Bangladesh

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কে জয়ী হবে তা স্পষ্ট, তবে রয়েছে অনেক বাঁক

ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া এবং যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি অন্তত ৪০টি দেশে নির্বাচন হতে চলেছে ২০২৪ সালে। সম্ভবত ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভোটদানের  সাক্ষী হতে চলেছে এ বছরটি। এর মধ্যে কয়েকটি নির্বাচনে কঠিন লড়াই হবে, যার ফলাফল কয়েকটি প্রান্তিক এলাকার উপর নির্ভর করবে। অন্যত্র, ফলাফল আগে থেকেই স্পষ্ট। তবে দলগুলির মধ্যে একটি শক্তিশালী প্রতিযোগিতা হতে পারে। প্রায় সর্বত্রই, প্রার্থীরা  ভোটারদের কাছে  যে প্রতিশ্রুতি দেন, যে আশ্বাস দেন-  নির্বাচনের সময় তার ওপরে ফোকাস থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যায়। কারণ বিরোধগুলি তার আগে সমাধান করা হয় -এমনকি সাময়িকভাবে হলেও।

তবে একটি নির্বাচন আছে, যেখানে এর কিছুই হবে না। বাংলাদেশিরা ৩০০ জন সংসদ সদস্য এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বেছে নিতে ৭  জানুয়ারি ভোট দেবেন। পরিস্থিতি যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানে প্রতিযোগিতা বা ফলাফল নিয়ে আলোচনা করার কিছু নেই।

৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ২৬৩টি আসন পাবে আওয়ামী লীগ, আর বাকিগুলো যাবে জোটের শরিকদের কাছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এই আপাতদৃষ্টিতে শক্তিশালী ম্যান্ডেট প্রতিফলিত করে যে- নির্বাচনটি যথাযথ  হবে না। কারণ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে সমস্ত বিরোধী দল নির্বাচনবর্জন করছে। নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ আরও অস্থিতিশীলতার মধ্যে নিমজ্জিত হতে পারে। দেশের মানুষের জীবন সংকটের মুখে পড়তে পারে। 

কীভাবে দেশ এই ভয়াবহ পর্যায়ে এলো?
একেবারে শুরু থেকেই শুরু করা যাক- আর বাংলাদেশের মতো এরকম ‘অশুভ’  সূচনা খুব কম দেশই প্রত্যক্ষ করেছে। ১৯৬০-এর দশকে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি ছিলো বাংলাদেশ। এর মধ্যেই ১৯৭০ সালের নভেম্বরে ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ে  দেশের বিশাল সংখ্যক মানুষ মারা যান। ১৯৭১  সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি ধ্বংসাত্মক স্বাধীনতা যুদ্ধের সাক্ষী ছিলো দেশটি  (এই যুদ্ধ অর্থনীতির এক-পঞ্চমাংশকে ধ্বংস করেছিল এবং ২৫ মিলিয়ন লোককে বাস্তুচ্যুত করেছিল);যুদ্ধোত্তর অর্থনৈতিক পতন আরো মারাত্মক ছিলো।  জিনিসপত্রের দাম চারগুণ বেড়ে যায়  এবং ১৯৭৪ সালের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে মারা যান। সেইসঙ্গে  ১৯৭৫ সালে বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট, তার পরিবার,সিনিয়র রাজনীতিবিদ এবং অনেক সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়।তবুও ১৯৭৫ সালের পর থেকে পরিস্থিতি মোড় ঘুরতে শুরু করে। পরবর্তী সরকারগুলি, সামরিক শক্তি এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের দ্বারা পরিচালিত ছিলো। একটি বাস্তববাদী সরকার ছিলো। দুর্ভিক্ষ এড়াতে তারা একাধিক পদ্ধতি  অবলম্বন করে। আরও অভ্যুত্থান, হত্যাকাণ্ড এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বন্যা , ঘূর্ণিঝড় এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ধাক্কা সত্ত্বেও, দেশটি কেবল দুর্ভিক্ষ এড়ায়নি বরং প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে ।

বাংলাদেশ ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে নির্বাচনী গণতন্ত্রে একটি উত্তরণ ঘটে চারটি তুলনামূলকভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে (১৯৯১, ১৯৯৬,২০০১ এবং ২০০৮), যেখানে সমস্ত প্রধান রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এবং খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- প্রত্যেকে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ভোটের নেতৃত্ব দিয়ে পর্যায়ক্রমে  ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ায় দেশের রাজনীতি অনেকটাই শান্ত ছিল। প্রজাতন্ত্রের একক প্রকৃতির কারণে নির্বাচনগুলি হয়ে ওঠে তিক্ত লড়াইয়ের প্রতিযোগিতা। পরিণতি নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর অফিসে কেন্দ্রীভূত, একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেখানে প্রতিষ্ঠানের থেকে ব্যক্তি বড় এবং নিহত দুই প্রেসিডেন্টের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল। ফলাফলকে প্রভাবিত করার জন্য ক্ষমতাসীনদের রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী ইন্ধন ছিল,দেশের রাজনৈতিক শ্রেণী নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। একটি বিকাশমান মিডিয়া, সুশীল সমাজ এবং একটি দৃঢ় বিচার বিভাগ ধারাবাহিক সরকারগুলির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলো । তাদের তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও উভয় পক্ষই ১৯৭০-এর দশকের প্রথম দিকের অস্থিরতার পুনরাবৃত্তি এড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।

১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে অর্থনীতির বিকাশ শুরু হয়, গড় প্রকৃত আয় (মুদ্রাস্ফীতির জন্য সামঞ্জস্য) প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পায় এবং কিছু ক্ষেত্রে তা  ভারত বা পাকিস্তানের তুলনায় বেশি। বিভিন্ন সামাজিক সূচকও সামঞ্জস্যপূর্ণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২০১০-এর দশকের গোড়ার দিকে, বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করতে শুরু করেন যে, বাংলাদেশ এখনও তুলনামূলকভাবে কম মাথাপিছু আয় থেকে  সামাজিক সূচকে অনেক বেশি উন্নতি করেছে।এই প্রেক্ষাপটে ২০২১ সালে যখন দেশটি তার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করে তখন ‘বাংলাদেশের অলৌকিক উন্নয়ন’ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী মিডিয়া কভারেজের আধিক্য ছিল। যাইহোক, এই নিবন্ধগুলি বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেলের ফাটলগুলিকে সামনে আনতে শুরু করে  যা আগের দশকে দেখা দিতে শুরু করেছিল। গত কয়েক বছরেএই ফাটলগুলি আরো বিস্তৃত হয়েছে। 

বাংলাদেশের অর্থনীতি তোলপাড় হতে শুরু করেছে এবং এর উন্নয়ন মডেল ধাক্কা খেতে শুরু করেছে। গিনি কোয়েফিশেন্ট (আয় বা সম্পদের বণ্টনে বৈষম্যের মাত্রার জন্য একটি সূচক)২০২২ সালে ০.৫-এ পৌঁছেছে- একটি প্রান্তিকতা যার বাইরে অসমতাকে গুরুতর বলে মনে করা হয়। এই বৈষম্য  ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকারের বৈশিষ্ট্য। ২০০০ সালের  শেষের দিকে বাংলাদেশ তার ক্রমবর্ধমান যন্ত্রণার নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছিল। ক্রমবর্ধমান আয়ের অর্থ ছিল বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি, কারণ পরিবারগুলি তাদের মোবাইল ফোন এবং গ্যাজেটগুলি চার্জ করতে চায়, যখন কারখানাগুলিকে তাদের রপ্তানি চাহিদা মেটাতে ২৪ ঘন্টা চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মোটর গাড়ির রাখার সামর্থ্য হয়। কিন্তু দেশের অবকাঠামো গতিশীল ছিল না। দেশে আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র, সড়ক, সেতু ও রেলপথের প্রয়োজন ছিল।

সমস্যা ‘অর্থায়ন’ ছিল না। বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিদেশী সরকারগুলি প্রকল্পগুলিতে অর্থায়ন করতে ইচ্ছুক ছিল। অবকাঠামো প্রকল্পগুলির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো  দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তাব ও বিপুল পরিমাণ অর্থ। বিনিয়োগকারীদের নিশ্চিত হওয়া দরকার ছিলো যে প্রকল্পগুলি রাজনৈতিক পরিবর্তনেও  টিকে থাকবে। এছাড়াও, রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার নিশ্চয়তা থাকলে, এই বিনিয়োগগুলি বড় রিটার্ন তৈরি করে। দেশী ও বিদেশী বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নির্ধারিত আদর্শ সমাধান ছিল এই প্রকল্পগুলি পরিচালনা করার জন্য একটি স্বচ্ছ আইনি কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা উচিত। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরে শেখ হাসিনা একেবারেই ভিন্ন পন্থা নেন। দেশের ক্রমবর্ধমান অলিগার্চরা অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলি থেকে তাদের বেতন সর্বাধিক করতে চেয়েছিল। হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্প এবং তদারকি ছাড়াই অন্যান্য ব্যবসায়িক সুযোগ পাওয়ার বিনিময়ে অলিগার্চরা হাসিনাকে তার রাজনৈতিক খেলায় সমর্থন দেবার  প্রতিশ্রুতি দেয়।

যেমন বিদ্যুতের কথা ধরুন। চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দ্রুত ভাড়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। কিন্তু শর্তাবলী এমন ছিল যে এগুলি যেকোনো সময় বন্ধ করা যেতে পারে। ২০০৯ সালে পার্লামেন্ট একটি আইন পাস করে যা সরকারকে ক্ষমতা প্রদানের জন্য সাইন-আপকারী যেকোন সত্তাকে  অনাক্রমণ্যতা প্রদান করে, এই প্রকল্পগুলিতে পরবর্তী যে কোনো ত্রুটি ধরা পড়ুক না কেন।এমনকি সরকার আদানি গ্রুপের সাথে একতরফা পাওয়ার প্ল্যান্ট চুক্তি বা চীনের সাথে ৭.১ বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো ঋণ চুক্তির মতো মেগা-অবকাঠামো চুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। এদিকে  শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উপর বাংলাদেশের জনসাধারণের ব্যয় তার অনেক প্রতিবেশী দেশের তুলনায় অনেক কম ছিল।

যখন বৈশ্বিক পরিস্থিতি অনুকূল ছিল, তখনও দেশের কর্মক্ষম দরিদ্রদের আয় বাড়তে দেখা গেছে। কিন্তু ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে দুই অঙ্কের খাদ্যমূল্যের মূল্যস্ফীতি, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ধেকে নেমে যাওয়া, মুদ্রার শতকরা ৪০ ভাগের বেশি অবমূল্যায়ন, ৫ বিলিয়ন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও- দেশটি একটি অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ধাবিত হতে শুরু করে। দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য দায়ী হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার।জীবনযাত্রার চাপের কারণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সমাবেশে দেশের কর্মরত দরিদ্রদের  সংখ্যা বেড়েছে, প্রায়ই পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের কাছ থেকে মারাত্মক আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছেন তারা। এদিকে  সহিংস পুলিশী পদক্ষেপ সত্ত্বেও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ  দেশের পোশাক খাতকে গ্রাস করেছে।

৭ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ার কথা। দ্রুত অবনতিশীল অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে ভোটাররা সম্ভবত হাসিনাকে বিদায় জানাবেন। সুযোগ পেলেই বাংলাদেশি ভোটাররা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর তাদের সরকার পরিবর্তন করতে চান। ২০২৪  সালে ক্ষমতায় এলে হাসিনা টানা প্রধানমন্ত্রী হবেন। এটা ঠিক যে, পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে, নির্বাচন কখনোই অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। হাসিনার অধীনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র তলানিতে ঠেকেছে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ২০১১ সালে বাদ দেয়া হয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করলে আওয়ামী লীগের ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যান। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পরবর্তী নির্বাচনটি ঠিক ততটাই খারাপ ছিল, ভোটের দিন আগের রাতে সরকারি কর্মীরা ব্যালট বাক্সে ভরে দিয়েছিলেন।

গত এক দশকে, এই নির্বাচনী কারচুপি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরীক্ষার অঙ্গ হয়ে  উঠেছে। তার দুর্বল স্বাস্থ্য সত্ত্বেও,বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী  খালেদা জিয়া ২০১৮ সাল থেকে কখনো কারাগারে, কখনো গৃহবন্দী।  আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থাগুলির দাবি  খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশের একসময়ের সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো হয়রানি ও গোপন মামলার শিকার। উদাহরণস্বরূপ ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অগ্রদূত প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর ফাঁকির অভিযোগে জর্জরিত। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফটোগ্রাফারশহিদুল আলমসড়ক নিরাপত্তার জন্য স্কুলছাত্রদের প্রতিবাদকে সমর্থন করার কারণে কারাগারে বন্দি হন। সরকারের কঠোর আইন মিডিয়াকে দমিয়ে রেখেছে। শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ রাজনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতিটি আন্তর্জাতিক সূচকে পিছিয়ে গেছে। বিচারক এবং আমলাদের ক্রমবর্ধমানভাবে নিয়োগ করা হচ্ছে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী নয়। সেখানে রয়েছে পক্ষপাতের অভিযোগ।  প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তিগত আনুগত্যের প্রতিফলন। যদি কেউ মেরুদণ্ড সোজা করে প্রতিবাদ দেখানোর  সাহস দেখান, তাকে  গোপনে বরখাস্ত করা হয় বা নির্বাসিত করা হয়।

বিরোধী দলগুলি গত বছরের ২৮ অক্টোবর একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য জড়ো হয়। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী কাঁদানে গ্যাস এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হিংসাত্মকভাবে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় ।  প্রায় ২০,০০০ বিরোধী রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বেশিরভাগ নেতৃত্ব। একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিনিময়ে তাদের সমস্ত নেতাদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হাসিনা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ওপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন। এই সংস্থাগুলি  নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা সহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত।

কর্তৃত্ববাদের এই ধারা নজর এড়ায়নি। একটি  উন্নয়নের গল্প দ্রুত আরেকটি অর্থনৈতিকভাবে স্থবির একনায়কত্বে পরিণত হয়েছে বলে উদ্বিগ্ন, যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন বাংলাদেশী নিরাপত্তা কর্মকর্তার ওপর  নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তারা।  জানিয়ে দেয়া হয় নির্বাচনী কারচুপির সাথে জড়িত যেকোন ব্যক্তির বা তার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হবে। এমনকি তাদের ভিসা নেয়া থাকলেও তা বাতিল হবে। এমন নয় যে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলটির ওয়াশিংটনপন্থি অবস্থানের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সম্প্রতি একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিতে এই সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে। 
যুক্তরাষ্ট্র চায়  বাংলাদেশে একটি অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বাইডেন  প্রশাসন বিশ্বাস করে যে ঢাকায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ১৭০ মিলিয়নেরও বেশি  মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে স্থিতিশীলতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্যারান্টার হয়ে উঠবে। 

একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আমেরিকানদের সাথে যোগদান থেকে বিরত রাখতে, আর্থিক সঙ্কটে থাকা হাসিনা সরকার লোকসানে থাকা জাতীয় বিমান সংস্থার জন্য ১০টি এয়ারবাস কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকেআমেরিকান প্রচেষ্টাকে “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ” হিসেবে চিহ্নিত করেছেচীন। একই সুর রাশিয়া এবং ইরানের গলায় প্রতিধ্বনি হয়েছে।আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা আরও খারাপ হতে চলেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনুমান করছে যে, দেশটি বেশিরভাগ সময় ধরে   হিসাবের ঘাটতির মধ্যে দিয়ে যাবে । অস্থিতিশীলতার ঝুঁকির সাথে যোগ হচ্ছে আরেকটি  তথ্য। তা হলোশেখ হাসিনার  দলে তার কোনও  দৃশ্যমান উত্তরাধিকার নেই।

একটি সংকট এখনও  এড়ানো যায়। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বিরোধী দল কোনো ইসলামিক মৌলবাদী, চরমপন্থী, জঙ্গি বা সাম্প্রদায়িক জাতিগত বিদ্বেষকারীদের দ্বারা পরিচালিত হয় না। কিন্তু ভারতে হাসিনা সরকারের সমর্থকরা এই ধরণের প্রচার চালিয়ে থাকেন। বরং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং বাস্তবসম্মত উন্নয়ন নীতির ইতিহাস সহ তার রাজনৈতিক বার্তায় স্পষ্টতই মধ্যপন্থী এবং সতর্ক।অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং শাসনের প্রচণ্ড দমন-পীড়নের পটভূমিতে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বার্তা গণতান্ত্রিক পুনর্নবীকরণ এবং বাস্তববাদী উন্নয়নবাদের সেই ট্র্যাক রেকর্ডের প্রতি আকৃষ্ট হয়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে দীর্ঘস্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সূচনা করার জন্য নির্বাচনের পরে একটি জাতীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি। ভারত যদি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সাহায্য করার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নেয়, তাহলে সম্ভবত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে আগ্রহী অংশীদার পাবে তারা। বিরোধী দল স্বভাবতই ভারতবিরোধী নয়, এবং পূর্ববর্তী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সরকারগুলি ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে কাজ করেছে। কিন্তু ভারত যদি শেষ পর্যন্ত হাসিনা সরকারের পিছনে দাঁড়ায়  তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। অর্থনৈতিক পতনের মধ্যে শাসনব্যবস্থার এই বিশৃঙ্খলা বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলবে ।পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে এই ভয়াবহ দৃশ্যটি আরও বেশি করে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d