International

চীনের হাসপাতালগুলোতে শিশুদের উপচে পড়া ভিড়

চীনের রাজধানী বেইজিং এবং পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লিয়াওনিংয়ের হাসপাতালগুলো ‘রহস্যময়’ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ভিড় উপচে পড়ছে। প্রতিদিন হাসপাতালগুলোতে চিকিত্সা নিতে আসছে গড়ে ৭ হাজার শিশু। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৩ হাজার, যা গত এক মাস আগে এই রোগটির প্রাদুর্ভাবের পর থেকে সর্বোচ্চ। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বেতার সংবাদমাধ্যম চায়না ন্যাশনাল রেডিও নিশ্চিত করেছে এই তথ্য। প্রতিদিন এত সংখ্যক অসুস্থ শিশু আসতে থাকায় চিকিত্সাসেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে বেইজিং ও লিয়াওনিংয়ের হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালগুলো। 

চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে পোস্ট করা ভিডিওগুলোতে বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে অসুস্থ শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, অসুস্থ শিশুসন্তানকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসপাতাল লবি বা চত্বরের বাইরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। হাসপাতালগুলোর চাপ এড়াতে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়েছে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল হেলথ কমিশন। বিবৃতিতে যেসব শিশু মৃদু উপসর্গে ভুগছে, তাদেরকে হাসপাতালের পরিবর্তে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন। পাশাপাশি যেসব শহর-গ্রাম ও অঞ্চলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে সেসব অঞ্চলে প্রায়োজনীয় সংখ্যক অস্থায়ী স্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তুলতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

গত অক্টোবরের শেষ দিক থেকে বেইজিং এবং লিয়াওনিংয়ের শিশুদের মধ্যে রহস্যজনক নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। রোগটিকে রহস্যজনক নিউমোনিয়া বলার কারণ হলো—নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা যেমন শ্বাসকষ্টে ভোগেন, অজানা এই রোগটিতে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যেও এ উপসর্গের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে নিউমোনিয়ার রোগীদের শ্বাসকষ্ট ছাড়াও কফ ও বুকে ঘড়ঘড় শব্দের মতো উপসর্গ দেখা যায়, আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। তবে শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি উচ্চমাত্রার জ্বরের মতো উপসর্গ রয়েছে আক্রান্ত শিশুদের। 

এছাড়া শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে আক্রান্ত প্রত্যেক শিশুর ফুসফুসে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফোসকা বা ফুসকুড়ি পরিলক্ষিত হয়েছে। জলবসন্ত রোগে মানুষের শরীরে যেমন ফোসকা ওঠে, সেসবের সঙ্গে মিল রয়েছে সেগুলোর। গত ১২ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশ জুড়ে প্রতিদিনই বাড়ছে এই রোগটিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা। করোনাকালে জনগণ যেসব বিধিনিষেধ মেনে চলতেন, অজানা এই নিউমোনিয়ার ছড়িয়ে পড়া রোধ করতেও দেশের লোকজনজকে সেসব বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশনের কর্মকর্তারা। জনস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক নজরদারি সংস্থা প্রোমেড ইতিমধ্যে এক বিবৃতিতে এ বিষয়ক সতর্কবার্তা জারি করেছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনের শিশুদের মধ্যে বর্তমানে যে নিউমোনিয়া শুরু হয়েছে, সেটি কতখানি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তা এখনো নির্ণয় করা যায়নি। এদিকে, রহস্যময় এই নিউমোনিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে চীনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button