Trending

উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও বড় বাজেট

সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য আট লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পরিকল্পনা করছে, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। বড় এই বাজেটের লক্ষ্য মাঝারি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা ও মূল্যস্ফীতি কমানো।

আসন্ন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে।

নতুন বাজেটে আগামী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার হতে পারে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি বাজেট ছিল ২ দশমিক ৬৫ লাখ কোটি টাকা, তবে এটি সংশোধন করে ২ দশমিক ১৬ লাখ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হবে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনার জন্য অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক সমন্বয় পরিষদের বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে অর্থ বিভাগ এবং পরিকল্পনা বিভাগকেপরবর্তী বাজেট প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং অগ্রাধিকার প্রকল্প ও আগামী অর্থবছরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে এমন প্রকল্পে আরও বরাদ্দ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ না হলে এবং বিদেশি তহবিল নিশ্চিত না হলে নতুন কোনো মেগা প্রকল্প গ্রহণ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, সভায় কয়েকটি সৃজনশীল প্রকল্প গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে সরকারের সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকির জন্য ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং আগামী অর্থবছরে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে ব্যয় হয়েছে ৪২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। যা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯২ শতাংশ বেশি।

যদিও সরকার চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সার খাতে ভর্তুকির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বকেয়া পরিশোধ করেছে, তবে আগামী অর্থবছরেও আরেকটি বড় অংশ পরিশোধের পরিকল্পনা রয়েছে।

আগামী বাজেটে এ দুটি খাতের জন্য বড় ধরনের বরাদ্দ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার কথাও ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার।

ফলে চলতি বছরের ৮২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এছাড়াও, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকার যদি এডিপি থেকে কিছু চলমান ‘রাজনৈতিক প্রকল্প’ কাটছাঁটও করে, তবুও বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পসহ অন্যান্য বড় প্রকল্প চলমান থাকায় আগামী বছর এডিপির আকার কমানোর সুযোগ থাকবে কম।

তবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণের করের অতিরিক্ত বোঝা বহন করতে হবে না বিধায় আগামী বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী বাজেটের মাধ্যমে মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি সমন্বয় করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজেট নিয়ে সমালোচনা হতে পারে, তবে খুশি সবাইকে তো খুশি করা সম্ভব নয়।

তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এত বড় বাজেট কতটা যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং কম রাজস্ব আদায়ের প্রকৃত পরিস্থিতি বিবেচনা করে, এত বড় বাজেট নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই যার জন্য আপনাকে দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে।’

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জাতীয় বাজেট তৈরির সময় সরকার কী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে চায় তা গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে মূল অগ্রাধিকার হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাতে অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি না হয়।

জাহিদ হোসেন বলেন, যদি আগামী বাজেটের আকার বর্তমান বাজেটকে ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সরকারকে অর্থায়নের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হতে পারে, যা বিনিয়োগ এবং মুদ্রাস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, পরবর্তী বাজেটের প্রস্তুতি শুরু করার আগে বিদ্যমান বাজেটের বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন করা দরকার।

তিনি বলেন, সংশোধনের আগে নভেম্বরের মধ্যে চলতি বাজেটের দ্রুত মূল্যায়নের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। সেই মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আসা ভালো হতো।

অ্যাডহক ভিত্তিতে এবং শুধুমাত্র আমলাদের উপর নির্ভর না করে প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা উচিত ছিল।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এই দুটি খাতের সমস্যা শুধুমাত্র আরও তহবিল দিয়ে সমাধান করা যাবে না।

‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। অন্যথায় টাকা ফেরত পাঠানো হবে।’

এ জন্য তিনি সরকারকে ডেলিভারি পয়েন্টে সেবা উন্নত করার ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন।

বাজেটের অনেক ব্যয় পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ভর্তুকির জন্য বিভিন্ন ব্যয় কমানো সম্ভব।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা পাওয়ার সুযোগ কমে গেছে।

এই বিষয়ে, তিনি বলেন, সরকার এই দুটি খাতে শর্তসাপেক্ষ নগদ সহায়তা কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports