Bangladesh

২৫০০ কোটি টাকার বাজার হস্ত ও কারু শিল্পের

দেশে হস্ত ও কারু শিল্পের দুই হাজার ৪৩০ কোটি টাকার বাজার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে এগিয়ে আছে বাঁশ ও বেত শিল্প। অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই খাতে; সংখ্যায় যা ৩২ হাজার ২২৪টি, অর্থাৎ মোট প্রতিষ্ঠানের ৪৮.৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা হস্ত ও কারু শিল্প জরিপ ২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

মূলত বিবিএস সিঙ্গল-স্টেজ স্ট্যাটিফাইড র‌্যান্ডম স্যাম্পলিং (ক্যাপি) পদ্ধতির মাধ্যমে সাত হাজার ৩১০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয়।

দেশে বর্তমানে হস্ত ও কারু শিল্পের মোট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৩ হাজার ৫৪২টি।

এর মধ্যে পরিবারভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ৭১ হাজার ৭৫৯ এবং মালিকানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক হাজার ৭৮৩টি।
বিবিএসের জরিপ বলছে, হস্ত ও কারু শিল্পে বাঁশ ও বেতের পর রয়েছে মৃৎপাত্র ও টেপা পুতুল শিল্প, যা ১৯.৫ শতাংশ। নকশি কাঁথাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮.৮ শতাংশ. কুরুশ কাঁটার পণ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭.৯ শতাংশ ও শীতল পাটির কার্পেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪.৯ শতাংশ। এই খাতে মোট শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন এক লাখ ৪২ হাজার ৪৪৬ জন।

এর মধ্যে পুরুষ ৬২ হাজার ১১ জন ও নারীর সংখ্যা ৮০ হাজার ৪৫৩ জন। পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৪২ জন বেশি।

জরিপে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়নি। এর কারণ হিসেবে তারা বলছে, ঋণের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হচ্ছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকা।

জরিপের তথ্য মতে, প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ নিয়েছে ২৯.৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

কোনো ধরনের ঋণ নেয়নি ৭০.১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। ৮৬.৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে এনজিও থেকে। ব্যাংক থেকে ৭.৬ শতাংশ, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪.৭ শতাংশ, এসএসই ফাউন্ডেশন থেকে ৪.৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে। বেসরকারি ফাউন্ডেশন থেকে ১.৯ শতাংশ ও জয়িতা ফাউন্ডেশন থেকে ০.১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে।

হস্ত ও কারু শিল্প নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাজ করেন উদ্যোক্তা নবনী চৌধুরী। তিনি তিন বছর ধরে ‘নবনীস প্লেস’ নামের একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেননি। এ ব্যাপারে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উদ্যোক্তা হিসেবে ঋণ দেওয়ার মতো কোনো এজেন্সি বা সংস্থা পাইনি। সর্বোপরি লোন নিতে গেলে অনেক ঝামেলা হয়। তাই লোন নেওয়ার চেষ্টা করিনি।’

প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে গিয়ে বিবিএস বলছে, জরিপকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট কর্মসংস্থান ব্যয় ৯৯৬ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঁচামাল বাবদ ব্যয় ৭০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট তিন হাজার ৬০৯ কোটি টাকার স্থায়ী সম্পদ রয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্যমূল্য দুই হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থানের ব্যয় গড়ে ১৩৫ কোটি টাকা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, হস্ত ও কারু শিল্প বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত। তবে এই খাতের নানা সংকটের মধ্যে একটি হলো ঋণ না পাওয়া। দু-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশির ভাগ ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে আগ্রহী থাকে না। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো বড় হতে পারছে না।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, সহজ শর্তে ঋণ একটি জনপ্রিয় শব্দ, যা বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন। দেখা যাক, এখন ডিজিটাল ব্যাংক আসছে, তারা হয়তো উদ্যোক্তাদের জন্য ভালো কিছু করবে।

হস্ত ও কারু শিল্পের চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবিএস তাদের জরিপে বলছে, মোটা দাগে পাঁচটি চ্যালেঞ্জের কথা। জরিপকৃত প্রতিষ্ঠানের ৮২.২ শতাংশ বলছে, তাদের পুঁজির অভাব রয়েছে। এই খাতে ক্রেতার অভাবের কথা বলছে ৪৬.৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। পণ্য উৎপাদন করতে গিয়ে কাঁচামালের অভাবের কথা বলছে ২৪.৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আর বিপণনজনিত সমস্যার কথা বলছে ৩৫.৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button