Bangladesh

৫০০ কোটির হিসাবরক্ষণ কর্তা!

অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ-বিদেশে হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে আলোচনায় এসেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মচারী আফজাল হোসেন। দুর্নীতির মামলায় যিনি এখন কারাগারে। আলোচিত এই আফজালের মতো স্বাস্থ্যের আরেকজন সম্পদশালীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। তার নাম মো. ফয়েজ আলী সুমন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শোয়াইব হোসেন যার অনুসন্ধান করছেন।

দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফয়েজ আলী সুমনের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়ে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০২২ সালের ৮ মার্চ আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদকের হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শোয়াইব হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র চেয়ে গত বছর ২২ মে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, রেজিস্ট্রার অফিস ও ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠান। চিঠিতে ফয়েজ আলী সুমন, তার স্ত্রী হাজেরা আক্তার পলি, ছেলে মো. ফতেহ আলী, বোন সামসুন্নাহার ও নুরুন্নাহার এবং বোনের স্বামী মোহাম্মদ আবদুল হামিদের নামে থাকা ফ্ল্যাট, প্লট, বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালান্সসহ স্থাবর-অবস্থাবর সব সম্পদের তথ্য দিতে বলা হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে কিছু তথ্য দুদকের কাছে জমা হয়েছে। ফয়েজ আলী সুমনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক শোয়াইব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দুদকে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়, ফয়েজ আলী ২০১০ সালে জুনিয়র মেকানিক কাম পাম্প অপারেটর পদে মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। সেখানে বছরখানেক চাকরির পর প্রেষণে মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন অফিসে বদলি হন। এরপর সেখান থেকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে যোগদান করেন। আর এ হাসপাতালে এসেই স্বাস্থ্য খাতের বিতর্কিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর সঙ্গে পরিচয় হয় ফয়েজ আলীর। তখন থেকেই তার দুর্নীতির ডালপালা চারদিকে বিস্তার হতে থাকে। একসময় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পদ বাগিয়ে নেন। জুনিয়র মেকানিক একটি টেকনিক্যাল পদ। চাকরির শর্ত অনুযায়ী জুনিয়র মেকানিক কাম পাম্প অপারেটর পদ থেকে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই। অথচ তিনি বিধিলঙ্ঘন করে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে পদোন্নতি পেয়েছেন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হওয়ায় বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধকালে কমিশন নিতে শুরু করেন। আর সেই কমিশনের টাকা ভাগবাটোয়ারা হয় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে।

অভিযোগ রয়েছে, ফয়েজ আলী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হওয়ায় সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক বা প্রতিনিধি তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। যার সুযোগে বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। একপর্যায়ে তিনিও অন্যের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে নিজেই টেন্ডারে অংশ নিতে থাকেন। পাশাপাশি মৌলভীবাজারে মিঠুর পক্ষে কাজ করতে থাকেন। একদিকে প্রভাবশালী ঠিকাদার মিঠুর সহযোগী, অন্যদিকে নিজেই ঠিকাদারিতে জড়িয়ে অল্প সময়েই বিপুল অর্থের মালিক হয়ে যান।

দুদকে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়, হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ফয়েজ আলী, স্টুয়ার্ড রুহুল আমিন রুহিন ও স্টোরকিপার মোশাররফ হোসেন মিলেমিশে পীযূষ কান্তি নামে এক ঠিকাদারের প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে ১০-১২ বছর ধরে হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করেন। সপ্তাহে চার দিন খাসির মাংস ও তিন দিন রুই মাছ দেওয়ার কথা থাকলেও ফার্মের মুরগি ও কার্প জাতীয় মাছ দেওয়া হয় বেশি। হাসপাতালে সবসময় ২৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে না। কিন্তু রোগী কম থাকলেও তারা ২৫০ জনেরই খাবার বিল উত্তোলন করেন। মাসে খাবার বিল হিসেবে ১২ থেকে ১৫ লাখ নিলেও খাবার দিচ্ছেন তার চেয়ে অনেক কম টাকার। তারা প্রতি মাসে শুধু খাবার বিল থেকেই ৮ থেকে ১০ লাখ লোপাট করে থাকেন। করোনা সংক্রমণের সময় ১০০-১২০ জনের মতো রোগী ভর্তি থাকলেও এই চক্র ২৫০ জন রোগী দেখিয়ে বিল উত্তোলন করেছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রতি বছর হাসপাতালটিতে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকার এমএসআর সামগ্রী কেনা হয়। এসব পণ্য সরবরাহ করেন স্থানীয় দুজন যুবলীগ নেতার দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ফয়েজ আলীর। এ ছাড়া হাসপাতালের কাপড় ধোলাইয়ের কাজ করেন জগ্ননাথপুরের নুরুল হক ও উজ্জ্বল। তাদের সঙ্গেও শেয়ারে (মুনাফা ভাগাভাগি) কাজ করেন ফয়েজ আলী।

ফয়েজ আলী ও তার দুই সহযোগীর অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় তিনজন ব্যক্তি। ওই অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত বছর ৮ জুন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিশ্বম্ভরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে গত বছর ৩০ নভেম্বর ফয়েজ আলীকে সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং রুহুল আমিন রুহিনকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে বদলি করা হয়। বদলির আদেশে তাদের তিন দিনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়। বদলির আদেশে আরও বলা হয়, উল্লিখিত সময়ের মধ্যে যোগদানে ব্যর্থ হলে চতুর্থ দিন থেকে সরাসরি চাকরি থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বলে গণ্য করা হবে। কিন্তু তারা দুজন বদলি আদেশের বিরুদ্ধে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ জারি করিয়ে মৌলভীবাজার হাসপাতালেই থেকে যান।

অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ফয়েজ আলী সুমনের মোবাইল ফোনে গত কয়েক দিনে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d