মূল্যবান খনিজসম্পদ পাচারের আশঙ্কা
বালু ও মাটি রপ্তানি করার উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২৪ এর খসড়া তৈরি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টদের মতামতের জন্য এটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা-যদি বালু ও মাটি রপ্তানির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় তাহলে প্রতিবছর হাজার কোটি ডলারের মূল্যবান খনিজসম্পদ বৈধভাবে চলে যাবে বিদেশিদের হাতে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই চোরাইপথে বালু ও মাটি বিদেশে পাচারের বেশ কয়েকটি ঘটনা ধরা পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেন, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০-এ বালু ও মাটি রপ্তানির বিধান আছে। আইনে থাকার কারণে বিধিমালা তৈরি প্রয়োজন হয়েছে। তবে মূল্যবান খনিজ বালু ও মাটি যাতে কোনো ভাবে পাচার না হয়, সে ব্যবস্থা থাকবে বিধিতে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চোরাইপথে কে কী কোথায় নিয়েছে জানি না। ভূমি মন্ত্রণালয় বালু ও মাটি রপ্তানির অনুমতি কাউকে দেয়নি। একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সম্পৃক্ত করে কমিটি করা হবে। সব পক্ষের অনুমতি ছাড়া এক ফোঁটা বালুও কেউ নিতে পারবে না।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) ইনস্টিটিউট অব মাইনিং মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালজির (আইএমএমএম) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. আবুল কাশেম বলেন, আমাদের দেশের বালু এবং মাটিতে মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে। বিশেষ করে নদীর তলদেশ ও সমুদ্রসৈকতের বালুতে খনিজ পদার্থের উপস্থিতি বেশি। কঠোর আইনকানুন করে এসব সম্পদ রক্ষা জরুরি। না হয় এসব মূল্যবান সম্পদ পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইন ও বিধির ফাঁকফোকর দিয়ে যাতে কেউ পাচার করতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বালু ও মাটিতে মূল্যবান প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদের উপস্থিতি বাংলাদেশের বালিতে অধিক মাত্রায় রয়েছে। সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন সরঞ্জাম, অস্ত্র, যোগাযোগ সরঞ্জাম, জিপিএস সরঞ্জাম, ব্যাটারি ডিফেন্স ইলেক্ট্রনিক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহার হয়। নদীর বালু ও মাটি থেকে পাওয়া উপাদান কাঁচামাল হিসাবে মোটর গাড়ির উইনশিল্ড, উড়োজাহাজ এবং ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে ব্যবহৃত হয়। বালু থেকে উৎসারিত অন্যান্য খনিজ পৃথক করে, সিরামিক্স, ইলেকট্রনিক্স রং, প্লাস্টিক পেইন্টসহ নানামুখী শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার হয়। এছাড়া গাড়ির পলিশিং পেপার, উড়োজাহাজের খুচরা যন্ত্রাংশ, মানব দেহের হাঁটুর জয়েন্ট বলে, নকল দাঁতসহ লোহার আকরিক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
বালু থেকে পাওয়া মোনাজাইটেথ কালার টেলিভিশনের পিকচার টিউব ক্যাথডরে ও ক্যামেরার লেন্সের কোটিং হিসাবে কাজে লাগানো হয়। এ ধরনের খনিজ পদার্থ পরমাণু প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এ খনিজের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান, গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন হচ্ছে টিটেনিয়াম, যা পাওয়া যায় ইলমেনাইট খনিজ পদার্থ থেকে। এই খনিজ পদার্থটি বাংলাদেশের সৈকত, উপকূল আর ব্রাহ্মপুত্রের প্রবেশমুখের বালিতে সর্বোচ্চ পরিমাণে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উড়োজাহাজ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসাবে টিটেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। উন্নতমানের রং তৈরিতে বিশেষ করে রঙের দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য টিটেনিয়াম ব্যবহার অপরিহার্য। বিশ্বে খনিজ বালু ও মাটি মৌলিক এ উপাদান সবচেয়ে বেশি ব্যাবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এসব মৌলিক উপাদান সর্বোচ্চ উত্তোলনকারী দেশ চীন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ অক্টোবর ৪৫০ মেট্রিক টন ওজনের ১৭ কনটেইনার মূল্যবান খনিজ টিটেনিয়াম ও ইলমেনাইট বালু আটকে দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া বিধি বহির্ভূতভাবে বালু রপ্তানি হচ্ছিল বলে চালানটি আটকে দেওয়া হয়। প্রতি কনটেইনারে প্রায় ২৬ মেট্রিক টন করে মোট ১৭টি কনটেইনারে প্রায় ৪৫০ মেট্রিক টন বালু ছিল। আটক করা এ বালুর রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ২২ হাজার ৫০০ ডলার। এশিয়ার পরাশক্তি একটি দেশে বালুগুলো রপ্তানি হচ্ছিল।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের আটক করা উল্লিখিত বালিতে প্রতি এক হাজার কেজিতে ছয় কেজি ইলমেনাইট পাওয়া যায়। এ পরিমাণ ইলমেনাইট থেকে পাওয়া যায় দুই কেজি ৪০০ গ্রাম টিটেনিয়াম। প্রতি কেজি টিটেনিয়ামের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ২০ হাজার ৫০০ থেকে ২২ হাজার ডলার।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ উপকূলীয় এলাকায় খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ বালুর ১৭টি পয়েন্ট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ, বদর মোকাম, টেকনাফ, সাবরাং, ইনানী, কলাতলী, শীলখালী, কুতুবজোম, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, ফকিরাহাট পয়েন্ট অন্যতম। এসব পয়েন্টের বালিতে ইলমেনাইট, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, গার্নেট, রিউটাইল, লিওকনিক্স, কায়ানাইট, মোনাজাইটেথসহ আটটি খনিজ পদার্থ রয়েছে।
কক্সবাজার সৈকত ও ব্রহ্মপুত্র নদ এলাকার বালিতে কমপক্ষে ২০ লাখ টন খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ বালু রয়েছে। এর মধ্যে জিরকন রয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার ১১৭ টন, রিউটাইল ৭৪ হাজার ২৭৪ টন, গার্মেট দুই লাখ ২২ হাজার ৭৬১ টন, ম্যাগনেটাইট ৮০ হাজার ৫৯৯ টন, মোনাজাইট ১৭ হাজার ৩৫২ টন, ইলমেনাইট ১০ লাখ টনসহ অন্যান্য খনিজ পদার্থ। মহামূল্যবান হিসাবে এ খনিজ বালু বিবেচিত। জিরকন ব্যবহৃত হয় রাসায়নিক বিকিরণের উপাদান হিসাবে। মরিচা প্রতিরোধেও জিরকন ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আফতাব আলী শেখ বলেন, হিমালয় থেকে আমাদের নদনদী উৎসারিত হয়ে শত শত মাইল গড়িয়ে পানি এসে পড়ছে নদীতে। পানির সঙ্গে মূল্যবান খনিজ সম্পদ তলানি আকারে এসে যুক্ত হচ্ছে। এসব সম্পদ আমাদের নদী ও সমুদ্রে রয়েছে। আমাদের নদীর বালু ও মাটিতে মূল্যবান সম্পদ রয়েছে। ইতোমধ্যে জার্মানি থেকে বিসিএসআইআর’র বিজ্ঞানীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। তারা বালু থেকে উন্নতমানের কাচ তৈরির পদ্ধতি শিখে এসেছেন, যা দেশের কাচ শিল্পকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
Do you have a spam problem on this site; I also am a blogger,
and I was wondering your situation; we have created some nice methods and we are looking to exchange methods
with other folks, why not shoot me an e-mail if interested.