International

পালটে যেতে পারে গাজা যুদ্ধ ও বিশ্ব অর্থনীতির চিত্র

বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব-সংঘাত সমাধানে সহায়তা করার ক্ষমতা অনেকাংশে কমে গেছে। অপরদিকে মাঝারি শক্তির দেশগুলোর ক্ষমতা বাড়ছে। এ কারণে প্রাণঘাতী সব সংঘাত আরও জটিল হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় এলে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের চিত্রপট পালটে যেতে পারে। ইসরাইলকে আরও আশকারা এবং কিয়েভকে টপকে মস্কোর সঙ্গে ট্রাম্প যোগাযোগ বাড়াতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য এমন একটি বিশ্ব অপেক্ষা করছে, যেখানে শান্তির চেয়ে সংঘাত বেশি। এ যুদ্ধ মোকাবিলা করে কাজ করে যেতে হবে। খবর সিএনএন ও এএফপির।

মার্কিন নির্বাচন বিশ্বের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় থাকলে সরকারি অর্থব্যয়ের ক্ষেত্রে উদারহস্ত। তারা এমন ধরনের নীতি প্রণয়ন করে, যার বদৌলতে সমাজে সম্পদের পুনর্বণ্টন হয়। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা ব্যবসাবান্ধব হিসাবে পরিচিত। তারা কর কমিয়ে ধনীদের সুযোগ করে দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো-গত শতকের বড় সময়জুড়ে মার্কিন অর্থনীতি ও শেয়ারবাজার ডেমোক্রেটিক পার্টির শাসনামলে ভালো করেছে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুবোস প্যাস্টর ও পিয়েত্রো ভেরনসি ১৯২৭ থেকে ২০১৫ সালের তথ্য নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন-ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্টদের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ। একই সময় যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের ইকুইটি রিস্ক প্রিমিয়াম ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্টদের আমলে রিপাবলিকানদের চেয়ে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি ছিল। ১৯৯৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তা ছিল আরও বেশি, ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এটি হলো শেয়ারবাজারে ঝুঁকিমুক্ত হারের চেয়ে বেশি হারে বিনিয়োগ করে যে অতিরিক্ত লভ্যাংশ পাওয়া যায়, সেটি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও ‘মহান’ করার অঙ্গীকার করেছেন। সেজন্য অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘আমেরিকাই প্রথম’-এমন নীতি গ্রহণের আগাম ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। এর অংশ হিসাবে গত কয়েক মাসে নির্বাচনি প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী দেশগুলোর বিরুদ্ধে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ শুরুর হুমকি দিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ট্রাম্পের হুমকির মূল নিশানা হলেও তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ট্রাম্পের জমানায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে এর প্রতিক্রিয়া বিশ্বের অন্য দেশেও অনুভূত হবে বলে সতর্ক করে দিচ্ছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকসহ বিশ্ববাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহল। আগেও ট্রাম্প তা করেছেন। চীনের অর্থনীতি এমনিতেই গতি হারিয়ে ফেলেছে। সেই সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধ চাঙা হলে দেশটির অর্থনীতিতে আরও প্রভাব পড়বে। এতে চীনের সঙ্গে সম্পর্কিত বা চীনের ঠিকাদার হিসাবে কাজ করা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এছাড়া ট্রাম্প খোলামেলা বলেছেন, সুদের হার নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকা উচিত। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচিত হলে স্বভাবতই তিনি ফেডারেল রিজার্ভের সিদ্ধান্তে নাক গলাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগের জমানায়ও ফেড চেয়ারম্যানের সঙ্গে বাহাস হয়েছে ট্রাম্পের। এবার নির্বাচিত হয়ে ট্রাম্প যদি ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন, বিশেষ করে সুদের হার নির্ধারণের ব্যাপারে, এর প্রভাব সারা বিশ্বের অর্থনীতি ও আর্থিক ব্যবস্থায় পড়বে। ফেডের সুদহারের ওপর উন্নয়নশীল দেশের বিনিয়োগ অনেকাংশে নির্ভরশীল।

ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম হঠাৎ বাড়ল ১২ শতাংশ : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগের দিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম একলাফে ১২ শতাংশ বেড়েছে। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপের (ডিজেটি) শেয়ার এতটা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারণ কী, তা আপাতদৃষ্টিতে জানা যায়নি। তিনদিনে ৪১ শতাংশ দরপতনের আগে টানা পাঁচ সপ্তাহ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম চারগুণ বেড়েছিল। বিশ্লেষকদের ভাষ্য, ট্রাম্প আবার নির্বাচিত হতে পারেন-এমন ভাবনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কাজ করে থাকতে পারে। প্রথমবার প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের (বর্তমানে এক্স) মাধ্যমে প্রশাসনিক তথ্য আদান-প্রদান করলেও এবার নির্বাচিত হলে তিনি তার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবেন। তবে কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলে ট্রুথ সোশ্যালের বাণিজ্যিক গুরুত্ব অনেক কমে যেতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button