Bangladesh

সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে দুদক

মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ৪০০ কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে, মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন নিয়োগ, কেনাকাটাসহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে তিনি এই অর্থের মালিক হয়েছেন। এছাড়া নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছে দুদক।

গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অধ্যক্ষের কাছে বেশ কিছু নথি চেয়েছে দুদক। যার সবগুলোই মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট। এসব নথির সত্যায়িত কপি আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া পৃথক এক চিঠিতে দেলোয়ার হোসেনকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। অনুসন্ধানী কর্মকর্তা হিসাবে রয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম।

এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত করেও দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে।

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের এক তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, সাবেক প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষকে অবৈধভাবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন দেলোয়ার হোসেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হয়। কাজ না করেও বিল পরিশোধের প্রমাণ পেয়েছিল সরকারি এ সংস্থা। গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যরা গত পাঁচ বছর অবৈধভাবে সম্মানী বাবদ ১ কোটি ৫৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৪ টাকা নিয়েছিলেন।

মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ২০১৮ সালের বিল, ভাউচার ও স্টেটমেন্ট যাচাই করে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শন দল দেখতে পায়, অধ্যক্ষের বাসভবন ও মহিলা হোস্টেল নির্মাণকাজের ব্যয় বাবদ লারা এন্টারপ্রাইজকে মোট ৩১ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ কোটি অধ্যক্ষের বাসভবন ও ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকা মহিলা হোস্টেল নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, এসব খাত থেকেই কৌশলে টাকা বের করে নিয়েছে। এছাড়া কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সংস্থার তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আট বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৩৫ কোটি ৩ লাখ ৯২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকার কর ও ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এছাড়া ৩১ কোটি ৬৮ লাখ ৮ হাজার ৯৫৩ টাকার কাজের প্রয়োজনীয় ও যথাযথ হিসাব দিতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ।  বিশেষ ক্লাসের নামে শিক্ষকদের নামে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। ছয় বছরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ম্যাগাজিন ফি বাবদ ৩ কোটি টাকা তোলা হলেও বের হয়নি ম্যাগাজিন। এমনকি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের নামেও দুর্নীতি হয়েছে। সাত বছরে প্রায় পৌনে ৪০০ কোটি টাকার মতো বিভিন্ন ধরনের কাজের বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

তবে দুদকে অভিযোগের বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি মাত্র ছয় মাস অ্যাডহক কমিটির দায়িত্বে ছিলাম। আমি শুধু রুটিন ওয়ার্ক করেছি। আর শিক্ষকদের বেতন ৪০ শতাংশ বাড়িয়েছি। আর কোনো কাজ আমি করিনি।

যত অবকাঠামো ও অন্যান্য কাজ হয়েছে তখন আমি সভাপতি ছিলাম না। আমার আগে অধ্যাপক রাশেদা আক্তার সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।’

তবে গভর্নিং বডিতে দীর্ঘদিন ধরে দাতা সদস্য থাকা এবং বিভিন্ন উপকমিটির প্রধান থাকার কথা স্বীকার করেন দেলোয়ার হোসেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি না থাকলেও কমিটিতে দাতা সদস্য হিসাবে ও বিভিন্ন উপকমিটিতে থেকেই প্রতিষ্ঠানের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। তবে এ অভিযোগটিও তিনি অস্বীকার করেন। সাবেক অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘শুনেছি আমাকেও দুদক ডেকেছে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button