Bangladesh

মেগাপ্রকল্পে ঋণ শোধের চাপ বাড়ছে

দেশে সাম্প্রতিক সময়ে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেলসহ বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প চালু হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ও গতি এনে দিয়েছে। একই সঙ্গে কমে এসেছে দূরত্ব ও সময়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক ঋণ নিতে হয়েছে। গ্রেস পিরিয়ড শেষে এবার শুরু হচ্ছে ঋণ পরিশোধের পালা।

মেগাপ্রকল্পে ঋণ শোধের চাপ বাড়ছে

গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) যেখানে ২.৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হয়েছিল, চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩.৭ বিলিয়ন ডলারে। আগামী অর্থবছরে (২০২৪-২৫) এই ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার। ফলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে অর্থনীতিতে আরেকটি চাপ তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, ২০২৬ সালের পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে নেওয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঋণের আসল পরিশোধ শুরু হবে।

এ ছাড়া একই সময়ে মেট্রো রেল প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ঋণের আসল পরিশোধও শুরু হবে। এতে ঋণ পরিশোধের বোঝা আরো বাড়বে। এদিকে আগামী বছরগুলোতে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড়ও কমে আসতে পারে বলে ইআরডি সূত্রে জানা গেছে।

ইআরডির তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার থাকলেও সংশোধিত এডিপিতে ৩.৭ বিলিয়ন ডলার ধরা হয়েছে।

আগামী অর্থবছরে সুদ-আসল মিলিয়ে পরিশোধ করতে হবে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করেছে ২.৭ বিলিয়ন ডলার।

ইআরডিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো বেশ কিছু মেগাপ্রকল্পের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় বাংলাদেশের ওপর এসব প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধের চাপ ক্রমে বাড়ছে। রূপপুর পারমাণকি বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রো রেলের মতো বড় প্রকল্পগুলোর ঋণ পরিশোধ শুরু হলে চাপ আরো বেড়ে যাবে।

ইআরডির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মোট অর্থায়ন বেড়ে দাঁড়াবে ৯.৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরে ছিল ৮.৫৬ বিলিয়ন ডলার।

তবে ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা কমে যথাক্রমে ৭.৯২ ও ৭.৪১ বিলিয়ন ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের এপ্রিলে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ২.৬৬৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি হয়। এই ঋণের পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়েছে গত এপ্রিলে। ফলে চলতি অর্থবছর থেকে এ ঋণের আসলের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। ১৫ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ২০২৬ সালের শেষে রূপপুর পারমাণকি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নেওয়া ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ শুরু হবে। ২০ বছর মেয়াদের এ ঋণের জন্য প্রতিবছর ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আসল পরিশোধ করতে হবে। একই সময়ে মেট্রো রেল প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ঋণের আসল পরিশোধও শুরু হবে। তখন বার্ষিক আসল পরিশোধ পাঁচ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এতে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে বড় উল্লম্ফন ঘটবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব ঋণের টেকসই হওয়াটা নির্ভর করছে বাংলাদেশের এসব মেগাপ্রকল্পের সুফল আদায় এবং স্থানীয় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর সক্ষমতার ওপর। গত অর্থবছর থেকে আর্থিক হিসাবে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, সেটি আগের মতো উদ্বৃত্তে আনার পথে ঋণের আসল পরিশোধ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। একের পর এক বড় ঋণগুলোর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ার কারণে আর্থিক হিসাবে আসল পরিশোধ আগামী দিনে বাড়তেই থাকবে।

তাঁরা বলছেন, ঋণের আসল পরিশোধের চাপ মোকাবেলায় সরকারকে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অর্থছাড় বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। তবে আগামী বছরগুলোতে অর্থছাড় বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হবে বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রো রেল, পদ্মা রেলওয়ে লিংক, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের মতো প্রায় সমাপ্ত যেসব মেগাপ্রকল্পে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি অর্থায়ন জড়িত, সেগুলো পরিশোধের জন্য পুনর্মূল্যায়ন, পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঋণ পরিশোধে দীর্ঘ সময় পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ৩০ বছর পর্যন্তও ঋণ পরিশোধের সময় পাওয়া যায়। আবার ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ডও থাকে। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার বেশির ভাগ ঋণ ৩ থেকে ১৫ বছরে পরিশোধ করতে হয়। দ্বিপক্ষীয় ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়বে। আবার দ্বিপক্ষীয় ঋণের ডাউন পেমেন্টও দিতে হয়, যা এই ঋণকে আরো ব্যয়বহুল করে তোলে। কাজেই দ্বিপক্ষীয় ঋণ বাড়লে দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টের ওপর চাপ বাড়বে।

ডলার সংকটের এই মুহূর্তে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ অর্থনীতিতে বড় একটি চাপ তৈরি করছে। সরকার কি ঋণ নিয়েই বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করলে তো ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে। এ ক্ষেত্রে ঋণগুলোর ব্যবহারে উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। ঋণ ব্যবহার করে রিটার্ন যাতে সময়মতো পাওয়া যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে তো বৈদেশিক মুদ্রাই লাগবে। তাই বৈদেশিক মুদ্রা আসার ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য পলিসিগুলো ঠিক রাখা দরকার। বৈদেশিক মুদ্রা না এলে তো পরিশোধে চাপ পড়বেই।’

সূত্র মতে, গত অর্থবছরে এর আগের অর্থবছরের তুলনায় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের জন্য অর্থছাড় কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমে ৯.২৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। চলতি অর্থবছরের চলমান প্রকল্পগুলোতে ঋণছাড়ের তথ্যও খুব বেশি সুখকর নয়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে যে পরিমাণ ঋণের অর্থ ছাড় হয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি চলে গেছে পরিশোধে। এদিকে ঋণের অর্থছাড়ের পরিমাণও আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ঋণে তেমন সমস্যা না হলেও স্বল্পমেয়াদি ঋণগুলোয় চাপ পড়বে। বড় বিষয় হচ্ছে, প্রাইভেট সেক্টরে শর্ট টার্ম লোন অনেক বেশি। এগুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হলেও তাতে তো ডলার লাগবে। এখানে ডিফল্টার হলে তো চলবে না। এখন নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ১০ বার চিন্তা করতে হবে। বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় ঋণ নেওয়াই উচিত নয়। এগুলোর গ্রেস পিরিয়ড কম, সুদ বেশি।

ইআরডির প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণছাড় কমেছে ১৭০ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৯৭ কোটি ডলার বৈদেশিক সহায়তা ছাড় হয়। অথচ গত অর্থবছরে ছাড় হয় মাত্র ৯২৭ কোটি ডলার। এক অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার ছাড় এতটা কমার ঘটনা আর কখনো ঘটেনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d