Bangladesh

মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শ্রীমঙ্গলের ‘দার্জিলিং টিলা’

ভারতের দার্জিলিংয়ের চা–বাগানের মতো সাজানো–গোছানো হওয়ায় জায়গাটি পরিচিতি পেয়েছে ‘দার্জিলিং টিলা’ নামে। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলের এম আর খান চা–বাগানে

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের একেক চা-বাগানের সৌন্দর্য একেক রকম। নয়নাভিরাম সেই সৌন্দর্যের টানে বছরজুড়েই পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে এই চায়ের রাজধানীতে। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলে পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এম আর খান চা-বাগানের ‘দার্জিলিং টিলা’।

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে এম আর খান চা-বাগানের অবস্থান। বাগানের ৭ নম্বর সেকশনটি অনেকটাই ভারতের দার্জিলিংয়ে অবস্থিত চা-বাগানের মতো। সাজানো-গোছানো জায়গাটি তাই সবার কাছে পরিচিতি পাচ্ছে ‘দার্জিলিং টিলা’ নামে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমের কারণে কয়েক মাস ধরে পর্যটকদের কাছে জায়গাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছুটির দিনগুলোয় এই জায়গায় স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। একসময় জায়গাটিতে যেতে অনুমতির প্রয়োজন হলেও এখন লোকজন বেশি হওয়ায় চা-বাগান কর্তৃপক্ষও জায়গাটি প্রায় উন্মুক্ত করে দিয়েছে। চা-বাগানে প্রবেশের সময় নাম-ঠিকানা লিখে যেতে পারছেন দর্শনার্থীরা।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ঘুরতে আসছেন শ্রীমঙ্গলের ‘দার্জিলিং টিলায়’

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ঘুরতে আসছেন শ্রীমঙ্গলের ‘দার্জিলিং টিলায়’

গত শুক্রবার বিকেলে এম আর খান চা-বাগানের ‘দার্জিলিং টিলা’য় গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে এসেছেন পর্যটকেরা। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে। ছবির মতো সাজানো চা-বাগানে ঘুরে ঘুরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন তাঁরা। শ্রীমঙ্গলের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রের চেয়ে এখন এই জায়গায় ভিড় একটু বেশিই দেখা যায়। মোটরসাইকেল, জিপ ও অন্যান্য যানবাহনে করে লোকজন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে যাওয়া–আসা করছেন।

মোটরসাইকেল নিয়ে আসা রাসেল আহমেদ নামের এক পর্যটক বলেন, ‘আমরা কয়েকজন বাইকার প্রায়ই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাই। কয়েক দিন আগে ফেসবুকে দার্জিলিং টিলার ভিডিও দেখলাম। দেখেই মনে হয়ে এখানে আসব। ভিডিও থেকেও জায়গাটি সুন্দর। শহর থেকে এই জায়গায় যাওয়ার রাস্তাটিও দারুণ। এখানে এসে আসলেই অনেক ভালো লাগছে।’

খুলনা থেকে আসা পর্যটক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে এর আগেও কয়েকবার এসেছি। এই জায়গার খোঁজ পাইনি। এবার আসার সময় ফেসবুকে দেখে এসেছি দার্জিলিং টিলাটি। শ্রীমঙ্গল এসেই এখানে এলাম। বেশ মনোমুগ্ধ কর জায়গা। চা–গাছগুলো খুবই সুন্দর করে লাগানো। টিলার ওপর থেকে দেখতে খুব ভালো লাগে।’
এদিকে ঘুরতে আসা মানুষের অনেকেই প্লাস্টিকের বোতল, খাবারের প্যাকেটের মতো ময়লা-আবর্জনা ফেলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ চা-গাছের পাতা ছিঁড়ে জায়গাটি নষ্ট করছেন।

এম আর খান চা-বাগানের স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের মধ্যবর্তী স্থানের ৭ নম্বর সেকশনটি দেখার জন্য আগেও বিভিন্ন সময় মানুষ আসতেন। এখন কয়েক মাস ধরে প্রচুর মানুষের ভিড় হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা আসছেন। এখানে লোকজন আসাতে ভালো লাগছে, আবার ক্ষতিও হচ্ছে।

চা–বাগানটি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত

চা–বাগানটি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত

সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনেকে ময়লা ফেলে যাচ্ছেন। গাছের পাতা তুলে নিচ্ছেন। ক্ষতি হলেও কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। সবাই ইচ্ছেমতো আসছেন, দেখছেন, ছবি তুলছেন। এই জায়গায় পর্যটকদের জন্য কিছু স্থাপনাও করা হয়েছে। যাঁরা এখানে আসছেন, তাঁদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, জায়গাটা নষ্ট করতে কেউ আসবেন না।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাপস দেব প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক মাস ধরে ‘দার্জিলিং টিলা’ সবার কাছে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানগুলোর ভেতরে এ ধরনের আরও সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে সেখানে পর্যটকেরা দেখতে পারেন না। নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে হলেও সেগুলো উন্মুক্ত করে দিলে শ্রীমঙ্গলের পর্যটনশিল্প আরও এগিয়ে যাবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button