International

সান ফ্রান্সিসকোতে যাত্রীসেবায় পুরোদমে চালু হচ্ছে চালকবিহীন ট্যাক্সি

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত আগস্টে সান ফ্রান্সিসকোতে চালকবিহীন গাড়ি রোবোট্যাক্সি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তবে সবাই এতে খুশি নন।

গুগলের ‘ওয়েমো’ কোম্পানি এবং ‘ক্রুজ’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি এই অনুমতি পেয়েছে। তাদের দাবি, চালকবিহীন ট্যাক্সি যাত্রী পরিবহন আরও নিরাপদ করবে। কারণ, চালকেরা ক্লান্ত বা অসাবধানও থাকতে পারেন।

বর্তমানে পরীক্ষা–নিরীক্ষার অংশ হিসেবে কয়েক শ গাড়ি যাত্রীদের বিনা মূল্যে সেবা দিচ্ছে। কিছু গাড়ি শুধু অফপিক আওয়ারে চলছে। শিগগিরই দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা যাত্রী পরিবহনে এ সেবা চালু হবে।

শ্যারন জোভিনাৎসোর জন্য এটি ভালো খবর। কারণ, ওয়েমোর সঙ্গে তাঁর প্রতিষ্ঠানের অংশীদারত্ব আছে। শ্যারন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তিনি বলেন, যাত্রার সময় কোনো চালক না থাকার অর্থ তার প্রতি বৈষম্য দেখানোরও কেউ থাকবে না।

লাইটহাউস ফর দ্য ব্লাইন্ড সংস্থার প্রধান নির্বাহী জোভিনাৎসো বলেন, ‘ট্যাক্সি ও রাইডশেয়ার সেবা ব্যবহার করতে গিয়ে আমি একটা বিষয় খেয়াল করেছি। চোখে দেখতে পারি না বলে আমি কুকুর নিয়ে চলাফেরা করি। অনেক চালক তাঁদের গাড়িতে কুকুর নিতে চান না। এর ফলে দেখা যায়, কুকুর দেখার পর তাঁরা রাইড বাতিল করে দেন। তখন আমাকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্সিতে যেহেতু চালক থাকবে না, তাই সেই সমস্যাও হবে না।’

তবে বিষয়টি সবাই পছন্দ করছেন না। ট্যাক্সি চালকেরা বলছেন, এসব গাড়ি তাঁদের চলার পথে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। চাকরি হারানোরও আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

এ ছাড়া সেফ স্ট্রিট রেবেলের মতো গোষ্ঠীও আছে। তারা গাড়িমুক্ত এলাকা চায়। প্রতিবাদ–বিক্ষোভের অংশ হিসেবে তারা স্বয়ংক্রিয় গাড়ির সেন্সর ঢেকে দিচ্ছেন। আইনি পদক্ষেপের মুখে যেন পড়তে না হয়, সে জন্য একজন অ্যাকটিভিস্ট নাম–পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে বলেন, একজন চালকের কাছে যেসব সমস্যার সমাধান স্বাভাবিক বিষয়, সেসব সমস্যার মুখোমুখি হলে চালকবিহীন গাড়ি মনে হয় যেন বিপদে পড়ে যায়। দুর্ঘটনা বা ধাক্কা লাগার জন্য এগুলোকে দায়ী মনে না হলেও যানজটের সময় তাদের আচরণ অন্য গাড়ির চালকদের বিপদের কারণ হতে পারে।

অন্য সমস্যাও হয়। যেমন বিভ্রান্ত হলে গাড়ি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যায়। এ কারণেই বেশি করে এমন গাড়ি রাস্তায় চলতে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন কেউ কেউ। কারণ, তাহলে অভিজ্ঞতা হবে।

অন্যরা মনে করেন, ঠিক এই কারণেই স্বয়ংক্রিয় গাড়ি নামানোর পরিকল্পনা বাদ দেওয়া উচিত। সান ফ্রান্সিসকোর বাসিন্দাদের এই পরীক্ষা–নিরীক্ষা থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত।

নতুন প্রযুক্তি আসায় শুধু সান ফ্রান্সিসকো নয়, বিশ্বের সব শহরকেই একটি প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। সেটা হলো, কোন পর্যায়ে এসে একটি শহর সিদ্ধান্ত নিতে পারে, নতুন প্রযুক্তিটা গণহারে ব্যবহারের সময় এসেছে এবং এতে লাভের পাল্লাটাই ভারী।

ক্যালিফোর্নিয়ার কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চালকবিহীন ট্যাক্সি চালানোর মতো সময় চলে এসেছে। তবে সান ফ্রান্সিসকোতে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই প্রযুক্তি চলে এসেছে, যা এড়ানো যাবে না। মানুষকে নতুন এই প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button