Bangladesh

শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে, সচেতন হওয়ার পরামর্শ

দেশে গত এক মাসের ব্যবধানে দৈনিক করোনা শনাক্তের হার ১ থেকে বেড়ে ৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। নতুন উপধরন জেএন.১ এই সংক্রমণ বাড়ার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, করোনার ধরন অমিক্রনের নতুন এই উপধরন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের  ক্ষেত্রে প্রায় অর্ধেকই ঘটছে নতুন এই উপধরনের মাধ্যমে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এটিকে কড়া নজরে রেখেছে এবং করোনার এই উপধরনকে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ বা ‘আগ্রহের বৈকল্পিক’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। নতুন ধরন জেএন.১-এর লক্ষণ আগের ধরনগুলোর মতোই, যেমন—জ্বর, সর্দিকাশি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো, ক্লান্তি ইত্যাদি। এ ছাড়া গুরুতর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা, ডায়ারিয়া ও বিভ্রান্তি বোধ করা।

নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হার ৫.১২ শতাংশ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৮৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ সময় কারো মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫.১২ শতাংশ। হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ১৪ জন।

এর মধ্যে ছয়জন রয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে,  দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগী ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৭১১ জন। সুস্থ হয়েছে ২০ লাখ ১৪ হাজার ১৪৩ জন। মৃত্যু ২৯ হাজার ৪৭৯ জনের। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯১ শতাংশের বয়স ৪০ বছরের বেশি।

মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ৬৪ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ পুরুষ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট আক্রান্তের ৫১ শতাংশ ও মৃতের ৩০ শতাংশ ঢাকা মহানগরের। ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি ২০ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে ও ১২ শতাংশ খুলনা বিভাগে।

দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। সে বছর শনাক্ত হয় পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৫১০ জন।  মৃত্যু সাত হাজার ৫৫৯ জনের। ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৯ জন। মৃত্যু ২০ হাজার ৫১৩ জনের। সে বছর সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন শনাক্ত হয় ২৮ জুলাই। ২০২২ সালে শনাক্ত হয় চার লাখ ৫১ হাজার ৫৮৬ জন। মৃত্যু এক হাজার ৩৬৮ জনের। গত বছর ২০২৩ সালে শনাক্ত হয় ৯ হাজার ১৮৯ জন। মৃত্যু ৩৭ জনের।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন,  কভিড-১৯-এর নতুন উপধরন জেএন.১ সংক্রমণের হার অনেক বেশি। সেই হিসাবে রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে।

মুশতাক হোসেন বলেন, মনে রাখতে হবে, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য কডিভ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, যাঁরা মেডিক্যাল বা হাসপাতালে কাজ করে, যাঁদের বয়স ৬০-এর বেশি, দীর্ঘদিনের পুরনো রোগ আছে, তাদের মাস্ক পরা জরুরি। এ ছাড়া যারা এখনো চতুর্থ ডোজের টিকা নেয়নি, তাদের যত দ্রুত সম্ভব টিকা নেওয়া উচিত। কারণ কভিডের টিকা নতুন এই উপধরনের ক্ষেত্রেও কাজ করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

বিশ্বে এক দিনে শনাক্ত ৩০৫৮, মৃত্যু ১২

কভিড রোগী ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান রাখা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে গত এক দিনে (গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত) নতুন করে তিন হাজার ৫৮ জন মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।

গত এক দিনে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ৩৭৩ জন শনাক্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়, মৃত্যু একজনের। এরপর পোল্যান্ডে শনাক্ত ৬৮৩ জন,  মৃত্যু আটজনের। ভারতে শনাক্ত ৩৫৫ জন ও মৃত্যু দুজনের। লিথুয়ানিয়ায় শনাক্ত হয়েছে ২১০ জন ও মৃত্যু একজনের। এ ছাড়া বুলগেরিয়ায় ১১০ জন, নরওয়েতে ৬৪ জন ও স্লোভেনিয়ায় ৩০ জন শনাক্ত হয়েছে।

আড়াই কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহ

সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) সূত্রে জানা গেছে, আড়াই কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে চতুর্থ ডোজ হিসেবে এসব টিকা দেওয়া হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স বিভাগের সদস্যসচিব ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা শহরের আটটি কেন্দ্রে বুস্টার ডোজ (তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ) ফাইজার ভিসিভি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। কেন্দ্রগুলো হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়া সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল। পরবর্তী ধাপে ঢাকার বিভিন্ন বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও সরকারি হাসপাতাল, ঢাকার বাইরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button