Bangladesh

মূল্যস্ফীতির চাপে পুষ্টির সঙ্গে আপস পোশাক শ্রমিকদের

বিশ্ববাজারে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হলেও শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে এর প্রতিফলন নেই। স্বল্প মজুরি দিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে স্থবির তাঁদের জীবনের চাকা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্ক্রতিক এক গবেষণার তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে শ্রমিকদের পরিবারের জন্য খাদ্যবহির্ভূত খরচ ২৫ শতাংশ বেড়েছে, গড় ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৮২ টাকা, যা ২০২২ সালে ছিল ১০ হাজার ৩১৩ টাকা।

শ্রমিক নেতারা বলছেন, দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকরা প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম মজুরি পান।

দেশের রপ্তানি আয় বাড়লেও ন্যায্য মজুরি না পাওয়ায় তাঁরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে পুষ্টিহীন হয়ে পড়ছেন।

পুষ্টিহীনতার মধ্যে ওভারটাইমের পরিশ্রমে কাহিল রাজধানীর পল্লবীতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক নাছিমা আকতার। তিনি বলেন, বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। মাংস বলতে কালেভাদ্রে পোলট্রি মুরগি। একটু বেশি আয়ের জন্য মাসে ২৬ দিন অতিরিক্ত কাজ করেও জীবন চলে না। অনেকটা অমানবিক জীবন কাটাতে হচ্ছে।

ন্যায্য আয়ের অভাবে শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যকর পুষ্টির সঙ্গে আপস করছেন বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুষ্টি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এতে বলা হয়, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য খাদ্য বাবদ খরচ লাগে পাঁচ হাজার ৩৮৫ টাকা।

আর শিশুর ক্ষেত্রে এক হাজার ৯৩৭ টাকা। সেই হিসাবে মোট খাদ্য খরচ আসে ১৬ হাজার ৫২৯ টাকা। অথচ একজন শ্রমিক খরচ করতে পারেন ৯ হাজার ১৫৮ টাকা। এর ফলে শ্রমিকরা তাঁদের খাদ্যতালিকায় ডিম, চিনি, ফল কিংবা দুধের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্য নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। 

এমন সংকট থেকে উত্তরণে নতুন মজুরিকাঠামোতে ন্যায্যতার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। তাঁরা বলছেন, পোশাকের প্রতি ইউনিটে দর বেড়েছে ২০ শতাংশ। কিন্তু সেই হারে শ্রমিকদের বেতন বাড়েনি। একসময় ৪০ লাখ শ্রমিকের দাবি করা হলেও সেই সংখ্যা ২৮ লাখে নেমেছে।

গত ২২ অক্টোবর পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা প্রস্তাব করা হলেও মালিকরা ১০ হাজার ৪০০ টাকা দিতে সম্মত হয়েছেন। মালিকদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পোশাক শ্রমিকরা ২৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবি জানিয়েছেন।

ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা জানান, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি চূড়ান্ত করতে আগামী ১ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের প্রস্তাব নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন।

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে মজুরি ছিল ৯৮ ডলার। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৩ ডলারে। এর ফলে একজন শ্রমিক প্রতি মাসে মজুরি হারাচ্ছেন দুই হাজার ৭২৫ টাকা। আর নতুন কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই মালিকরা প্রতি মাসে গড়ে লাভবান হচ্ছেন ৭৫৯ কোটি থেকে এক হাজার ৯০ কোটি টাকা পর্যন্ত।

শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ২০১৫ সালে প্রায় ১২২ শতাংশ বেড়েছিল। সেখানে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির হার মাত্র ৫১ শতাংশ। এসব বিবেচনায় পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন শ্রমিকরা।

মালিকপক্ষের প্রতিনিধি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, মূল্যস্ফীতি ও সুদহার বৃদ্ধির কারণে উন্নত দেশগুলোতে পোশাকের চাহিদা ও বিক্রি কমেছে। এসব বিবেচনায় ১০ হাজার ৪০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী বৈঠকে মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষই সমঝোতায় আসতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা করেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor