Bangladesh

‘১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যবসায়ী এবারের নির্বাচনে, এক মন্ত্রীর বিদেশে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে: টিআইবি

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ কমলেও ধনী-কোটিপতি আর ব্যবসায়ীদের প্রার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে অনেক। গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবসায়ী অংশ নিচ্ছে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে।

দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের দেয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে আর্ন্তজাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বলছে, নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের ২৭ ভাগই কোটিপতি।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রীদের মধ্যে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সীর। আর ১৫ বছরের মধ্যে সম্পদ বেড়েছে খাদ্যমন্ত্রীর।

নাম গোপন রেখে এক মন্ত্রীর সম্পদের হিসাব তুলে ধরে টিআইবি বলছে, দেশের বাইরে ওই মন্ত্রীর দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও তা প্রকাশ করা হয়নি হলফনামায়।

তবে টিআইবির এই প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন বলছে, হলফনামার তথ্য দেয়া একটা বিধান। এতে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলেও কিছু করার নেই নির্বাচন কমিশনের।

বেশিরভাগই ব্যবসায়ী
আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করছে তাদের বেশিরভাগের প্রার্থীরই মূল পেশা ব্যবসা। হলফনামা বিশ্লেষণ করে টিআইবি দেখতে পেয়েছে সেখানে সর্বোচ্চ ৫৭ শতাংশই ব্যবসায়ী রয়েছেন।

অন্য পেশাজীবিদের মধ্যে যারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, তাদের মধ্যে নয় দশমিক ১৭ ভাগ আইনজীবি, ৭ দশমিক ৮১ ভাগ কৃষিজীবি, ৫ দশমিক ১৬ ভাগ চাকুরিজীবী।

আরো রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও গৃহস্থালির কাজের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা। কিন্তু পেশাদার রাজনীতিবিদের হার মাত্র দুই দশমিক ৮৬ ভাগ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘দেশে স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এখন দেখা যাচ্ছে না। যারা ব্যবসায়ী হিসেবে রাজনীতিতে আসেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তারা মূলত রাজনীতিটাকে তাদের ব্যবসায়ের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন।’

‘যারা নির্বাচনে আসেন, এটা তাদের বিনিয়োগ। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে চান মূলত মুনাফা অর্জন করার জন্যই,’ বলছিলেন ইফতেখারুজ্জামান।

আয় ও সম্পদ বৃদ্ধিতে শীর্ষে মন্ত্রীরা
হলফানামা বিশ্লেষণ করে টিআইবি প্রতিবেদন বলছে, মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে মন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সির।

তার আয় বেড়েছে দুই হাজার ১৩১ শতাংশ। এর পরই রয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

এই তালিকায় শীর্ষ দশের মধ্যে আরো আছেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নাম।

আর ৫ বছরের মধ্যে যে ১০ জন মন্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে তাদের মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নাম। সম্পদ বৃদ্ধির এই তালিকায় দশজনের মধ্যে ছয়জনই প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী।

হলফনামা বিশ্লেষণ করে টিআইবি’র দেয়া তথ্য বলছে, গত তিন মেয়াদের ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ অর্জন করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। ১৫ বছরের মধ্যে সম্পদ বৃদ্ধির এই তালিকায় রয়েছেন তিনজন প্রতিমন্ত্রী ও সাত জন মন্ত্রী।

আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বিবিসিকে বলেন, ‘মন্ত্রী পদে থেকে ব্যবসা করা সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ। মন্ত্রীর পদে থেকে বাড়ি ভাড়া ছাড়া কোনো ধরনের ব্যবসায়িক আয় তারা করতে পারেন না।’

‘মন্ত্রীরা যদি হলফ করে বলেন তাদের আয় বেড়েছে, সম্পদ বেড়েছে তাহলে এটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। এটা সংবিধানের ১৪৭ ধারার ৩ উপধারায় স্পষ্ট করে বলা আছে,’ জানান ইফতেখারুজ্জামান মালিক।

এক মন্ত্রীর বিদেশে অঢেল সম্পত্তির খোঁজ
বাংলাদেশ সরকারের একজন মন্ত্রীর বিদেশে ২,৩১২ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। কিন্তু সেই বিষয়টি হলফনামায় উল্লেখ নেই জানিয়ে টিআইবি বলছে, সম্পত্তির যে হিসাব ওই মন্ত্রী দিয়েছেন তা সত্যের ধারে কাছেও নয়।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, টিআইবির নিজস্ব অনুসন্ধানে দেশের বাইরে ওই মন্ত্রীর ১৬ কোটি ৬৪ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগের খবর তাদের কাছে রয়েছে। বাংলাদেশী টাকায় যা দুই হাজার তিন শ’ বারো কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সাল থেকে একটি দেশে ওই বিনিয়োগ শুরু করেন ওই মন্ত্রী। এরপর ২০২১ সালে গিয়ে এই সম্পদ বেড়ে ৩ দশমিক ২২ কোটি পাউন্ডে দাড়িয়েছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, টিআইবির এই তথ্য একদম নির্ভরযোগ্য সুত্রে পাওয়া। যেহেতু ওই মন্ত্রী এই তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেননি তাই তা প্রকাশ করছেন না তারা।

তবে যদি, সরকার, নির্বাচন কমিশন, দুদক কিংবা রাজস্ব বোর্ড এই তথ্য চান তাহলে তাদেরকে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইফতেখারুজ্জামান।

হলফনামার তথ্য কী কাজে লাগে?
দুই হাজার আট সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের হলফনামা জমা দেয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করে নির্বাচন কমিশন। প্রথমদিকে এই তথ্য প্রকাশ করা না হলেও পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, হলফনামার উদ্দেশ্য ছিলো এটা দেখে জনগণ বা ভোটাররা যেন প্রাথীদের সম্পর্কে জানতে পারে। যাতে এটা দেখে ভোটাররা বুঝতে পারে কোন প্রার্থী যোগ্য, কে কোন উপায়ে সম্পদ অর্জন করছে। সেই অনুযায়ী তারা প্রার্থীকে বেছে নেয়া বা প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আইন বিশ্লেষক ড. শাহদীন মালিক বলছেন, ‘প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা দিচ্ছেন, সেখানে অনেক সময় ভুল তথ্য দেন। দুদক চাইলে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব চাইতে পারে। আইন অনুযায়ী, তিন সপ্তাহের মধ্যে হিসাব না দিলে অলরেডি অপরাধ সংগঠিত হয়ে যায়।’

‘দুদক আইনের ২৬ ও ২৭ ধারার কথা উল্লেখ করে শাহদীন মালিক জানান, দুদকের অভিযুক্তদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রে সফল হয়েছে এই ২৬ ও ২৭ ধারার মামলা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আইনের এই ধারা রাজনৈতিক সমালোকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।

কী ক্ষমতা আছে নির্বাচন কমিশনের?
নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা যে তথ্য দেন তা হলফনামায় যুক্ত থাকে। সেগুলো প্রকাশও করা হয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে। কিন্তু এই তথ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন কী করতে পারে?

নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সরাসরি কিছু করতে পারে না। যেহেতু সে শপথ করে তথ্য দিচ্ছে ভূল তথ্য দিলে সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে। মিথ্যা বলার অপরাধে।’

উদাহরণ হিসেবে মো: আলমগীর বলছেন, ‘আয় নিয়ে ভুল তথ্য দিলে ইনকাম ট্যাক্সওয়ালারা মামলা করতে পারবে। সম্পত্তির হিসাবে বা তথ্য গোপন করলে দুদক মামলা করতে পারবে। তখন কর্তৃপক্ষ মামলা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।’

কিন্তু আইন অনুযায়ী ইসির কিছু করার নেই বলেও জানাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d