্রগতিও কম। অবশিষ্ট কাজ ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে করা সম্ভব নয়। এছাড়া চলতি এবং আগামী অর্থবছর যে বরাদ্দ ধরা আছে তা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে। এজন্য ২ বছর সময় বাড়ানোর মত দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, পিইসি সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, সম্পদের প্রাপ্যতা সাপেক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কাজ শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রদান সম্ভব নাও হতে পারে। তাই প্রকল্পের গুরুত্ব ও ক্রমপুঞ্জিত ভৌত এবং আর্থিক অগ্রগতি বিবেচনা করে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত ২ বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন।

সভায় প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিন খান আরও জানান, ইতোমধ্যেই জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বেশকিছু সড়ক ও ব্রিজ বা কালভার্ট নতুনভাবে নির্মাণের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এসব স্কিমের গুরুত্ব বিবেচনায় বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এজন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দরকার। এ সময় কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, যেসব স্কিম অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর যৌক্তিকতাসহ আরডিপিপিতে (সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে নতুনভাবে গ্রহণকরা স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকার কম রাখতে হবে।

সভায় কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. অঞ্জন কুমার দেব রায় বলেন, প্রকল্পের প্রস্তাবে অনেক অংশে নির্দিষ্ট সংখ্যা বা পরিমাণ উল্লেখ না করে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে থোক না রেখে সংখ্যা বা পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। এর উত্তরে প্রকল্প পরিচালক জানান, যেসব অংশ পরিমাপযোগ্য নয় যেমন বিদ্যুৎ, কুড়িয়ার এবং আপ্যায়ন ব্যয় ইত্যাদির ক্ষেত্রে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button