International

দামেস্কর কুখ্যাত সেদনায়া বন্দিশালায় অনুসন্ধান, জনতার ভিড়

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে কুখ্যাত সেদনায়া বন্দিশালার সুড়ঙ্গে সুড়ঙ্গে বন্দিদের খোঁজ চলছে। সিরিয়ার নাগরিক সুরক্ষা গোষ্ঠী হোয়াইট হেলমেটস জরুরি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে এই অনুসন্ধান শুরু করেছে।

সেদনায়া কারাগারের মাটির নিচের বিভিন্ন কুঠুরিতে বন্দিরা থাকতে পারে এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে এই তৎপরতা চলছে। আর এই খবর পেয়ে বহু মানুষও বন্দিশালার বাইরে ভিড় করেছে।

ছবিতে দেখা গেছে, মানুষজন অধীর হয়ে আছে খবর জানার জন্য। ভেতরে অনুসন্ধানকারীরা হন্যে হয়ে গোপন কুঠুরির খোঁজ করছে বলে জানিয়েছেন বিবিসি’র সংবাদদাতারা

হোয়াইট হেলমেটস বলেছে, তারা এখন পর্যন্ত যেমনটি শোনা যাচ্ছে, সেরকম গোপন কোনও দরজা খুঁজে পায়নি। তবে তারা লোকজনের সহায়তা নিয়ে খোঁজ চালিয়ে যাবে, যারা এই বন্দিশালায় ঢোকার পথ জানে কিংবা গোপন কোনও স্থানের কথা জানে।

এক্সে হোয়াইট হেলমেট জানায়, তারা সেদনায়ায় অনুসন্ধান কাজের জন্য ৫ টি বিশেষজ্ঞ দল নিয়োগ করেছে।

সিরিয়ার বিদ্রোহীরা রোববার দামেস্ক দখলের পরই সেদনায়া বন্দিশালার দ্বার খুলে দিয়ে ৩ হাজার ৫০০ বন্দিকে মুক্ত করে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের পর বিদ্রোহীরা যে কয়েকটি বন্দিশালা মুক্ত করেছে তার মধ্যে সেদনায়া অন্যতম।

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের শাসনামলে হাজার হাজার সিরীয় গুম হয়েছিল। তার পতনের পর দামেস্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেইসব বন্দিকে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে, যাদের কারও কারও ভেন্টিলেশিনের অভাবে দম বন্ধ হয়ে মরার দশা হয়েছে।

দামেস্কর আঞ্চলিক গভর্নরেট স্যোশাল মিডিয়ায় আসাদ আমলের সাবেক সেনা ও বন্দিশালার কর্মীদের কাছে আবেদন জানিয়েছে মাটির নিচের গোপন কুঠুরির দরজার ইলেক্ট্রনিক কোড বিদ্রোহী বাহিনীকে দেওয়ার জন্য।

গভর্নরেট জানায়, সিসিটিভি ক্যামেরায় ১ লাখের বেশি বন্দিকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দরজার কোড না থাকায় তাদেরকে মুক্ত করা যাচ্ছে না।

অনলাইনে এবং গণমাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা গেছে, সেদনায়া বন্দিশালার নিচের অংশগুলোতে ঢোকার চেষ্টা চলছে। অন্য একটি ফুটেজে দেখা গেছে বন্দিদেরকে মুক্ত করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে এক মায়ের সঙ্গে ছোট একটি শিশুকেও দেখা গেছে।

ভিডিওতে তাদেরকে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করে কেউ একজনকে বলতে শোনা যায়, “আসাদের পতন হয়েছে। ভয় পাবেন না।”

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, সেদনায়া থেকে মুক্তি পাওয়া বন্দিদের মধ্যে স্বজনদের কেউ আছে কিনা তা খুঁজতে দৌড়ে যাচ্ছেন সিরীয়রা। খবর জানতে উদগ্রীব অনেকেই কারাগারটির প্রবেশপথেও ভিড় জমান।

এই বন্দিশালায় আসাদের শাসনামলে সিরিয়ার বিরোধীদলের হাজার হাজার সমর্থক নির্যাতন এবং মৃত্যুদণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে শোনা যায়। বিদ্রোহী বাহিনী আসাদের পতন ঘটানোর পর দেশজুড়ে সরকারি জেল থেকেও বহু বন্দিকে মুক্ত করেছে।

তবে সেদনায়ায় অনেকেই এখনও মাটির নিচের গোপন কক্ষে আটকা পড়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখনও যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন অনেকেই।

সিরিয়া ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে সরকারি বাহিনী লাখো মানুষকে আটককেন্দ্রে নিয়ে বন্দি করে রাখে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, এসব আটককেন্দ্রে নির্যাতন ছিল সাধারণ ঘটনা

‘অ্যাসোসিয়েশন অব ডিটেইনিজ অ্যান্ড দ্য মিসিং ইন সেদনায়া প্রিজন’ (এডিএমএসপি)-এর ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর সেদনায়া ‘মৃত্যুকুপে’ পরিণত হয়েছিল।

মুক্ত হওয়া কয়েকজন বন্দির দেওয়া হিসাবের ভিত্তিতে এডিএমএসপি- আনুমানিক পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছে, বন্দিশালাটিতে ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩০ হাজার বন্দির হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে কিংবা নির্যাতন, চিকিৎসার অভাব এবং অনাহারের কারণে তারা মারা গেছে।

২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে সেদনায়া-কে ‘মানব কসাইখানা’ আখ্যা দেয়। এই বন্দিশালায় সরকার সর্বোচ্চ মাত্রায় মৃত্যুদন্ড কার্যকরের অনুমতি দিয়ে রেখেছিল বলে অভিযোগ করে তারা।

তবে তৎকালীন আসাদ সরকার অ্যামনেস্টির এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছিল এবং সব মৃত্যুদণ্ডই যথাযথ প্রক্রিয়ায় কার্যকর করা হয় বলে দাবি করেছিল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button