Science & Tech

সৌরবায়ু: অরোরার আতুড়ঘর

সৌর আলোকমণ্ডলের ওপরের দিকে উষ্ণ প্লাজমার একটা ক্ষীণ ঢেউ ভাসতে দেখা যায়। এর নাম সৌর কোরোনা বা সোলার কোরোনা। এই কোরোনাকে কে তাপ প্রদান করে তা এখনও গবেষণার বিষয়। তবে প্রক্রিয়াটি সূর্যপৃষ্ঠে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের প্রভাব হতে পারে।
প্রতি ঘণ্টায় কোরোনা বিলিয়ন টন শক্তিকণা মহাকাশের শূন্যে পাঠায়।

ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও ভারী আয়নকে বলা হয় শক্তিকণা। মিলিয়ন কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ‘সৌরবায়ু’ প্রবাহিত হয় সূর্যের চারদিকে। এমন ভয়ানক গতিতে সৌরশিখা স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।

ফলে সৌরবায়ুতেই আছড়ে পড়ে, বিস্ফোরিত হয়। এই সৌরবায়ু সূর্য থেকে পৃথিবীও ঘুরে যেতে পারে। উচ্চ গতি থাকায় মাত্র কয়েকদিনেই সেই সফর সম্ভব হয়।

আমাদের সৌভাগ্য যে পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ চৌম্বকক্ষেত্র এই বিপজ্জনক বায়ু থেকে পৃথিবীকে বাঁচায়।

চৌম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে পৃথিবী বা উপগ্রহের কোনো ক্ষতি না করেই ফিরে যায় এই সৌরবায়ু। তা না-হলে ধ্বংস হয়ে যেত পৃথিবীতে জীবনের চিহ্ন। চাঁদও টিকে থাকতে পারত না। 

ফিরে যাওয়া বা বিচ্যুত সৌরবায়ু চার্জযুক্ত কণায় পরিণত হয় চৌম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে। চার্জিত কণাগুলো পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সাথে পাক খেয়ে মেরুর দিকে চলে যায়।

সেখানে সৌরবায়ু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সাথে সংযোগে রঙিন উজ্জ্বল আরোরা বোরিয়ালিস (উত্তরের আলো) বা আরোরা অস্ট্রালিস (দক্ষিণা আলো) তৈরি করে। 

আরোরা ধীরে ধীরে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বল হয়। সময়ের সাথে তা আরও প্রসারিত হয় নিরক্ষরেখা বরাবর। যখন সূর্য সক্রিয় থাকে ও সৌরবায়ু তীব্র হয় তখন এই ঘটনাগুলো ভালোমতো ঘটে। অনেক ধূমকেতুর প্লাজমাময় পুচ্ছ গঠনেও সৌরবায়ু সহায়তা করে।


ইতিহাস
আলো ও তাপ নির্গত করা সূর্যের অন্যতম কাজ। অন্তত পৃথিবীতে বসে আমরা তা-ই ভাবতে পারি। কিন্তু আদতে তা নয়। এটি সৌরবায়ুও নির্গত করে। বলা যায় বমি করে দেয়। যা চার্জযুক্ত কণার সুপারসনিক বিস্ফোরণে ক্রমাগত পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সাথে টক্কর খায়।

পরিমণ্ডল
সৌর জ্যোতির্বিজ্ঞানী রিচার্ড ক্যারিংটন ১৮৫৯ সালে সূর্যের পৃষ্ঠে আলোর উজ্জ্বল শিখার আভা দেখতে পান। বিশাল এই সৌরশিখাটি একটা সৌরবায়ুর ঝাপটা শুরু করে, একদিন পর পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে বিধ্বস্ত হয়েছিল সেটি। তৈরি করেছিল আরোরা। এই আরোরার আলো সংবাদপত্র পড়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। একই সাথে টেলিগ্রাফ অপারেটরদের অবাক করে দেয়। তাঁদের আঙুলে বিদ্যুতের ঝলকানি বা স্পার্ক বয়ে যায়। এই অবস্থাটিকে বলা হয় ‘ক্যারিংটোন ইভেন্ট’। যা ১৮৫৯ সালে হয়। এমন তীব্র আরেকটি ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় যদি ফের আঘাত হানে তাহলে আমাদের আধুনিক টেলিযোগাযোগ ও পাওয়ার গ্রিডে ভয়ানক বিপর্যয় এনে দিবে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button