ভেস্তে যাচ্ছে মানুষের ২৫০ কোটি
মানহীন কাজের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মোহাম্মদপুরের কনকচাঁপা প্রকল্পের ২৭৭টি ফ্ল্যাটের নির্মাণকাজ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশলীর যোগসাজশে ভেস্তে যেতে বসেছে গ্রাহকদের প্রায় ২৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ। কষ্টের বিনিয়োগ বাঁচাতে গ্রাহকরা পূর্ত সচিবের কাছে অভিযোগ করেছেন। তারা কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে গ্রাহকরা বলেছেন, নুরজাহান রোডের কনকচাঁপা প্রকল্পের আওতায় চারটি ভবন মানহীনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কাজের দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা ডিভিশন-২-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ হিল বাকী। তিনি ঠিকাদারদের সঙ্গে মিলে এ কাজ করছেন। প্রকল্পের সার্বিক তদারকির দায়িত্ব তার হলেও তিনি কালেভদ্রে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে যান।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ভবনগুলোর পাইলিং একই লাইনে বা সোজা হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। পাইলিংয়ের টাইবিম ২৮ ইঞ্চি হওয়ার কথা থাকলেও তা ৩২, ৩৫ ও ৪০ ইঞ্চির। এ জন্য পাইলের জোর কমে যাবে এবং ভবনগুলোর পাইলিং ভেঙে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের পাশ ঘেঁষেই শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। মানহীন এবং আশপাশের স্থাপনা না দেখে কাজ করায় ভবনগুলোর ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। বেশ কয়েকবার তারা প্রকল্পের ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের কাছে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। কিন্তু ঠিকাদার-প্রকৌশলী সিন্ডিকেটের কারণে কোনো প্রতিবাদে কান দেওয়া হয়নি। নির্মাণকাজের নকশাও ঠিকমতো অনুসরণ করা হচ্ছে না।
কয়েকজন গ্রাহক জানান, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ হিল বাকী গ্রাহকদের কোনো সম্মান করেন না। কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। ঠিকাদারদের সঙ্গে তার এত আঁতাত যে কখনো তাদের কিছু বলেন না। অভিযোগ করলে উল্টো গ্রাহকদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেন।
আরও বলা হয়েছে, ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া কয়েকজন গ্রাহককে তিনি ভুল বুঝিয়ে অন্যত্র ফ্ল্যাট বিক্রি করিয়েছেন। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন তিনি। জাতীয় গৃহায়নের প্রধান কার্যালয়ে একটি অসাধু সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যারা ফ্ল্যাট কেনাবেচা করেন। প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ হিল বাকী ওই চক্রের সদস্য। যেসব গ্রাহক প্রকল্প নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন, তাদের তিনি ফ্ল্যাট বিক্রি করে ফেলার পরামর্শ দেন। তার অত্যাচারে গ্রাহকরা অতিষ্ঠ।
ইমামুল আহসান নামের একজন ফ্ল্যাট গ্রাহক বলেন, ‘কনকচাঁপা ও দোলনচাঁপা মিলে একটি প্রকল্প। কনকচাঁপার ২৭৭টি ফ্ল্যাট ক্ষতিগ্রস্ত ও বাইরের সদস্যদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দোলনচাঁপা প্রকল্পে সরকারি কর্মকর্তারা বরাদ্দ পেয়েছেন। দোলনচাঁপায় পূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও ফ্ল্যাট রয়েছে। এজন্য ওই অংশের কাজের তদারকি ভালো হচ্ছে। গ্রাহকদের আবেদন-নিবেদনের পরও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বা মন্ত্রণালয় কনকচাঁপার কাজের বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘গ্রাহকদের অভিযোগের লিখিত আবেদন এখনো আমার হাতে আসেনি। অভিযোগ হাতে পেলে কনকচাঁপা প্রকল্পের কাজে কোনো অনিয়ম থাকলে তা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেব।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই প্রকল্পের প্রকৌশলী ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ হিল বাকী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্রাহকরা অভিযোগ করলে তো সব সত্য হয়ে যাবে না। দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করছি। প্রকল্পের কাজে কোনো ত্রুটি হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘কনকচাঁপা ও দোলনচাঁপার ৪৩০টি ফ্ল্যাট নির্মাণে ৪০০ কোটির বেশি খরচ হবে। কনকচাঁপার খরচ প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৬ মে সরকার জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মোহাম্মদপুরে কনকচাঁপা ও দোলনচাঁপা নামে ৪৩০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রায় ৩ একর জায়গাজুড়ে এ প্রকল্প। দুটো অংশেই ৪টি করে ভবন নির্মিত হচ্ছে। কনকচাঁপায় ২৭৭টি ফ্ল্যাট হচ্ছে। দোলনচাঁপায় ১৫৩টি ফ্ল্যাট। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বলেছে সরকার।