Bangladesh

শরিক ও মিত্রদের ছাড় দিয়েই ভোটে আওয়ামী লীগ

১৪ দল ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত। আজ জানা যাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাদের বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল প্রায় সব দলকে শরিক ও মিত্র বানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভোটের চূড়ান্ত যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে আজ। এর মধ্যে ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের ৭টি আসনে ছাড় দেওয়ার কথা আগেই বলেছিল ক্ষমতাসীন দলটি। তবে শেষ মুহূর্তে সেখান থেকেও ১টি আসন কমতে পারে। অন্যদিকে মিত্র জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ।

আজ রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। আজ ঠিক হবে কারা কারা নৌকা প্রতীকে ভোট করবেন আর কাদের বসিয়ে দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, ১৪ দলের শরিকেরা তাদের ভাগে পাওয়া আসনে নৌকা প্রতীক পাবে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সই করা চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হবে আজ। তা জমা দিলে এসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে। আর জাপাকে দেওয়া আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে।

আজ রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। আজ ঠিক হবে কারা কারা নৌকা প্রতীকে ভোট করবেন আর কাদের বসিয়ে দেওয়া হবে।

এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনীত পাঁচজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। অবশ্য উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে তাঁদের। তবে আপিলেও প্রার্থিতা ফিরে না পেলে এসব আসনের কোনো কোনোটিতে মিত্রদের সমর্থন দিতে পারে, কোনোটিতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলীয় সমর্থন পাবেন।

১৪ দলের শরিকদের যে ৭টি আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, এর বাইরে আর কোনো আসন দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। বরং ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৩টি আসনের আশ্বাস দেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে একটি কমে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ১৪ দলের শরিকেরা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে তিনি সাক্ষাৎ দিতে চাইছেন না। ফলে নতুন কোনো আসন জোটের ভাগে পড়ার সম্ভাবনা নেই।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম-২ আসনটি আবার পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। একই আসনের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ। তিনি গতকাল শনিবারও আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেন।

সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর আসনটির বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা পেয়েছেন।

১৪ দলের শরিকদের যে ৭টি আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, এর বাইরে আর কোনো আসন দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। বরং ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৩টি আসনের আশ্বাস দেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে একটি কমে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ১৪ দলের শরিকেরা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাওয়ার চেষ্টা করছে।

দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের শরিক ও মিত্রদের সব মিলিয়ে ৪০টি আসনে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে শরিক ও মিত্রদের অস্বস্তি প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। তবে আওয়ামী লীগ গতকাল পর্যন্ত স্বতন্ত্র উঠিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রাজি হয়নি।

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, সমঝোতার মাধ্যমে ৪০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার পর যেসব আসনে শরিক ও মিত্রদের আরও প্রার্থী থাকবে, তাঁদের পক্ষে ভোটার টানা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং দলটির যেসব নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের পক্ষে ভোটার টানা সম্ভব। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী তুলে দিলে নির্বাচন জমানো যাবে না। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকের কারও কারও ধারণা, ৩৫-৪০টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়ে এলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

বৈঠকে শেষ পর্যন্ত জাপাকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয় আওয়ামী লীগ। এখন পর্যন্ত এটিই চূড়ান্ত।

শেষ সময়ের দর-কষাকষিতে জাপা

আওয়ামী লীগ ও জাপা সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক দিনের আলোচনায় জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রথমে ৫০ আসন চায়। এরপর ৪০ আসনের দাবিতে দর-কষাকষি করে। গত শুক্রবার রাতের বৈঠকে সেটা ৩৫ আসনে নেমে আসে। ওই বৈঠকে শেষ পর্যন্ত জাপাকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয় আওয়ামী লীগ। এখন পর্যন্ত এটিই চূড়ান্ত।

গতকাল সন্ধ্যায় দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে দুই দফা বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে ওবায়দুল কাদের ফোনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।

আসন সমঝোতা নিয়ে ধূম্রজাল এখনো কাটেনি।

জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ

অন্যদিকে জাপা নেতারা আরও ৯টি আসন পেতে গতকাল চেষ্টা চালিয়েছেন। এর মধ্যে জাপার কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার (পটুয়াখালী-১) ও সালমা ইসলাম (ঢাকা-১৭), জি এম কাদেরের স্ত্রী ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেরিফা কাদেরের (ঢাকা-১৮) আসনও রয়েছে। এর বাইরে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪), জহিরুল আলম (মানিকগঞ্জ-১ অথবা ৩), মোস্তফা আল মাহমুদ (জামালপুর-২), শফিকুল ইসলাম (ঢাকা-১৩ বা ১৪), জসিম উদ্দিন ভুইয়া (নেত্রকোনা-৩) ও জহিরুল ইসলামের (টাঙ্গাইল-৭) আসনের ব্যাপারেও চেষ্টা চালিয়েছেন জাপার নেতারা। এর মধ্যে রুহুল আমিন হাওলাদারের আসনে ছাড় দিতে আওয়ামী লীগ সম্মত হয়েছে। তবে তাঁর স্ত্রী নাসরিন জাহানের সংসদীয় আসনের (বরিশাল–৬) বিষয়ে আগে সমঝোতা হলেও এখন সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে আওয়ামী লীগ।

গত রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাপার চেষ্টা অব্যাহত ছিল। রাত ৯টার দিকেও দলটির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ প্রথম আলোকে বলেছেন, আসন সমঝোতা নিয়ে ধূম্রজাল এখনো কাটেনি।

এদিকে জাপার চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ের সামনে গতকাল দুপুরের দিকে মনোনয়নবঞ্চিত ও সমঝোতার বাইরে থাকা কিছু নেতার সমর্থকেরা মিছিল করেন। এ সময় তাঁরা ‘দালালি নয়, রাজপথ’ বলে স্লোগান দেন। তখন দলের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা কার্যালয়ে ছিলেন না।

এর মধ্যে ঢাকার দুটি আসন নিয়ে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি জাপা। আসন দুটি হচ্ছে কাজী ফিরোজ রশীদের ঢাকা-৬ ও সৈয়দ আবু হোসেনের ঢাকা-৪ আসন। আসন দুটি জাপা পাচ্ছে বলে প্রচার থাকলেও আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, তারা ঢাকার আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। কারণ, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ঢাকায় শরিক ও মিত্রদের ছাড় দিতে রাজি নন। এ জন্য ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে তাঁর তিনবারের আসন ঢাকা-৮ দেওয়া হয়নি। এবার তাঁকে বরিশাল-২ আসন দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেকোনো আন্দোলনের-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা। তাই ঢাকার সব আসনে নিজ দলের সংসদ সদস্য রাখতে চান আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।

আলোচনায় পাঁচ আসন

ঋণখেলাপি, দ্বৈত নাগরিকত্ব, হলফনামায় মামলার তথ্য না থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগের মনোনীত পাঁচজনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। তাঁরা হলেন শাম্মী আহমেদ (বরিশাল-৪), সালাহ উদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), এনামুল হক (যশোর-৪), আবদুস সালাম (ময়মনসিংহ-৯) ও শামীম হক (ফরিদপুর-৩)। অবশ্য উচ্চ আদালতে আপিল করার এখনো সুযোগ আছে।

দলীয় সূত্র বলছে, এসব আসনের তিনটিতে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হতে পারে। দুটিতে মিত্রদের সুযোগ দেখছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এর মধ্যে কক্সবাজার-১ আসনে বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে ভোটে অংশ নেওয়া কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সুযোগ দেখছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ফরিদপুর-৩ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া শিল্পপতি এ কে আজাদের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। যশোর-৪ আসনটিতে কিংস পার্টি বলে খ্যাত বিএনএমের সুকৃতি কুমার মণ্ডল ও তৃণমূল বিএনপির এম শাব্বির আহমেদ আছেন। তাঁদের কোনো একজনকে আসনটিতে ছাড় দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য রনজিৎ কুমার রায়ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আজ বিকেলের মধ্যে আসন সমঝোতার বিষয়টি অনেকাংশেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। কাল সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গতকাল বলেন, আসন সমঝোতার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে শরিক মিত্রদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের চূড়ান্ত যাত্রা শুরু হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor