Bangladesh

ভোটে ‘নাই’ হয়ে যাচ্ছে জাপা

নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ভাঙনের মুখে পড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) ভোটের মাঠেও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দলটি তার ইতিহাসের সর্বনিম্ন ১১ আসন এবং ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে লাঙ্গলের প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কেউ। 

রওশন এরশাদ নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে সম্মেলনের ডাক দিলেও তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশ্যও স্পষ্ট নয়। সরকারের সমর্থন তাদের সঙ্গে নেই। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া রওশনপন্থিরাও ভোটের মাঠে সুবিধা করতে পারেননি।  

আগামী ৯ মার্চ যে ২ সিটি করপোরেশন, ৯ পৌরসভা এবং ১৩ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হবে, তার একটিতে মাত্র প্রার্থী দিতে পেরেছে জাপা। গত ১ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকারের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি করেছে দলটি। মাত্র তিনজন ফরম কিনেছেন। 
এর মধ্যে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের জন্য দু’জন এবং ফরিদপুর সদরের চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের জন্য একজন ফরম কিনেছিলেন। কিন্তু মাত্র একজন ময়মনসিংহে প্রার্থী হয়েছেন। 

৯ মার্চ পটুয়াখালী পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন হবে। এই এলাকা পটুয়াখালী-১ আসনের অন্তর্গত। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া এই আসন থেকে জয়ী হয়েছেন জাপার এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। কিন্তু পটুয়াখালী পৌরসভায় প্রার্থী দিতে পারেনি জাপা। 
বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদেও উপনির্বাচন হবে আগামী ৯ মার্চ। এই পৌরসভা বগুড়া-২ আসনের অন্তর্গত। আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া এই আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এমপি পদে জয়ী হয়েছেন জাপার শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। মাসখানেক আগে নির্বাচনে জিতলেও পৌরসভায় প্রার্থী দিতে পারেনি জাপা। কেউ লাঙ্গলের প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাননি। 

এককালে বৃহত্তর রংপুর জাপার দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। ৯ মার্চ লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম এবং ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন হবে। কোথাও জাপার সমর্থিত প্রার্থী নেই। বৃহত্তর রংপুরে ১৯৯১ সালে ১৮, ১৯৯৬ সালে ২১ এবং ২০০১ সালে ১৪ আসনে জয়ী হয়েছিল জাপা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে রংপুরের ৩৩ আসনের ৩০টিতে লাঙ্গলের প্রার্থী ছিল। ৭টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না। এর দুটি জিতেছে জাপা। ছাড় পেয়েও জামানত বাজেয়াপ্ত হয় তিনটি আসনে। ছাড়ের বাইরের ২৩ আসনের একটিতে জামানত বেঁচেছে। 

রংপুরের বাইরে অবস্থা আরও খারাপ জাপার। রাজশাহী বিভাগের ৩৯ আসনের ৩৭টিতে লাঙ্গলের প্রার্থী ছিল। দলটি ভোট পেয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৮২ শতাংশ। অন্য কোনো বিভাগেই ২ শতাংশ ভোট পায়নি। রংপুরে ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ ভোট পায়। 

কাদেরপন্থিদের ক্ষয়

জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বিরোধী দলের নেতা হতে পারলেও ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলের নেতারাই তাঁর সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। লাঙ্গলের প্রার্থীদের অভিযোগ, তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে টাকা পেলেও অন্যদের দেননি। স্ত্রী শেরীফা কাদেরের জন্য আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন ছাড় পেতে দলের অন্য নেতাদের বলি দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরাতে না পারায় ছাড়ের ১৫ আসনে গো-হারা হেরেছে লাঙ্গল। ছাড়ের বাইরে যে তিন-চারটি আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন, তারাও দলের সহায়তা পাননি।

সমালোচকদের সমর্থন করায় দলের  দুই কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে অব্যাহতি দিয়েছেন জি এম কাদের। বাবলা তাঁর স্ত্রী সালমা হোসেনের জন্য সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। না পেয়ে রওশনের পক্ষে ভেড়েন। রওশনের পক্ষ নিয়ে এর আগে পদ হারান প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু। বাবলা ঢাকা মহানগর দক্ষিণেরও সভাপতি ছিলেন। বাবলা ও সেন্টু রাজধানীতে জাপার কর্মসূচিতে জনসমাগম ঘটাতেন।

জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, এই দু’জনকে বাদ দেওয়ার পর জাপার বনানী ও কাকরাইল কার্যালয়ে বসার মতো লোক নেই। তাদের অব্যাহতি দিয়ে জি এম কাদের স্পষ্ট করেছেন, আর সভা-সমাবেশ করার প্রয়োজন নেই। বিরোধীদলীয় নেতা হয়ে তিনি রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছেন।
তবে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে লিপ্ত হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

জাপার একাধিক নেতা জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও অঘোষিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে অন্তত ৩০ নেতাকে। আরও অনেকে রওশনের সঙ্গে যাবেন। বাম দলের মতো ভাঙতে ভাঙতে জাপা একসময় সাইনবোর্ড সর্বস্ব হয়ে যাবে।

রওশনপন্থিরা উদ্দেশ্যহীন

রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত একজন নেতা বলেছেন, যারা জি এম কাদেরকে ছেড়ে আসছেন, তারা আসলে না পাওয়ার বেদনা ও ক্ষোভে আসছেন। দলকে কোথায় নিয়ে যাবে, তেমন কোনো উদ্দেশ্য নেই তাদের। জি এম কাদেরকে ঠেকানো ছাড়া তাদের কোনো লক্ষ্য নেই। তাই রওশন এরশাদ ৯ মার্চ সম্মেলন করে পৃথক একটি কমিটি করলেও তাতে খুব একটা ফল হবে না। নির্বাচনের আগে এই উদ্যোগ নিলে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কয়েকটি আসন নিয়ে টিকে থাকতে পারতেন রওশন এরশাদ।

এই নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রওশন এরশাদকে ময়মনসিংহ-৪, তাঁর ছেলে রাহগিল আল মাহি এরশাদ সাদকে ময়মনসিংহ-৭ আসন থেকে নির্বাচন করতে বলেছিলেন। রওশন এরশাদকে আরও তিনটি আসন দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু সাদ রংপুর-৩ ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তাঁর কারণে রওশন এরশাদ নির্বাচন করলেন না। এখন আর পৃথক দল করে লাভ নেই। রওশন এরশাদের শারীরিক যে অবস্থা, তাতে আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারবেন বলে মনে হয় না। এখন জাপা থেকে যত নেতাই তাঁর সঙ্গে আসুক, লাভ নেই। সরকারের সমর্থন তাদের সঙ্গে নেই। জি এম কাদের একা হলেও সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকায় আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তাঁর জাপা টিকে থাকবে। এর পর আর থাকবে না।

তবে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, জি এম কাদেরের নেতৃত্ব আর টিকবে না। দলের মূলধারা রওশন এরশাদের সঙ্গে। ৯ মার্চ সম্মেলনে প্রমাণ হবে। জাপা সারাদেশে আবার বিস্তৃত হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d