পৃথিবীর কক্ষপথে প্রথম কাঠের স্যাটেলাইট, মহাকাশ অভিযানে নতুন যুগের সূচনা
পৃথিবীর কক্ষপথে কাঠ দিয়ে তৈরি প্রথম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। গত মাসে পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উপরে পাঁচটি কিউবস্যাটের মধ্যে ‘লিগনোস্যাট’ নামের এই স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি নভেম্বরে স্পেসএক্স ড্রাগন কার্গো ক্যাপসুলে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছায়।
অভিনব এবং টেকসই
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় ও সুমিতোমো ফরেস্ট্রি যৌথভাবে ‘লিগনোস্যাট’ তৈরি করেছে। এটি ১০ সেন্টিমিটার লম্বা হোনোকি ম্যাগনোলিয়া কাঠের প্যানেল দিয়ে তৈরি, যেখানে কোনো স্ক্রু বা আঠা ব্যবহার করা হয়নি। বরং এটি ঐতিহ্যবাহী জাপানি কাঠের জোড়া লাগানোর পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে। স্যাটেলাইটটির ওজন মাত্র ৯০০ গ্রাম।
লিগনোস্যাটের মূল লক্ষ্য ছয় মাস ধরে মহাকাশে কাঠের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করা। এর মাধ্যমে প্রচলিত স্যাটেলাইটে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম, টাইটানিয়াম এবং প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে টেকসই উপাদান হিসেবে কাঠের ব্যবহার নিয়ে সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।
গবেষণার সম্ভাবনা
লিগনোস্যাটের সেন্সরগুলো কাঠের ওপর তাপমাত্রা, বিকিরণ এবং চৌম্বকক্ষেত্রের প্রভাব বিশ্লেষণ করবে। কক্ষপথে সূর্য এবং অন্ধকারের মধ্যে ঘূর্ণনের ফলে প্রতি ৪৫ মিনিটে তাপমাত্রা মাইনাস ১০০ থেকে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে। এই কঠোর পরিবেশে কাঠের স্থায়িত্ব এবং এর মাধ্যমে স্যাটেলাইটের প্রযুক্তিগত যন্ত্রাংশ রক্ষা করার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হবে।
জাপানের মহাকাশ বিজ্ঞানী এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাও দোই বলেন, কাঠ এমন একটি উপাদান, যা আমরা নিজেরাই তৈরি করতে পারি। এর মাধ্যমে মহাকাশে ঘরবাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস এবং কাজ করা সম্ভব হবে।
কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কোজি মুরাতা জানান, মহাকাশে অক্সিজেন এবং পানির অনুপস্থিতির কারণে কাঠ পৃথিবীর তুলনায় বেশি টেকসই। কাঠের স্যাটেলাইট ব্যবহারের মাধ্যমে উপগ্রহের আয়ুষ্কাল শেষে এর পরিবেশগত প্রভাবও কমানো সম্ভব।
মহাকাশে ধ্বংসাবশেষ সমস্যার সমাধান
মহাকাশে ক্রমবর্ধমান ধ্বংসাবশেষ বা স্পেস দেব্রি সমস্যার সমাধানে কাঠের স্যাটেলাইট নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, কাঠের স্যাটেলাইট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়। অন্যদিকে, প্রচলিত স্যাটেলাইট পুনঃপ্রবেশের সময় অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড কণা তৈরি করে, যা বায়ুমণ্ডলের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।
টেকসই মহাকাশ গবেষণায় লিগনোস্যাট এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এটি পরিবেশবান্ধব মহাকাশ প্রযুক্তির পথপ্রদর্শক হবে।