১০০ টাকার নীচে সবজি মেলাই দুষ্কর
ঢাকার সবজি ব্যবসায়ীদের তথ্য বলছে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের ভারী বর্ষণের পর থেকেই সবজির দাম ব্যাপকভাবে চড়েছে।
বেগুন, করলা, ঝিঙা, ধুন্দল, পটল, কচুর লতি, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, চিচিঙ্গা- শরতের এই সবজিগুলোই এখন বাজারে মিলছে। এই তালিকায় একশ টাকার নিচে বাজারে কোন সবজি বিক্রি হচ্ছে তা খুঁজতে ক্রেতাকে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ঢাকার সবজি ব্যবসায়ীদের তথ্য বলছে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের ভারী বর্ষণের পর থেকেই সবজির দাম ব্যাপকভাবে চড়েছে। লম্বা বেগুনের দাম ৬০-৭০ টাকা থেকে এই ক’দিনে বেড়ে এক লাফে একশ টাকা ছুঁয়েছে। গোলাকৃতির বেগুন কিনলে কেজি প্রতি আরও ২০-৪০ টাকা বাড়তি খরচ করতে হবে।
করলা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১০০-১২০ টাকা, ধুন্দল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা এমনকি কচুর লতিরও একই অবস্থা। ছোট আকারের লাউ কিনলে অবশ্য ৭০-৮০ টাকায় মিলছে। ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পটল।
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবচেয়ে সস্তা সবজির তালিকায় থাকা প্রতি কেজি পেঁপের দাম ছিল ২০-২৫ টাকা। এই সবজিটির দামও এখন ৪০ টাকা। ১২-১৫ টাকার একমুঠো শাকও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়।
রামপুরা বাজারে সবজি কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবি শরিফুল ইসলম জানালেন, ‘সবজি খাওয়াটাও এখন সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। একশ টাকার নিচে সবজি পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।’
এদিকে সরকার ডিম, আলু, পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। উল্টো ৮০-৮৫ টাকা থেকে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে আবারও ১০০ টাকায় উঠেছে। ব্রয়লার মুরগির ডিমের ডজন ১৪৫-১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০-১৫৫ টাকায় উঠেছে। আলু ৫০ টাকার নিচে নেই। লাল আলু আবার ৬০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের সবজির পাইকারী বিক্রেতা মো. মোস্তফা বলেন, সবজির সরবরাহ কমে গেছে। ভারী বৃষ্টির পর অনেকেই পুরনো সবজির ক্ষেত ভেঙ্গে শীতের সবজি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ কারণে দাম বেশি।
বাড্ডার সবজি বিক্রেতা ফরিদ বলেন, বেগুনের সরবরাহ একেবারেই কম। অল্প যা পাওয়া যাচ্ছে তারও দাম চড়া। চড়া দাম দিয়ে পোকা সহ বেগুন কিনতে হচ্ছে, বেশি দামের কারণে বিক্রি করাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, এ বছর শরতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা যতো ছিল তার চেয়ে বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। ১.২২ লাখ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত জমির পরিমাণ ১২৯ শতাংশ। তবে এর মধ্যে ৭২ হাজার হেক্টর জমির সবজি ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি। অর্থাৎ প্রায় ৪৬ শতাংশ জমির সবজি শেষ।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকেই সবজির ফলন তুলে আমন চাষ করেছে। আবার অনেকেই শীতকালীন সবজির প্রস্তুতি নিচ্ছে। যে কারণে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গ্রীষ্মে এমনিতেই সবজির উৎপাদন কম। শীতকালে যেখানে প্রায় ৩৪.৫৭ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়, সেখানে গ্রীষ্মে সবজি উৎপাদন ১৫ লাখ মে. টনের কম। শরতের এই সবজির উৎপাদনও গ্রীষ্মের উৎপাদনে যোগ করা হয়।