USA

সিরিয়ায় বাশারবিরোধী লড়াইয়ে কতটা ভূমিকা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের

সিরিয়ার প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরানসহ আরও কিছু দেশ জড়িয়ে পড়েছিল। তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র ছিল প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের পক্ষে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। তারা বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জোটগুলোকে অর্থ, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোয়েন্দা তথ্য ইত্যাদি দিয়ে সহায়তা করেছে, এখনো করছে।

বাশারের পতনের পরের দিন হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা দলের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমাদের কৌশল মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দিয়েছে। আমরা ওই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের অংশীদারদের সহায়তা দিয়ে আসছি, শত্রুদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি, কূটনৈতিক অঙ্গনে তৎপরতা চালিয়েছি, প্রয়োজনে শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছি। এসব কিছুর ফলে আজ আমরা সিরিয়ার মানুষ ও পুরো অঞ্চলের জন্য নতুন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দামেস্কে ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ আগ্রহ দেখে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, দেশটির দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী ছিল?

পটভূমি

২০১০ সালের শেষের দিকে শুরু হওয়া ‘আরব বসন্তের’ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। ২০১১ সালের শুরুর দিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তিনি দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। ২০১৩ সালে নিজেদের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআইএ) সিরিয়ায় অভিযান শুরুর অনুমতি দেন ডেমোক্রেটিক পার্টির এই প্রেসিডেন্ট।

ইসলামিক স্টেট (আইএস) ২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ার বেশ কিছু এলাকা দখল করে নেয়। তখন তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রসঙ্গত, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিক্রিয়ায় আইএসের উত্থান ঘটেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৭ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০১৯ সালে সিরিয়া থেকে নিজেদের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর মত ছিল, আইএস পরাজিত হয়েছে। এখন সিরিয়ায় সেনা রেখে যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। কিন্তু উপদেষ্টারা তাঁকে বুঝিয়ে সেখানে কিছু সেনা রাখতে রাজি করান।

এত দিন শোনা গেছে, সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন কুর্দি গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯০০ সেনা রয়ে যায়। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মরুভূমিতে আল-তানফ গ্যারিসনেও (সেনাশিবির) যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক শ সেনা আছে। ট্রাম্পের আদেশে প্রত্যাহারের আগে সিরিয়ায় মার্কিন সেনার সংখ্যা ছিল দুই থেকে আড়াই হাজার।

সড়কে পাহারায় সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) সদস্যরা। ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, সিরিয়ার হাসাকা শহরে

সড়কে পাহারায় সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) সদস্যরা। ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, সিরিয়ার হাসাকা শহরে

তবে গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট রাইডার বলেছেন, সিরিয়ায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই হাজার সেনা রয়েছে। বাশারের পতনের আগে থেকে তাঁরা সেখানে রয়েছেন। তবে এসব বাড়তি মার্কিন সেনা সিরিয়ায় ঠিক কবে থেকে অবস্থান করছেন, তা তিনি জানাননি।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্রোহীরা ২৭ নভেম্বর অভিযান শুরুর কিছুদিন আগে বাশার সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে গোপনে এ আলাপ চলছিল। আলাপে মধ্যস্থতা করেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।

সিরিয়ার যেসব বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে গৃহযুদ্ধের নানা পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল, তাদের স্বার্থ ও চরিত্র নানা রকমের। সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জোটের সঙ্গে পেন্টাগনের সম্পর্ক কেমন ছিল বা এখনো কেমন আছে, তা দেখা নেওয়া যাক।

সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস

সিরিয়ার যেসব বিদ্রোহী জোটের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) তাদের অন্যতম। জোটটির সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠীর নাম পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটস (ওয়াইপিজি)। কুর্দিদের নারী যোদ্ধাদের উইমেনস প্রোটেকশন ইউনিটস (ওয়াইপিজে) নামেরও একটি ইউনিট ছিল, যা পরবর্তী সময়ে ওয়াইপিজির সঙ্গে একীভূত হয়েছে।

ওয়াইপিজিকে তুরস্কে চার দশকের বেশি সময় ধরে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সংগ্রাম করা কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) শাখা বলে বিবেচনা করা হয়। পিকেকে-কে আঙ্কারার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মনে করে।

এসডিএফকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, সিরিয়ায় আইএসকে পরাজিত করা ও ফের মাথাচাড়ার সুযোগ না দেওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগেই কুর্দিদের বিভিন্ন বাহিনী ২০১২ সাল নাগাদ উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে দেশটির সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়। ২০১৫ সালে এসডিএফ গঠিত হয়। জোটটিতে কুর্দিদের নানা গোষ্ঠীর সংখ্যাই বেশি। তবে ছোট ছোট কিছু আরব, তুর্কমেন, আর্মেনীয় এবং চেচেন গোষ্ঠীও এতে রয়েছে।

একটি বিধ্বস্ত ট্যাংকের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন সিরিয়ান ফ্রি আর্মির এক সদস্য। ৩ জুলাই ২০১২, সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে

একটি বিধ্বস্ত ট্যাংকের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন সিরিয়ান ফ্রি আর্মির এক সদস্য। ৩ জুলাই ২০১২, সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে

গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ একটি ফেডারেল সিরিয়া প্রতিষ্ঠাই এসডিএফের উদ্দেশ্য। বাশারবিরোধী চরম ডানপন্থী, জাতীয়তাবাদী, তুরস্কের সহায়তাপুষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠী, আইএস ও আল-কায়েদা এসডিএফের শক্র।

সিরিয়ার প্রায় এক–চতুর্থাংশ ভূখণ্ড বর্তমানে এসডিএফের নিয়ন্ত্রণে। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় নিজেদের অঞ্চলে তাদের স্বায়ত্তশাসিত সরকার রয়েছে।

২০১৯ সালে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিছু মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর এসডিএফ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বোমা হামলা শুরু করে তুরস্ক। এমন পরিস্থিতিতে বাশার সরকার ও এসডিএফের মধ্যে চুক্তি হয়।

পেন্টাগন ২০২৪ সালে সিরিয়ায় আইএসবিরোধী ট্রেইন অ্যান্ড ইকুইপ ফান্ডের (সিটিইএফ) জন্য ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার তহবিল বরাদ্দ দেয়। প্রশিক্ষণ, অস্ত্র এবং অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা খাতের জন্য এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২৫ সালের জন্য সিটিইএফে ১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে পেন্টাগন। ২০২৩ সালে এ তহবিলে বরাদ্দ ছিল ১৬ কোটি ডলার। সিটিইএফে যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল বরাদ্দ অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে পেন্টাগনের নথিতে।

বাশার সরকারের পতনের লড়াইয়ে এসডিএফ অংশ নেয়নি। তবে বাশারের ক্ষমতাচ্যুতিকে তারা স্বাগত জানিয়েছে।

বাশার সরকারের পতনের পর তুরস্কের সহায়তাপুষ্ট বিদ্রোহীরা এসডিএফের কিছু অঞ্চল দখলে নিয়েছে। এসডিএফের ওপর তুরস্কপন্থী বিদ্রোহীদের চলমান হামলা থামাতে চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

সিরিয়ান ফ্রি আর্মি

সিরিয়ান ফ্রি আর্মিও (এসএফএ) পেন্টাগন থেকে সিটিইএফের বরাদ্দ পেয়েছে। অনেকে ফ্রি সিরিয়ান আর্মির (এফএসএ) সঙ্গে এসএফএ-কে গুলিয়ে ফেলেন। এফএসএ বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত বাশারবিরোধী একটি মোর্চা। এক সময় এটি মাগাভির আল-থাওরা বা রেভল্যুশনারি কমান্ডো আর্মি (এরসিএ) নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে মোর্চাটি সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ) নামে পরিচিত। তুরস্ক তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।

এসএফএ মূলত দক্ষিণ-পূর্ব সিরিয়ায় ইরাক ও জর্ডান সীমান্তে কার্যক্রম চালায়। ওই অঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন সামরিক দুর্গ আল-তানফ গ্যারিসনে এসএফএ সদস্যদের কয়েক বছর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। মরুভূমির বুক চিরে তৈরি বাগদাদ-দামেস্ক মহাসড়ক এম২-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দুর্গটি অবস্থিত। এই সড়কটি আইএস যোদ্ধা ও ইরানের সহায়তাপুষ্ট গোষ্ঠীগুলো ব্যবহার করত।

পেন্টাগনের বাজেট নথি অনুযায়ী, এফএফএ দক্ষিণ-পূর্ব সিরিয়ায় আল-তানফ গ্যারিসনের (এটিজি) আশপাশে সম্মিলিত বাহিনীর অভিযান পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বাশারের পতন অভিযানে এসএফএ অংশ নিয়েছে। তবে তা এতটা ব্যাপক নয়। তারা মূলত দামেস্কের উত্তর দিকের হোমস প্রদেশ থেকে সরকারি বাহিনীগুলো তাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউসে কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওই বছরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআই) সিরিয়ায় অপারেশন টিম্বার সাইকামো পরিচালনার অনুমোদন দেন

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউসে কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওই বছরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআই) সিরিয়ায় অপারেশন টিম্বার সাইকামো পরিচালনার অনুমোদন দেন

অপারেশন টিম্বার সাইকামোর

বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ওবামার প্রথম মেয়াদের সহকারী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। সম্প্রতি সুলিভানের ২০১২ সালের ফাঁস হওয়া একটি ইমেইল অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে লেখা ইমেইলটিতে ইঙ্গিতে আল-কায়েদার কথা উল্লেখ করে সুলিভান লিখেছেন, ‘সিরিয়ায় একিউ আমাদের পক্ষে আছে’।

এই ই-মেইলের বরাতে অনেকে দাবি করেছেন, সিরিয়ায় আল-কায়েদা ও আইএসের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছিল।

কিন্তু সিরিয়ায় আইএস বা আল-কায়েদাকে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সহায়তা দিয়েছে, এখন পর্যন্ত এমন কোনো সরকারি রেকর্ড নেই।

তবে এই ই-মেইলের পরের বছর, তথা ২০১৩ সালে সিরিয়ায় সিআইএ’র অভিযানের অনুমোদন দেন ওবামা, যা অপারেশন টিম্বার সাইকামোর নামে পরিচিত। এ প্রকল্পের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র বাশারবিরোধী কিছু গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দেয় এবং অস্ত্র সরবরাহ করে।

টিম্বার সাইকামোর সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবসহ আরও কিছু আরব দেশের গোয়েন্দা সংস্থা যুক্ত ছিল। এ প্রকল্পে সিআইএ প্রায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে। কিন্তু নিজেদের অনুদান পাওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হিমশিম খাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাদের প্রশিক্ষিত যোদ্ধা ও সরবরাহ করা অস্ত্র চলে যাচ্ছিল আল-নুসরা ফ্রন্টের হাতে।

নুসরা ফ্রন্ট একটা সময় পর্যন্ত আল-কায়েদার মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিল। বাশারবিরোধী বিদ্রোহীদের নেতৃত্বদানকারী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আহমেদ আল-শারা ওরফে আবু মোহাম্মেদ আল-জোলানিই ছিলেন এটির প্রতিষ্ঠাতা।

জাতিসংঘে সিরিয়ার দূত গেইর পেডারসেনের সঙ্গে বৈঠকে হায়াত তাহরির আল-শামের প্রধান আহমেদ আল-শারা (ডানে)। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

জাতিসংঘে সিরিয়ার দূত গেইর পেডারসেনের সঙ্গে বৈঠকে হায়াত তাহরির আল-শামের প্রধান আহমেদ আল-শারা (ডানে)।

হায়াত তাহরির আল-শাম

বাশারবিরোধী ঝটিকা অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে হায়াত তাহরির আল-শাম বা সিরিয়া মুক্তি সংগঠন (এইচটিএস)। নিজের হাতে গড়া নুসরা ফ্রন্ট বিলুপ্তি ঘোষণার পর ২০১৭ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে জোলানি এইচটিএস গঠন করেন। অনেকগুলো ছোট ছোট বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে একীভূত করে এটি গঠিত হয়। একই বছরের জুলাইয়ে টিম্বার সাইকামোরকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে ট্রাম্প প্রশাসন।

জোলানির মতাদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সংগঠন ও কাজের ধরনেও বদল এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরাকে জিহাদ, মার্কিন সেনাদের হাতে পাঁচ বছর বন্দী থাকার পর ২০১১ সালে মুক্তি, আইএসের প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল-বাগদাদির সঙ্গে মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব, সিরিয়ায় ফিরে বাশারবিরোধী লড়াইয়ে নুসরা ফ্রন্ট গঠন করে খ্যাতি লাভ, আল-কায়েদার মতাদর্শ থেকে সরে এসে এইচটিএস গঠন—আল-শারার জীবনের বিশেষ মাইলফলক। বাশারকে উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে তিনি এখন সিরিয়ার সবচেয়ে বেশি পরিচিত আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।

জাতিসংঘ, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এইচটিএসকে এখনো ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন মনে করে। কিন্তু এ তকমা প্রত্যাহার করা হবে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্য, উপসাগরীয় অঞ্চল এবং পশ্চিমা বিশ্বের সব দেশই এইচটিএসের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এইচটিএসে একীভূত কিছু গোষ্ঠী সিআইয়ের অপারেশন টিম্বার সাইকামো প্রকল্পে ছিল। এসব গোষ্ঠীর নেতাদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এইচটিএসের যোগাযোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এইচটিএসের সরাসরি যোগাযোগের কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস জেফরি ২০২১ সালে পিবিএস নিউজকে বলেছিলেন, এইচটিএস সহায়তা চেয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু ওয়াশিংটন এতে সাড়া দেয়নি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor