Bangladesh

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় আ.লীগ, বেকায়দায় শরিকরা

পূর্ণ নিশ্চয়তা চায় শরিকরা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইস্যুতে আটকে আছে ১৪ দলের আসন সমঝোতা। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ধরে রাখতে এবং অংশগ্রহণমূলক ভোটের স্বার্থে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় আওয়ামী লীগ। এতেই বেকায়দায় পড়েছে শরিকরা। 

শরিকদের দাবি-সমঝোতার আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে না। এ বিষয়ে পূর্ণ নিশ্চয়তা চায় তারা। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আসন নিয়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক একাধিক বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলেছেন তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত মেলেনি।

এ বিষয়ে হাইকমান্ড থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে— দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসতে বলবেন না। দলীয় প্রার্থীদেরও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনেই জিতে আসতে হবে। এমন ঘোষণায় প্রায় প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগের এক বা একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী নেমেছেন ভোটের লড়াইয়ে। শরিকদের প্রত্যাশানুযায়ী আসন দিতে হলে অনেক প্রার্থীকে বসতে বা নিষ্ক্রিয় থাকার নির্দেশ দিতে হবে। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে ভোটের মাঠে সেটা কি ধরনের প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। অথচ কিছু আসন ছাড়তেই হবে। এ অবস্থায় স্বতন্ত্র বাধা কাটাতে কী কৌশল নেওয়া হবে তা নিয়ে চলছে পর্যালোচনা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করব এটা চূড়ান্ত। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কাজ চলছে। আশা করি এটা হয়ে যাবে। নিজেদের ভোটের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু হয়েছে। এটা চলছে।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। তবে আমরা আশা করছি শিগগিরই এটা হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসাবে না। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য তারা এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো কিছু হয়নি। সমঝোতার বাইরে আসনগুলোতে নিজেদের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে কেউ কিছু বলেনি। আমাদের যারা ভোট করার তারা ভোট করবে।

১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, জোটগত নির্বাচনের বিষয়ে আমরা একমত ছিলাম এবং আছি। আসন সমঝোতা নিয়েও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে, আশা করি এটা শিগগিরই চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

এদিকে ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথা বললেও ভেতরে ভেতরে তাদের মধ্যে এ নিয়ে হতাশাও রয়েছে। একই সঙ্গে তাদের প্রধান চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কারণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেষ পর্যন্ত আসন সমঝোতার পর নৌকার প্রার্থিতা বদল হলেও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থেকে যাবেন। এতে ভোটের মাঠে তারা বড় সমস্যায় পড়বেন। ছাড় পাওয়া আসনগুলোতেও সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়ে আসা নিয়ে সংশয় আছে তাদের। এ কারণে আসন সমঝোতার সঙ্গে সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরানোর নিশ্চয়তাতেও জোর দিচ্ছেন তারা।

তবে শরিকদের দাবি থাকলেও এ বিষয়ে এখনো তাদের আশস্ত করেনি আওয়ামী লীগ। সোমবার গণভবনে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে এবারের নির্বাচনও জোটগতভাবে করার বিষয়ে ঐকমত্যের কথা জানান জোটের শরিকরা। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা জোটগতভাবে নির্বাচন করবেন। তবে কাউকে বসিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হোক। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে হবে। আওয়ামী লীগের যারাই স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছে তাদেরও বসিয়ে দিচ্ছি না। কাজেই কেউ বসবে না।

এর পরদিন মঙ্গলবার বিকালে জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে ফের বৈঠক করেন শরিক দলের কয়েক শীর্ষ নেতা। ওই বৈঠকেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানান শরিকরা। বৈঠক থেকে বেরিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, যেখানে জোটের প্রার্থী আসবে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উঠে যাবে। জোটের প্রার্থীর আসনে আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বিভ্রান্তি দেখা দেবে। সে বিষয়টি আওয়ামী লীগ বিবেচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ প্রতিযোগিতামূল নির্বাচন চায়। সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসাতে গেলে, এটা তিনশ আসনেই করতে হবে। বেছে বেছে করা যাবে না। এতে দলের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

জানতে চাইলে শরিক দলের এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে খুব বেশি জটিলতা নেই। আমরা কোন কোন আসন চাই, সেটা আওয়ামী লীগকে জানিয়েছি, আওয়ামী লীগও আমাদের কোন কোন আসন দেবে সেটাও মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে। যাদের যে আসনগুলো দেওয়া হবে, তারাও সেটা ভালো করেই জানেন। এখন মূল সমস্যা হলো আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে। কারণ জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ। তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে শরিক দলের নেতাদের বিজয়ী করা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ তখন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের জোটের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামানো কঠিন হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor