যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশে মানবাধিকার যে দৃষ্টিতে দেখবে, তাদের দেশে সেভাবে দেখবে না কেন? প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের
মানবাধিকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশে যে দৃষ্টিতে দেখে, সে দৃষ্টিতেই নিজ দেশে তাকানোর আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেছেন, আমাদের দেশে বিরোধী দল যখন অগ্নি সন্ত্রাস করে, পুলিশের উপর হামলা করে, পুলিশ হাসপাতালে অগ্নি সংযোগ করে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুর চালায়, সাংবাদিকের উপর আক্রমণ করে তখন যুক্তরাষ্ট্র কথা বলে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশে মানবাধিকার যে দৃষ্টিতে দেখবে তাদের দেশে সেভাবে দেখবে না কেন? গতকাল রোববার দুপুরে ধানমন্ডিতে অনুষ্ঠিত দলের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে এমন কিছু আমাদের জানা নেই। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংঘাত করবো কেন?
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা সত্যি বলতে গিয়ে যদি সেটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত লাগে সেখানে আমাদের বলার কিছু নেই। আজকে একটা সিনারিও ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে, ১৯৬৮ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এপিক সেন্টার ছিল। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটিরগুলোয় যুদ্ধ বিরোধী প্রতিবাদ হয়েছে। আজকে ৬৮ সালের পুনরাবৃত্তি এখনো এপিক সেন্টার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে সত্যটা যদি বলি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বের বিষয়টি কেন আসবে? তুমি আমার মানবাধিকার নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করবে। আর এখন তোমার মানবাধিকার নিয়ে বলতে পারব না ? যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিয়ত গান ভায়োলেন্স, ম্যাস শুটিং, ৫২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় গণহত্যা নিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। তা দমন করা হচ্ছে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে। ২৫০০ গ্রেপ্তার হয়েছে। আর আমাদের দেশে বিরোধী দল যখন অগ্নি সন্ত্রাস করে, পুলিশের উপর হামলা করে, পুলিশ হাসপাতালে অগ্নি সংযোগ করে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুর চালায়, সাংবাদিকের উপর আক্রমণ করে তখন যুক্তরাষ্ট্র কথা বলে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশে মানবাধিকার যে দৃষ্টিতে দেখবে তাদের দেশে সেভাবে দেখবে না কেন?
তিনি আরো প্রশ্ন রেখে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তার দেশ কর্তৃত্বপরায়ণ নয়। কিন্তু কর্তৃত্বপরায়ণের যে সংজ্ঞা তাতে বর্তমান মার্কিন দৃশ্যপট কি ভিন্ন কিছু? নির্দয়ভাবে দমন করা হচ্ছে।
এখন সরকারের উপর দেশি-বিদেশি চাপ আছে কী না, কারা দিচ্ছে এবং এ নিয়ে সরকার অস্বস্তিতে আছে কিনা এমন এক প্রশ্ন জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, চাপটা আছে, তবে সেটা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ। যুদ্ধের কারণে যে অর্থনৈতিক সংকট, এই সংকট বিশ্বজুড়ে। এর প্রভাব প্রতিক্রিয়া আমাদের এখানেও আসে। আমদানি রপ্তানি, জ্বালানি, মুদ্রাস্ফিতি, ডলার সংকট -এসব বিষয়গুলো অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য বিষয়। এগুলো এফেক্টেড হলে চাপ পড়ে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে চাপ আছে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের বিরত রাখা আওয়ামী লীগের নীতিগত সিদ্ধান্ত, এখানে আইনি কোনও বিষয় নেই বলে এ সময় উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে প্রতীক ছাড়া নির্বাচন করছে আওয়ামী লীগ। তবে অন্য দলগুলো চাইলে নিজেদের দলীয় প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারে। এটা আওয়ামী লীগের কোন মতবিরোধ নেই।
এ সময় বিএনপির প্রতি প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা আব্বাসরা দলীয় প্রতীকে কেন নির্বাচনে এলেন না? আমাদের তো কোন আপত্তি নেই। আমরা দলীয় প্রতীক দেইনি। আমরা নতুন কৌশলে জাতীয় নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনও প্রতীক ছাড়া করতে চেয়েছি। একটা ভালো নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে এবং আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে।
এ সময় ওয়ান ইলেভেনে আটক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, মির্জা আজমসহ আমরা জেলে একসঙ্গে ছিলাম। সে সময়ের বাস্তবতা, ফোকাস তখন যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল ওয়ান ইলেভেনের অস্বাভাবিক সরকার তাদের লক্ষ্য ছিল একটা বিরাজনীতিকরণ। এর সঙ্গে চোর হয়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে এটা মনে করি না। রাজনীতিবিদদের ধরা হয়েছে বিরাজনীতি করনের জন্য। মাইনাস টু ফর্মুলাও হয়েছিল রাজনীতিবীদদের টার্গেট করার জন্য। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজমসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।