Bangladesh

অসহযোগের কৌশল সাজাচ্ছে বিএনপি

সদ্য ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলন সফলে কৌশলী হচ্ছে বিএনপি। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে কীভাবে এই কর্মসূচি কার্যকর করা যায় সেটাই ভাবছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কর্তৃত্ববাদী শাসকদের বিরুদ্ধে এশিয়াসহ দুনিয়ার দেশে দেশে নন-কো-অপারেশন মুভমেন্ট কীভাবে সফল হয়েছে সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্বাচন বর্জন করা সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কর্মসূচি সফল করতে কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। সরকারের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী ইউনিয়নগুলোর নেতাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন তারা। এ ছাড়া শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে অসহযোগ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কর্মপন্থা নির্ধারণে বুধবার রাতে ঢাকা বিভাগের বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি ম্যারাথন বৈঠক করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

সূত্র জানিয়েছে, অসহযোগ আন্দোলন বাস্তবায়নে কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্যাপকভাবে লিফলেট বিতরণ করে প্রচারণা চালিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারকে অসহযোগিতার আহ্বান জানানো হবে। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে ভ্যাট-ট্যাক্স ও ইউটিলিটি বিল দেয়া বন্ধের অনুরোধ করা হবে।

বিজ্ঞাপন হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে। ১লা জানুয়ারি থেকে ৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত ভোট বর্জন ও ভোট প্রতিহতের জন্য রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। 

’৯৬ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ ২৭ বছর পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একই কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিএনপি। সরকার পতনের একদফা দাবিতে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে হরতাল-অবরোধ পালন করে আসছিল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। প্রায় তিন দশক পর ঘোষণা দেয়া নতুন এই কর্মসূচি অনেকটা অপরিচিত দলের নেতাকর্মী ও নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে। সেজন্য প্রথমদিকে অসহযোগের পক্ষে জনমত গড়ার পক্ষে কাজ করবেন নেতারা। এরপর কর্মসূচি বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকবেন। ইতিমধ্যে বুধবার থেকে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি শুরু করেছেন বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা। 

শ্রমিক দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা অসহযোগ সফল করতে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলছেন তারা। নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার জন্য নিরুৎসাহিত করছেন। তিনি দাবি করেন, রোববার থেকে অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুপস্থিত থাকবেন। ৭ই জানুয়ারি ভোটদান থেকেও বিরত থাকবেন তারা।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র এক নেতা জানান, বিএনপি এতদিন হরতাল-অবরোধ পালন করে আসছিল। হরতাল-অবরোধ কীভাবে পালন করতে হয় সেটাতে অনেকটা পরিচিত ছিল দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু অসহযোগের কনসেপ্টটা নেতাকর্মীদের কাছে নতুন। তাই নেতাকর্মীদের অসহযোগের ধারণা দিতে প্রথম কয়েকদিন ধারাবাহিক ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক হবে। একইসঙ্গে জনসংযোগ করে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হবে। তিনি আরও জানান, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হবে। একতরফা নির্বাচনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করা হবে।    

লিফলেটে ব্যাপকভাবে চলবে প্রচারণা: অসহযোগের পক্ষে জনমত গড়তে গতকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি। সকালে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এরপর রাজধানীর বেইলী রোডে লিফলেট বিতরণ করেন তিনি। এসময় বেইলী রোডের দোকানে, ফুটপাথে পথচারীদের এবং রিকশা-সিএনজিচালক ও যাত্রীদের হাতে ৭ই জানুয়ারির ভোট বর্জনের লিফলেট তুলে দেন। তার সঙ্গে দলের ৯/১০ নেতাকর্মী ছিলেন। 
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শরীফউদ্দিন জুয়েল বলেন, সরকার পতনের একদফা দাবিতে আমরা গত দেড় মাস ধরে আন্দোলন করছি। একতরফা নির্বাচন আমরা প্রতিহত করবো, এই ডামি নির্বাচন হতে দেবো না।  

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব এজিএম সামসুল হক বলেন, সরকারের হামলা-মামলা ও দমন-নিপীড়ন মোকাবিলা করেই আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এত নির্যাতনের পর আমাদের নেতাকর্মীদের মনোবলে চিড় ধরাতে পারেনি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘোষিত অসহযোগ কর্মসূচি নিয়ে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। বিএনপি’র ও অঙ্গ-সংগঠনের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক হয়েছে। জনগণকে সচেতন করতে ইতিমধ্যে আমাদের লিফলেট  কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চলবে।  

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। আমরা অসহযোগের সাপোর্টিভ কর্মসূচি দিয়েছি। এ ছাড়া আমরা দীর্ঘদিন ধরেই একতরফা ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আসছি। অসহযোগ কর্মসূচি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। সাধারণ মানুষ ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। দুয়েকদিনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সবাইকে আরও ধারণা দিতে পারবো।  

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিভিন্ন সময় ইতিহাসের বরেণ্য নেতারা তাদের দাবি আদায়ের জন্য নন- কো-অপারেশন মুভমেন্টের ডাক দিয়েছেন। আমরাও সেই ডাক দিয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা সাধারণ মানুষদের ধারণা দিয়েছি- এই অবৈধ সরকারকে অসহযোগিতা করতে ইউটিলিটি বিল, ভ্যাট-ট্যাক্স না দিতে। গায়েবি মামলার হাজিরা না দিতে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালন না করতে। এ ছাড়া একতরফা ভোট বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছি। ধাপে ধাপে কর্মসূচি আরও জোরালো হবে। তিনি আরও বলেন, অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়তে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির প্রথম দিনেই অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। সবাই সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ফুটপাথ, দোকানদার, রিকশাচালক, পথচারী সবার মুখে সেই অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports