শেষ আশ্রয়ও হারাচ্ছে ৩ লাখ ফিলিস্তিনি, শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি ট্যাংক, রাফাসহ গাজার বিভিন্ন অংশে হামলা
রাফাসহ গাজার বিভিন্ন অংশে হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইল। শনিবার চালানো এ হামলায় হামলায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছেন। এএফপির সাংবাদিক, চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা উপকূলীয় অঞ্চলটি জুড়ে ইসরাইলি হামলার কথা জানিয়েছেন। ইসরাইল নতুন করে হামলা শুরু করার পর দক্ষিণ এবং উত্তর গাজার প্রায় ৩ লাখ ফিলিস্তিনি আবারও পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু যুদ্ধে বিধ্বস্ত কোনো জায়গায় নিরাপদ আশ্রয় কোথায় পাওয়া যাবে তা নিয়ে অনেকেই অনিশ্চিত।
ইসরাইলের বর্ধিত উচ্ছেদ আদেশ গাজার দক্ষিণতম প্রান্তে অবস্থিত রাফাহ শহরে প্রযোজ্য, যেখানে গত সাত মাসে ইসরাইলি বোমা হামলা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ১০ লাখেরও বেশি গাজাবাসী জড়ো হয়েছে। তাদের আশঙ্কা আরও গভীর হয়েছে যে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী রাফাহ আক্রমণের সাথে অগ্রসর হতে চলেছে, যা ইসরাইলি নেতারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এমন একটি সম্ভাবনা যা আন্তর্জাতিক সাহায্য গোষ্ঠী এবং অনেক দেশ নিন্দা করেছে। ফিলিস্তিনিদের সহায়তাকারী জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর মতে, গত ছয় দিনে প্রায় দেড় লাখ মানুষ ইতিমধ্যে রাফাহ থেকে পালিয়ে গেছে। ‘এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি – বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা খুব বেশি, এবং তাদের কেউই জানে না কোথায় যেতে হবে, তবে তারা চলে যায় এবং যতটা সম্ভব দূরে যাওয়ার চেষ্টা করে,’ বলেছেন ৩১ বছর বয়সী মোহাম্মদ আল-মাসরি যিনি রাফাতে একটি তাঁবুতে তার পরিবারের সাথে আশ্রয় নিয়েছেন, ‘ভয়, বিভ্রান্তি, নিপীড়ন, উদ্বেগ মানুষকে কুরে কুরে খাচ্ছে।’
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্ধিত উচ্ছেদ আদেশের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘রাফাহতে আটকে পড়া বেসামরিক নাগরিকদের অনিরাপদ অঞ্চলে সরিয়ে নেয়ার আদেশ অগ্রহণযোগ্য।’ ইসরাইল সোমবার মিশরের সাথে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ের গাজার দিকের নিয়ন্ত্রণ দখল করেছে যাকে এটি ‘সীমিত অপারেশন’ বলে অভিহিত করেছে এবং তারপর থেকে শহরটিতে এবং এর আশেপাশে ধাপে ধাপে বোমাবর্ষণ এবং লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, গাজার একটি হাসপাতালের বিবৃতিতে বলা হয়, উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের লাশ গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা রাফায় প্রচণ্ড বিমান হামলার কথা জানিয়েছেন। এএফপির ছবিতে শহরটির আকাশে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। এ ছাড়া উত্তর গাজায় হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, গতকাল দেশটির সেনারা ক্রসিংয়ে সশস্ত্র ব্যক্তিদের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। তারা এলাকাটিতে অনেক ভূগর্ভস্থ টানেল খুঁজে পেয়েছেন।
এদিকে শনিবার রাতভর বোমা হামলার পর গতকাল ভোরে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আবারও ট্যাংক পাঠিয়েছে ইসরাইল। শনিবার সন্ধ্যায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, জাবালিয়ায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসকে তাদের সামরিক সক্ষমতা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করায় বাধা দিচ্ছে সেনারা। গাজার আটটি ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরের মধ্যে সবচেয়ে বড় শিবির জাবালিয়া। সেখানে ১ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিন আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় তাদের ইসরাইলের শহর ও গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন।
একটি সংবাদ সম্মেলনে ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, গত সপ্তাহগুলোতে আমরা জাবালিয়ায় হামাসের সামরিক সক্ষমতা পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা শনাক্ত করেছি। সেই প্রচেষ্টাকে নির্মূলে সেখানে কাজ করছি আমরা। গাজা শহরের জেইতুন জেলায় অভিযান চালিয়ে ইসরাইলি বাহিনী প্রায় ৩০ ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে বলেও জানান হাগারি।