Hot

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ধনকুবেরদের গোপন সম্পদ ফাঁস হওয়া তালিকায় বাংলাদেশিদের ঘাঁটি

♦ আছেন সাবেক মন্ত্রী আমলা ঋণখেলাপি ওয়ান-ইলেভেনের সাবেক সেনা কর্মকর্তা ♦ ৩৯৪ জনের সম্পদের পাহাড় ২ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা মূল্যের ৬৪১টি সম্পত্তি

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ধনকুবেরদের গোপন সম্পদ ফাঁস হওয়া তালিকায় ৩৯৪ জন বাংলাদেশির নাম রয়েছে। অন্যতম বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র এ মরু শহরে বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য এত বিপুল সম্পদ গড়েছেন তারা।

ব্যাংক লুট করে বিসমিল্লাহ গ্রুপের খাজা সোলায়মান আনোয়ার চৌধুরীসহ অন্তত ২০ জন ঋণখেলাপির সম্পদ এখন দুবাইয়ে। তালিকায় আরও রয়েছে সাবেক মন্ত্রী, রাজনীতিক, অপরাধী, অর্থ পাচারকারীদের নাম। ওয়ান-ইলেভেনের প্রভাবশালী সাবেক সেনা কর্মকর্তারা সেখানেই অবস্থান করছেন। তাদের রয়েছে বাড়ি, দোকানসহ নানা ধরনের ব্যবসা। আমলাদের অনেকেই তাঁদের বিত্তের ঘাঁটি গড়েছেন দুবাইয়ে। তাঁদের একাধিক বাড়ি আর বিশাল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সদ্যবিদায়ী মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রী এবং তাঁর মেয়ের নাম উঠে এসেছে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়ার তালিকায়। বাংলাদেশিদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের গোপন সম্পদের এমন ভয়াবহ তথ্য ফাঁসের পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার একটি বৈশ্বিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রকল্প ‘দুবাই আনলকড’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে বিশ্বের সম্পদশালীদের গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুবাইয়ের আবাসন খাতে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। তাদের তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিকও। ৩৯৪ বাংলাদেশির ২ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা মূল্যের ৬৪১টি সম্পত্তি রয়েছে দুবাইয়ে। সম্পত্তির মালিকের এ তালিকায় আরও রয়েছেন বিভিন্ন দেশের বড় ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এমনকি বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞায় থাকা ব্যক্তি, অর্থ পাচারকারী ও অপরাধীরাও সেখানে বিপুল সম্পদের মালিক। বাংলাদেশি নাগরিকদের নাম-পরিচয় সরাসরি প্রকাশ করা না হলেও আকার ইঙ্গিতে স্পষ্ট করা হয়। সংবাদে যে মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা, সম্পদের পরিমাণ এবং দাম রয়েছে। তাদের নিয়ে পৃথক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

বৈশ্বিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রকল্পের এ প্রতিবেদনে ভারতের ধনকুবের মুকেশ আম্বানির পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির পরিবারের সদস্যদের নাম রয়েছে। তালিকায় দেখা গেছে, দুবাইয়ে সবচেয়ে বেশি সম্পদ রয়েছে ভারতীয়দের। সেখানে ৩৫ হাজার প্রপার্টির মালিক ২৯ হাজার ৭০০ ভারতীয়। এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন পাকিস্তানিরা। দেশটির ১৭ হাজার নাগরিকের দুবাইয়ে ২৩ হাজার প্রপার্টি রয়েছে। এর মূল্য ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। ‘দুবাই আনলকড’ শীর্ষক এই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রকল্পের সমন্বয় করেছে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) ও নরওয়ের সংবাদমাধ্যম ই-টোয়েন্টিফোর। এ প্রকল্পে অংশ নিয়েছে ৫৮টি দেশের ৭৪টি সংবাদমাধ্যম। প্রতিবেদনটি ওসিসিআরপির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। দুবাইয়ের ভূমি দফতরসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ফাঁস হওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। এতে বিশেষ করে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিদেশিদের সম্পদের মালিকানার বিস্তারিত চিত্র উঠে আসে।

এসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ। প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ও সংঘাত নিয়ে গবেষণা করে থাকে। পরে এসব তথ্য-উপাত্ত ই-টোয়েন্টিফোর এবং ওসিসিআরপির সঙ্গে ভাগাভাগি করে প্রতিষ্ঠানটি।

এ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসও। সব মিলিয়ে ফোর্বস ২২ ধনকুবের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৬০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের ৭৬টি সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে। বিশ্বের চারটি মহাদেশের ১০টি দেশ থেকে এসেছেন তারা।

ফোর্বসের প্রতিবেদনে শুরুতেই রয়েছে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির নাম। দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ কৃত্রিম দ্বীপে তার আনুমানিক ২৪ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে। দেশটির আরেক নাগরিক এম এ ইউসুফ আলী ও তার পরিবারের পাম জুমেইরাহ, দুবাই মেরিনা ও ইন্টারন্যাশনাল সিটিতে ৭ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ রয়েছে। যুক্তরাজ্য, মিসর, সাইপ্রাসের নাগরিকদেরও সম্পদ রয়েছে দুবাইয়ে। সেখানে গোপনে সম্পদ গড়া ব্যক্তিদের এ তালিকায় রয়েছে দারিদ্র্যপীড়িত ও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অন্তত সাত নাগরিকের নামও। তাদের মধ্যে ছয়জন রাজনৈতিক ও একজন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি। পাকিস্তানের দৈনিক ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, দুবাইয়ে ১৭ হাজার পাকিস্তানি সম্পদের মালিক। তবে তথ্য-উপাত্ত ও অতিরিক্ত সূত্র ব্যবহার করে এ সংখ্যা ২২ হাজারের মতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এ তালিকায় নাম রয়েছে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, বাখতাওয়ার ভুট্টো জারদারি ও আসিফা ভুট্টো জারদারি; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভির স্ত্রী মিসেস আশরাফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছেলে হুসাইন নওয়াজ এবং আলোচিত সাবেক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার ছেলে সাদ সিদ্দিক বাজওয়ারের। দেশটির সাবেক সেনা শাসক পারভেজ মোশাররফসহ বহু সাবেক জেনারেলের সম্পদ থাকার তথ্য তুলে ধরেছে ডন।

এ ছাড়া তালিকায় চীন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের পাশাপাশি ইয়েমেন, নাইজেরিয়া ও কেনিয়ার মতো দেশের নাগরিকরাও রয়েছেন। আরও রয়েছেন নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা মিয়ানমারের একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক তালিকায় দেখা গেছে, আমিরাতে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে। ওই বছরের কেবল প্রথমার্ধেই (জানুয়ারি থেকে জুন) দুবাই চেম্বার অব কমার্সে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সদস্যপদ নেওয়ার হার ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। ছয় মাসে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন ১ হাজার ৪৪টি কোম্পানি দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ নিয়েছে। তাতে দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ পাওয়া বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন কোম্পানির মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৭৫টি। দুবাইয়ে বহু বাংলাদেশির অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলে মনে করা হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button