সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ কঠোর করছে ইউরোপীয় দেশগুলো
অভিবাসীদের আইনি এবং অবৈধ আগমন বৃদ্ধি মোকাবেলা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। অবাধ চলাচলের অঞ্চলটির কিছু সদস্য রাষ্ট্র অস্থায়ীভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পুনরায় চালু করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। শেঙেনের নিয়মগুলো অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তা নীতির জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত ক্ষেত্রে ‘শেষ অবলম্বন হিসেবে’ এই ধরনের পদক্ষেপের অনুমতি দেয়।
যেসব দেশ সীমান্তে কঠোর তল্লাশি ও যাচাই-বাছাই পুনর্বহাল করেছে :
অস্ট্রিয়া
অক্টোবরে চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে অস্ট্রিয়া তার সীমান্তে তল্লাশি ও যাচাই-বাছাই চালু করেছে, যা ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
নভেম্বর পর্যন্ত নেওয়া সিদ্ধান্তে দেশটি স্লোভেনিয়া ও হাঙ্গেরির সঙ্গে আগামী বছরের মে পর্যন্ত সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে। এ পদক্ষেপের পেছনে আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণ ব্যবস্থার ওপর চাপ, অস্ত্র পাচারের হুমকি, ইউক্রেনের যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত অপরাধমূলক নেটওয়ার্ক এবং মানুষ চোরাচালানের কথা উল্লেখ করেছে দেশটি।
ডেনমার্ক
কোপেনহেগেন বিমানবন্দরে কোরআন পোড়ানোর ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য আগস্টে ডেনমার্ক শেঙেন দেশ থেকে আসাদের জন্য সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কঠোর করেছে।
ইইউ কমিশনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটি আগামী বছরের মে পর্যন্ত ডেনিশ-জার্মান স্থল সীমান্তে এবং জার্মানিতে ফেরি সংযোগসহ বন্দরে দীর্ঘ তল্লাশি ও যাচাই-বাছাইয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকার বলেছে, তারা অনিয়মিত অভিবাসনের বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও সংগঠিত অপরাধ, বিদেশি গোয়েন্দা গুপ্তচরবৃত্তি এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের সৃষ্ট হুমকির কথাও উল্লেখ করেছে।
জার্মানি
সেপ্টেম্বরে পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে জার্মানি তার স্থল সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করেছে, যা ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। বার্লিন বলেছে, তাদের অভিবাসন বৃদ্ধি ও উচ্চ মাত্রার চোরাচালানের প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।
ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে এই বছর প্রথমবারের মতো আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনের তীব্র বৃদ্ধি ঘটেছে।
অস্ট্রিয়ার সঙ্গেও বার্লিন স্থল সীমান্ত তল্লাশি আগামী বছরের মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে। দেশটি বলেছে, আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণ ব্যবস্থার ওপর চাপ, মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা হুমকি এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
ইতালি
২১ অক্টোবর থেকে স্লোভেনিয়ার সঙ্গে ইতালি তার উত্তর-পূর্ব স্থল সীমান্তে পুলিশি তল্লাশি পুনঃস্থাপন করেছে। বলকান রুটে ট্রানজিটে থাকা কিছু অভিবাসী সন্ত্রাসী হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে এ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
নিয়ন্ত্রণগুলো কমপক্ষে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেডোসি অক্টোবরে বলেছিলেন, সম্ভবত আগামী বছর পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণগুলো বাড়ানো হবে।
নরওয়ে
শেঙেন ব্যবস্থার অন্তর্গত হলেও ইইউ সদস্য নয় নরওয়ে। দেশটি ১২ নভেম্বর থেকে শেঙেন এলাকায় ফেরি সংযোগসহ তাদের বন্দরগুলোতে সীমানা নিয়ন্ত্রণ পুনঃস্থাপন করেছে। তারা বিভিন্ন অবকাঠামোর জন্য এবং বিদেশি গোয়েন্দা পরিষেবা থেকে হুমকির দিকে ইঙ্গিত করেছে।
এই নিয়ন্ত্রণগুলো অন্তত আগামী বছরের ৫ মে পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
পোল্যান্ড
অভিবাসীদের অবৈধভাবে প্রবেশের প্রচেষ্টার দিকে ইঙ্গিত করে স্লোভাকিয়ার সঙ্গে পোল্যান্ড তার সীমান্তে অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
সরকার এই বছরের শুরুর দিকে ‘নগদের বিনিময়ে ভিসা’ কেলেঙ্কারিতে সমালোচনার মুখে পড়েছিল। বিরোধীরা অভিযোগ করেছিল, সরকার এমন একটি ব্যবস্থায় জড়িত, যেখানে মধ্যস্থতাকারীদের অর্থ প্রদানের পরশ যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনেকে দ্রুত গতিতে ভিসা পেয়েছিলেন।
সুইডেন
আগস্টে সীমান্তে তল্লাশি জোরদার করেছে সুইডেন। দেশটির সীমান্ত পুলিশকে আরো বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে শরীর তল্লাশি ও ইলেকট্রনিক নজরদারির ব্যবহার বেড়েছে।
একই মাসে সরকার সুইডেনের সন্ত্রাসবাদের হুমকির মাত্রা বাড়িয়ে বলেছে, কোরআন পোড়ানোর কারণে ইসলামপন্থীদের হুমকির কারণ হয়ে ওঠার পর তারা হামলা ব্যর্থ করেছে।
নভেম্বর থেকে দেশটি আগামী বছরের মে পর্যন্ত সীমান্ত তল্লাশির মেয়াদ বাড়িয়েছে।
ফ্রান্স
সন্ত্রাসি হুমকির কথা উল্লেখ করে ফ্রান্স নভেম্বর মাস থেকে শেঙেন সদস্যদের সঙ্গে তার সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রবর্তন করেছে। নিয়ন্ত্রণগুলো আগামী বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন অক্টোবরে ব্রাসেলসে এক আততায়ীর হাতে দুই ব্যক্তি নিহত হওয়ার পর বেলজিয়াম সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার ঘোষণা করেছিলেন।
স্লোভাকিয়ার
২০ নভেম্বর হাঙ্গেরির সঙ্গে সীমান্তে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ রাখার অনুমোদন দিয়েছে স্লোভাকিয়ার সরকার। অবৈধ আগমনের সংখ্যা সীমিত করতে চাইছে দেশটির সরকার। নভেম্বরে তারা জানায়, ২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছর অবৈধভাবে আসা প্রায় ৫০০ শতাংশের বেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে।
স্লোভেনিয়া
১৭ নভেম্বর শেঙেন সদস্যদের সঙ্গে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে স্লোভেনিয়া। এ পদক্ষেপের পেছনে দেশটির সরকার ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় সশস্ত্র সংঘাত এবং সংগঠিত অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ থেকে উচ্চতর হুমকির কথা উল্লেখ করেছে।
এ ছাড়া তারা ২২ ডিসেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য সেই সীমান্তগুলোতে পুনরায় নিয়ন্ত্রণ চালু করার পরিকল্পনা করেছে।
এর আগে অক্টোবরে ক্রোয়েশিয়া ও হাঙ্গেরির সীমান্ত ক্রসিংয়ে পুলিশ মোতায়েন করেছিল স্লোভেনিয়া।
অ-ইইউ দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত কঠোর
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সাত শতাধিক অভিবাসী বিভিন্ন সীমান্ত স্টেশনে আসার পর ২৪ নভেম্বর ফিনল্যান্ড অস্থায়ীভাবে রাশিয়ার সঙ্গে তার আটটি যাত্রীবাহী ক্রসিংয়ের মধ্যে একটি ছাড়া সব বন্ধ করে দিয়েছে। এগুলো পুনরায় খোলার তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
হেলসিঙ্কি বলেছে, মস্কো তাদের সীমান্তে অস্বাভাবিকভাবে বেশি পরিমাণে অভিবাসী পরিবহনের জন্য দায়ী। তবে ক্রেমলিন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।