USA

যুক্তরাজ্য থেকে তল্পিতল্পা গোটানোর হুমকি কেন টেক জায়ান্টদের?

এইসব হুমকি বাস্তবায়িত হলে তার প্রভাব গিয়ে পড়বে যুক্তরাজ্যের লাখ লাখ ব্যবহারকারীর ওপর। আর এদের জন্য যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোনো বিকল্পও নেই।

যুক্তরাজ্যে নতুন অনলাইন সুরক্ষা আইন চালু করার বিপরীতে দেশটি থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে বিভিন্ন মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এক প্রযুক্তি কোম্পানি প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। এতে তিনি বলেন, তার কোম্পানিকে যুক্তরাজ্য থেকে বিদায় নিতে হবে, এমন জটিল পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। তবে, ওই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থাটি।

‘কফিনে শেষ পেরেক’

যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন নীতিমালা নিয়ে অনেক মার্কিন কোম্পানিরই বিরক্তি দিন দিন বাড়ছে। 

তাদের ‘কফিনের শেষ পেরেক’ হল যুক্তরাজ্যে অনলাইন নীতিমালা। আর এটি নিয়ে কাজকর্ম দ্রুতই এগোচ্ছে।

এই অনলাইন সুরক্ষা বিল আইন হিসেবে পাশ হতে পারে শরতে। এর মূল লক্ষ্য, অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া। সেই লক্ষ্যে সামাজিক মাধ্যমের কনটেন্ট নজরদারির জন্য এই বিলে বেশ কিছু কঠোর নিয়মের কথা উল্লেখ রয়েছে। আর বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি ওই নীতিমালা না মানলে তাদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কারাদণ্ডসহ বড় আর্থিক জরিমানার কথাও উল্লেখ রয়েছে এতে।

এর মধ্যে একটি শর্ত বিশেষভাবে বিতর্কিত, যেখানে হোয়াটসঅ্যাপের বিভিন্ন এনক্রিপ্ট করা বার্তা যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে, দেশের জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি বা শিশু সুরক্ষার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হলেই কেবল সেটি প্রযোজ্য হবে।

এনক্রিপ্ট করা মেসেজিং অ্যাপকে অধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী ও রাজনীতিবিদদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে, এই সুরক্ষার কারণেই এটি ‘শিশুদের আপত্তিকর ছবি শেয়ারের’ চারণভূমিও  হয়ে উঠেছে বলে দাবি শিশু সুরক্ষা বিষয়ক দাতব্য সংস্থা ‘এনএসপিসিসি’র।

বর্তমানে এনক্রিপশন সুবিধা দিচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ, প্রোটন ও সিগনালের মতো মেসেজিং অ্যাপগুলো। আর সেবাদাতা কোম্পানি নিজেও সেইসব বার্তা দেখতে পারে না।

এই দাবি নিয়ে এরইমধ্যে যুক্তরাজ্যের বাজার থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ ও সিগনাল।

এদিকে, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে যাচ্ছে ‘ডিজিটাল মার্কেটস বিল’। অ্যামাজন বা মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা নীতিমালা না মানলে যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদেরকে শাস্তি দিতে পারবে, এমন বিধানও রাখা হয়েছে এতে।

বিবিসিকে বেশ কয়েকটি কোম্পানি বলেছে, তারা মনে করছে, এর ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যপক ক্ষমতা পেয়ে যাবে।

যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘কম্পিটিশন অ্যান্ড মার্কেটস অথরিটি (সিএমএ)’ মাইক্রোসফটের অ্যাক্টিভিশন অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তে লাগাম টানার পর এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল কোম্পানিটি।

“বার্তা একেবারে পরিষ্কার। তা হল, কোনো ব্যবসা শুরু করতে যুক্তরাজ্যের চেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা ইউরোপীয় ইউনিয়ন।” – ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন মাইক্রোসফটের প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথ। এর পর থেকেই মাইক্রোসফটের সঙ্গে সমঝোতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ‘সিএমএ’।

বিবিসি বলছে, মোটা দাগে একই ধরনের কঠোর নীতিমালা চালু করতে যাচ্ছে ইইউ। আর সেটা যুক্তরাজ্যের চেয়ে অনেক বড় ও মূল্যবান বাজার।

‘ইনভেস্টিগেটরি পাওয়ার অ্যাক্ট’ নামে প্রস্তাবিত নতুন আইনের সংশোধনীতে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি কোনো নতুন সুরক্ষা ফিচার বৈশ্বিকভাবে চালু করার আগে যুক্তরাজ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। ওই শর্ত আইন হিসেবে জারি হলে যুক্তরাজ্য থেকে ‘ফেইসটাইম’ ও ‘আইমেসেজ’ সেবা সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে অ্যাপল।

এইসব হুমকি বাস্তবায়িত হলে তার প্রভাব গিয়ে পড়বে যুক্তরাজ্যের লাখ লাখ ব্যবহারকারীর ওপর। আর এদের জন্য যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোনো বিকল্পও নেই।

এমন পরিস্থিতি ঠেকানোর উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কোম্পানিকে যুক্তরাজ্যে শাখা খোলার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এরইমধ্যে পালান্টির, ওপেনএআই, অ্যানথ্রপিকের মতো বেশ কয়েকটি কোম্পানি লন্ডনভিত্তিক সদর দপ্তর খুলতে রাজিও হয়েছে।

তবে ক্যালিফোর্নিয়ায় সিলিকন ভ্যালির একটি অংশ বলছে, এই যুক্তরাজ্যের ওই সদিচ্ছায় ভাটা পড়তে দেখা গেছে।

“যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর লাগাম টেনে ধরার প্রচেষ্টা নিয়ে বিরক্তি বাড়ছে। আর এতে নৈতিক আচরণের তুলনায় ইর্ষা ও বিদেশী প্রতিযোগীদের নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাই বেশি দেখা যাচ্ছে।” –বলেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মাইকেল ম্যালন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি ডিপমাইন্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্রিটিশ উদ্যোক্তা মুস্তাফা সুলেমান বলেন, যুক্তরাজ্যের বদলে ক্যালিফোর্নিয়াতেই নিজের নতুন কোম্পানি ‘ইনফ্লেকশনএআই’র দপ্তর রাখতে আগ্রহী তিনি।

“সরকারে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের প্রযুক্তি নিয়ে ব্যপক জ্ঞান রয়েছে। তবে, সেটা যথেষ্ট নয়।” –বলেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ডেম ডিয়ান কোয়েল।

“আর তাই এইসব আইন পার্লামেন্টে এমনভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে, যা নিয়ে আমার সহকর্মীদের মতো প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সঠিকভাবে তথ্য পাননি। আর দেশের জনগণের বিবেচনায় ব্যপক গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলাও উচিৎ নয়।”

বিবিসি বলছে, যুক্তরাজ্যের আইন প্রণেতাদের কাছে এমন প্রযুক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে তারা চাইলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports