Bangladesh

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: মিয়ানমারের পরিবেশ জানতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের চিঠি

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার মতো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কি না সে বিষয়ে জানাতে বাংলাদেশকে চিঠি পাঠিয়েছেন জাতিসংঘের সাত স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ। এই তথ্যবিনিময়ের আগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাইলট প্রকল্প স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা সামনে রেখে গত ৫ জুন বাংলাদেশ সরকারকে জাতিসংঘের সাত স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ চিঠি পাঠিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা হলেন মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার টমাস অ্যান্ড্রুজ, নির্বিচারে আটক বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের সহসভাপতি ম্যাথু জিলেট, মানবাধিকারকর্মীদের পরিস্থিতি বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার ম্যারি লেলর, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের মানবাধিকার বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার পলা গ্যাভিরিয়া, মানবাধিকার ও অতিদারিদ্র্য বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার অলিভার ডি শুটার, ধর্মীয় বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার নাজিলা ঘানিয়া এবং সত্য, ন্যায়বিচার, ক্ষতিপূরণ ও পুনরাবৃত্তি না হওয়ার নিশ্চয়তাকে উৎসাহিতকরণ বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার ফেবিয়ান স্যালভিওলি। বাংলাদেশ এখনো এই চিঠির জবাব দেয়নি।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জেনোসাইড ও জাতিগত নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চুক্তি হলেও এর আওতায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি। চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাইলট প্রকল্প নিয়েছে।

এ নিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সঙ্গেও বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়েছে।

গত ৩১ জুলাই ইউএনএইচসিআরের এক প্রতিবেদনে ‘প্রত্যাবাসনে পাইলট উদ্যোগের’ বিষয়টি স্থান পেয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, পাইলট উদ্যোগ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা। এর আওতায় এক হাজার ১০০ রোহিঙ্গাকে ফেরানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত ৫ জুন ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের ডেপুটি হাইকমিশনার কেলি ক্লিমেন্টসের বৈঠকে এ বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।

ঢাকায় ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনারের সেই বৈঠকের দিনই জেনেভায় জাতিসংঘের সাত বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের কাছে পাঠানো চিঠিতে ওই উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকির কথা বলেছেন। কেলি ক্লিমেন্টসের ওই সফরের সময়ই পাইলট প্রকল্পের আওতায় মিয়ানমারে ফিরতে রাজি হওয়ায় বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল ইউএনএইচসিআর। বাংলাদেশের প্রতিবাদের মুখে ইউএনএইচসিআর আবারও সহযোগিতা দেওয়া শুরু করে।

বাংলাদেশ সরকারকে লেখা চিঠিতে জাতিসংঘের সাত বিশেষজ্ঞ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের এখনো চলাফেরার স্বাধীনতাসহ অন্য অধিকার না থাকা, ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষয়ক্ষতি, সামরিক বাহিনীর হাতে নিপীড়িত হওয়ার ঝুঁকির কথা তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত রোহিঙ্গাদের রাজি করাতে চাপ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন। রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীদের হয়রানিরও অভিযোগ তুলেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।

চিঠিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা অভিযোগগুলোর বিষয়ে সরকারের বক্তব্য এবং আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও সম্মানজনকভাবে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ রাখাইন রাজ্যে আছে কি না এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান কী এবং সেই অবস্থানের কারণ বিষয়েও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা জানতে চেয়েছেন।

চিঠিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাইলট পরিকল্পনা, কবে এটি শুরু হবে, কতজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠানো এবং কিভাবে পাঠানো হবে তা জানাতে বলেছেন। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশ সরকার কিভাবে নিশ্চিত করছে তাও জানতে চেয়েছেন তাঁরা।

এ ছাড়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা মানবাধিকারকর্মীদের হয়রানি ঠেকাতে সরকারের উদ্যোগ, ঘূর্ণিঝড় মোখার পর রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইন রাজ্যে নির্মিত গ্রামগুলোর পরিস্থিতিও জানতে চান জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।

ভাসানচরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং হলে তার সংখ্যাও এ সম্পর্কিত তথ্য জানাতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সরকারকে অনুরোধ করেছেন। পাইলট প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচিত রোহিঙ্গারা যদি মিয়ানমারে ফিরতে না চায় তাহলে তাদের ক্ষেত্রে কী করা হবে তা জানাতেও বলেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গত মাসের শেষ সপ্তাহে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করেন চীনের বিশেষ দূত দেং শিজুন। ওই সফরের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, চীন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চেষ্টা করছে। কিন্তু সমস্যা হলো, অনেক লোক চায় না যে রোহিঙ্গারা ফেরত যাক। বিশেষ করে অনেক বিদেশি সরকার আমাদের পরামর্শ দেন যে রোহিঙ্গারা যেন এই মুহূর্তে না যায়। তিনি বলেন, তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের অগ্রাধিকার।

Show More

7 Comments

  1. Can I simply just say what a relief to find someone that really understands what they are talking about on the net.
    You actually realize how to bring a problem to light and make it important.
    More and more people must read this and understand this side of the
    story. I can’t believe you’re not more popular
    since you most certainly have the gift.

    my homepage; nordvpn special coupon code 2024

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button