মরিচের কেজি ২৭ লাখ, ছাদে ছিল ২ বছর, জানলেন ১৫ দিন আগে
নিজের ছাদবাগানে লাগানো চারাপিতা মরিচগাছের যত্ন করছেন দিলদার উদ্দিন। রোববার দুপুরে নোয়াখালী সদর উপজেলার কালিতারা এলাকায়
বিশ্বের ‘সবচেয়ে দামি’ মরিচ হিসেবে বিবেচনা করা হয় দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে জন্মানো চারাপিতা মরিচকে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই জাতের এক কেজি শুকনা মরিচের দাম ২৫ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ সাড়ে ২৭ লাখ টাকা। মূল্যবান এই মরিচ প্রায় দুই বছর ধরে চাষ করছেন বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার এক ব্যক্তি। অথচ ১৫ দিন আগেও তিনি জানতেন না এই মরিচের দামের কথা।
নোয়াখালী সদর উপজেলার কালিতারা এলাকার বাসিন্দা দিলদার উদ্দিন তাঁর ছাদবাগানে চারাপিতা মরিচের চাষ করছেন। বিষয়টি এখন জানাজানি হওয়ায় গণমাধ্যমের কর্মীসহ পাড়া-প্রতিবেশীরা প্রতিদিনই তাঁর বাড়িতে যাচ্ছেন গাছটি দেখতে।
দিলদার উদ্দিন পেশায় সাংবাদিক। তিনি নোয়াখালীর হাতিয়া কণ্ঠ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক। তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর আগে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মেয়ের শাশুড়ি দেশে আসার সময় সেখান থেকে কয়েকটি মরিচ এনেছিলেন। এর মধ্যে দুটি মরিচ তাঁকে দিলে সেগুলোর বীজ তিনি ছাদের টবের মাটিতে পুঁতে রাখেন। কয়েক দিনের মাথায় দুটি চারা গাছ জন্মায়। এরপর দুটি গাছেই দেড় মাসের মাথায় ফুল ও মরিচ ধরে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে গত দেড় বছরে গাছ দুটি থেকে তিনি দুই শতাধিক মরিচ খেয়েছেন এবং প্রতিবেশীদের দিয়েছেন। কিন্তু এই মরিচের দাম তিনি জানতেন না।
দিলদার উদ্দিন বলেন, অযত্ন-অবহেলায় দুটি গাছের একটি বছরখানেক মরিচ ধরার পর মরে যায়। বাকি গাছটিও অন্যান্য গাছের কারণে অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে ছিল। ১৫ দিন তিনি বাসায় বসে ইউটিউবে চারাপিতা মরিচ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখছিলেন। তখন এই মরিচের আকাশচুম্বী দাম ও বিশ্বজুড়ে এর দুষ্প্রাপ্যতার কথা জেনে বিস্মিত হন। তিনি বলেন, ওই দিনই তিনি মরিচগাছটির আশপাশ থেকে সব আগাছা পরিষ্কার করে গাছটির পরিচর্যা শুরু করেন। তখন গাছটিতে চারটি পাকা মরিচ ছিল। তিনি মরিচগুলো সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে রাখেন। এরপর ওই মরিচ থেকে বীজ নিয়ে বীজতলা তৈরি করেন, যা থেকে ২০টি চারা উৎপাদিত হয়। এর মধ্য থেকে তিনি আটটি চারা এরই মধ্যে টবে স্থানান্তর করেছেন। বাকিগুলো এখনো বীজতলায় আছে। আর মা গাছে ছোট-বড় মিলে ২৭টি মরিচ আছে।
বিশ্বের ‘সবচেয়ে দামি’ মরিচ হিসেবে বিবেচনা করা হয় চারাপিতা মরিচকে। এই জাতের এক কেজি শুকনা মরিচের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা। মরিচগুলো ধরেছে নোয়াখালীর বাসিন্দা দিলদার উদ্দিনের বাসার ছাদে লাগানো গাছে
সাংবাদিক দিলদার উদ্দিন জানান, চারাপিতা মরিচ ধরার পর প্রথম অবস্থায় সাদা, এরপর সবুজ, পরে হলুদ, তারপর কমলা এবং সবশেষে টুকটুকে লাল বর্ণ ধারণ করে। মরিচের রং পরিবর্তনের প্রতিটি ধাপেই মরিচগুলো দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মরিচে ঝাল কম, তবে তরকারিতে দিলে সুগন্ধ ছড়ায় বলে জানান তিনি।
দিলদার উদ্দিনের স্ত্রী সালমা ইসলাম সদর উপজেলার চরউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সুযোগ পেলে বাগানের পরিচর্যা করেন তিনিও।
সরেজমিন দেখা যায়, এই দম্পতির ছাদবাগানে পার্সিমন, পিচ ফল, ত্বিন ফল, চেরি ফল, মালবেরি, ব্ল্যাকবেরি, ট্যাং ফল, পিনাট বাটার, মিয়াজাকি আম, রামবুটান, বেরিকেটেট মাল্টা, আপেল, কমলাসহ ১৪০ প্রজাতির দুর্লভ ফলদ ও ঔষধি গাছ আছে। এসবের মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর বিখ্যাত চারাপিতা মরিচ তাঁদের ছাদবাগানে এখন বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।
নোয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শহীদুল হক বলেন, সাংবাদিক দিলদার উদ্দিনের ছাদবাগানে চারাপিতা মরিচগাছ লাগানোর বিষয়টি তিনি এরই মধ্যে জেনেছেন। এই মরিচ অনেক মূল্যবান। এটি সাধারণত পেরুতে চাষাবাদ হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এই মরিচের আবাদে সফলতা পাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। তাই এই মরিচের আরও বেশি আবাদ করা যায় কি না, তা তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। এরই মধ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে কাজ শুরু করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।