Hot

রমজানে লোডশেডিং নিয়ে দুশ্চিন্তা

রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে। ডলার সংকটের কারণে এই খাতের ভোগান্তি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শীত শেষ হতে না হতেই লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এখন খুব বেশি না হলেও গরম বাড়লে তা আরও বাড়তে পারে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে চেষ্টা করা হবে। তবে জ্বালানি সংকট এবং সঞ্চালন লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে না। 

কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, আসছে রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরবরাহ কম থাকলে লোডশেডিং করতে হবে। গতবছরও আমরা তা দেখেছি। আর্থিক সংকট, ডলার সংকট রয়েছে। এসব কারণে রমজান ও গরমে সাধারণ ভোক্তাদের বিদ্যুতের জন্য ভুগতে হবে।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন,  বিদ্যুৎ খাতে চরম ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের চরম অব্যবস্থাপনার জন্য ভোক্তারা মাসুল দিচ্ছেন। ব্যয় না কমিয়ে মূল্য বাড়িয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে। একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে কিন্তু জ্বালানির সংস্থান কীভাবে হবে তার পরিকল্পনা করা হয়নি। 

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র মতে, বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে উৎপাদন সক্ষমতার কোনো ঘাটতি নেই। তবে ঘাটতি আছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, এলএনজি ও জ্বালানি তেলের সরবরাহে। চাহিদা মতো জ্বালানি না পাওয়ায়  গেল দু’বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে ব্যাপক লোডশেডিংয়ে ভুগতে হয়েছে গ্রাহককে। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে ১১ শতাংশের মতো। একই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়েছে একই হারে। তবে গত বছরের মতোই সক্ষমতার বড় একটি অংশ বসিয়ে রাখতে হতে পারে জ্বালানির অভাবে। 

এদিকে আরইবি সূত্র বলছে, চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ পাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে আরইবি’র আওতাধীন এলাকায়। ময়মনসিংহ এলাকায় বেশি এটি। ময়মনসিংহ এলাকার আরইবি’র এক কর্মকর্তা বলেন, এই এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা এখন ৮০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট। কিন্তু বর্তমানে এই পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রেশনিং করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। রমজান ও গরমে চাহিদা ১০০০ মেগাওয়াট হবে। তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন এই কর্মকর্তা।  গত বছর কোনো কোনো দিনে সর্বোচ্চ তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে। এতে ঢাকায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা এবং কোনো কোনো গ্রামাঞ্চলে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পায়নি মানুষ।

সাধারণত মার্চ থেকে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়তে থাকে। গত বছর সর্বোচ্চ উৎপাদনের সময় গ্যাস থেকে আসে ৬ হাজার ২৫২, জ্বালানি তেল থেকে ৫ হাজার ৫৯৩, কয়লা থেকে ২ হাজার ৬৬৮, জলবিদ্যুৎ থেকে ৭০ ও আমদানি থেকে এসেছে ১ হাজার ৮৫ মেগাওয়াট। গত বছর বিদ্যুৎ সক্ষমতা ছিল ২২ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট।  

গত বছর সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে জ্বালানি তেল থেকে। এবার সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে চায় পিডিবি। জ্বালানি তেলে ৭ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট সক্ষমতা আছে। এর জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া শোধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বাইরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের আরও প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া আছে। বকেয়ার চাপ ও ডলারের জোগান নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাহত হতে পারে।

পিডিবি’র কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গ্যাসের পর্যাপ্ত জোগান নেই। সে কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। ফলে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর জন্য দিনে গড়ে ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু পিডিবি সরবরাহ পাচ্ছে ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাস সরবরাহে প্রায় অর্ধেক ঘাটতি থাকায় বিদ্যুতের উৎপাদন কম হচ্ছে। এর ফলে লোডশেডিং হচ্ছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক গ্যাসের ন্যূনতম চাহিদা হবে দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। সর্বোচ্চ চাহিদা হবে ১ হাজার ৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না পেট্রোবাংলা। অপরদিকে ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি আমদানির ধারাবাহিকতা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

পিডিবি’র তথ্য অনুযায়ী, দেশে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১১ হাজার ৭০৮ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের ৫ হাজার ৪১২ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক কেন্দ্রের ৬ হাজার ৪৯২ মেগাওয়াট, ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্রের ৪৯০ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৩০ মেগাওয়াট এবং সৌরশক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ৪৫৯ মেগাওয়াট।

পাওয়ার সেলের তথ্য মতে, বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৬৪ লাখ। বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্ত জনগোষ্ঠী শতভাগ। পিজিসিবি’র গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। ওই সময়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ১৩১ মেগাওয়াট। সর্বনিম্ন উৎপাদন ধরা হয় ৮ হাজার ৩৩৪ মেগাওয়াট। রিজার্ভ (উৎপাদন শেষে) ৮৩১ মেগাওয়াট।

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেইন বলেন, রমজানে গ্রাহকদেরকে স্বস্তিতে রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।  গরম ও সেচের কথা চিন্তা করে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা মোতাবেক উৎপাদন পরিকল্পনা  হাতে নেয়া হয়েছে। সঞ্চালন সীমাবদ্ধতার কারণে লোডশেডিং হতে পারে। জ্বালানির কারণে পরিকল্পনা মতো উৎপাদন করা না গেলে লোডশেডিং হতে পারে। আমরা চেষ্টা করবো জোগান অব্যাহত রাখার। ময়মনসিংহ এলাকায় দীর্ঘদিন গ্রিড সমস্যার কারণে সমস্যা আছে। ফলে টেকনিক্যাল কারণে লোডশেডিং হয় সেখানে। উৎপাদন ঘাটতির কারণে নয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d