জে-১০সি বনাম রাফাল: যুদ্ধক্ষেত্রে চীনা প্রযুক্তির প্রথম পরীক্ষা?

ভারত ও পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলার জেরে শুরু হওয়া তীব্র সামরিক উত্তেজনা এখন আর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এই প্রথম বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক প্রযুক্তি জড়িয়েছে মুখোমুখি সংঘাতে।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ন্যাটো জোটভুক্ত দেশ ফ্রান্সের কাছ থেকে কেনা ভারতের যুদ্ধবিমান রাফাল ধ্বংস করতে চীনা যুদ্ধবিমান জে-১০সি ব্যবহারের দাবি করেছে পাকিস্তান।
ভারত এখনো পাকিস্তানের এসব দাবি স্বীকার না করলেও, ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে একটি রাফাল যুদ্ধবিমান সম্ভবত হারিয়েছে ভারত।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন কর্মকর্তাও জানিয়েছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে রাফাল হারিয়েছে ভারত।
এদিকে চীন আকাশ যুদ্ধের বিষয়ে এখনো সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও, তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ের খোঁজ রাখছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে চীন অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে ফ্রান্সের অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি সোভিয়েত আমলের মিগ-২৯ ও এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার খবরে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এভআইসি চেরিংও এয়ারক্রাফট-এর শেয়ারের মূল্য এক সপ্তাহে ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে।
এশিয়া অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য ও পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কয়েক দশক ধরে সামরিক প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে আসছে চীন। যার সুফল পেতে শুরু করেছে দেশটি। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসাইপিআরআই) -এর তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে পাকিস্তানের আমদানি করা অস্ত্রের ৮১ শতাংশ এসেছে চীন থেকে।
পাকিস্তানের আমদানি করা অস্ত্রের তালিকায় আছে চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এই অস্ত্র ও সরঞ্জামগুলো ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এশিয়া-প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিচালক সাজ্জান গোহেল বলেন, ‘এটি আর শুধুই দ্বিপাক্ষিক সংঘর্ষ নয়, বরং চীনের প্রতিরক্ষা রপ্তানি যে এই অঞ্চলের প্রতিরোধ ভারসাম্যে পরিবর্তন আনছে, তার প্রমাণ।’
ভারত ঐতিহ্যগতভাবে অননুমোদিত পররাষ্ট্রনীতির পথ অনুসরণ করলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। বর্তমানে ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইসরায়েল।
অন্যদিকে, পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে এক দশক আগে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেওয়ার’ অভিযোগে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেছিল, চীন সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে।
এসাইপিআরআই-এর গবেষক সায়মন ভেজম্যান বলেন, ‘চীন কার্যত প্রমাণ করতে চাচ্ছে যে পাকিস্তানের একমাত্র প্রকৃত বন্ধু তারাই।’
এদিকে বেইজিংয়ের থিংকট্যাঙ্ক তিংহুয়া ইউনিভার্সিটির সিনিয়র ফেলো অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ঝৌ বো বলেন, ‘যদি সত্যিই রাফাল যুদ্ধবিমান চীনের জে-১০সি গুলি করে ভূপাতিত করে থাকে, তাহলে এটি চীনের অস্ত্র প্রযুক্তির জন্য একটি বড় আত্মবিশ্বাসের উৎস।’
তবে কিছু বিশ্লেষকের মতে, ভারতের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে তাদের রণকৌশলের দুর্বলতা, অথবা পাকিস্তানের কাছে সরবরাহ করা চীনা ক্ষেপণাস্ত্র পিএল-১৫ এর সক্ষমতা সম্পর্কে ভুল তথ্য থাকা।