Bangladesh

ওষুধ নকলে সয়লাব নেই নজরদারি

কুমিল্লার শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই ফার্মেসিগুলোতে বিক্রি হচ্ছে নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। ক্রেতারা নকলের ভিড়ে আসল ওষুধ পার্থক্য করতে পারছেন না। এতে করে বেকায়দায় পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। ভুক্তভোগীরা জানান, নকল ওষুধগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যে তা আসল না নকল বোঝার সাধ্য থাকে না। এ ছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্ধারিত দামের দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। প্রকাশ্যে এ ধরনের জালিয়াতি চললেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ঔষধ প্রশাসন।

চিকিৎসকরা বলছেন, নকল ওষুধের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। জীবনরক্ষাকারী ওষুধ নিয়ে এমন অব্যবস্থাপনা বড় ধরনের অপরাধ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা নগরী ও জেলা জুড়ে বিভিন্ন ক্লিনিক-হাসপাতালের পাশাপাশি শত শত ওষুধের দোকানও চলছে লাইসেন্স ছাড়াই। কুমিল্লা জেলায় প্রায় সাতশ ফার্মেসির নিবন্ধন নেই। এর মধ্যে পাঁচশর বেশি ফার্মেসির চিত্র শোচনীয়। নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অবৈধ এসব দোকান। তদারকি না থাকায় নকল, ভেজাল, মানহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম বিক্রি হচ্ছে এসব দোকানে। এ ছাড়া মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ওষুধের দামও অস্বাভাবিক বাড়ানো হয়েছে। ফার্মেসিগুলোতে ব্যথানাশক (অ্যান্টিবায়োটিক) ট্যাবলেট এ-ফ্লক্স ১০টি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকায়। উচ্চ রক্তচাপের বাইজোরান ট্যাবলেট ১০টি বর্তমানে ১০০ টাকার বদলে ১২০, মোনাস (১০ মিগ্রা) ১০টি ১৬০ টাকার বদলে ১৭৫ আর ডায়াবেটিসের লিনাগ্লিপ-এম (২.২৫ মিগ্রা) ৩৬০ টাকার বদলে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, ব্যথানাশক, গ্যাসের নিয়মিত ওষুধগুলোর দাম ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ডলার সংকট ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিকে দুষছে ওষুধ কোম্পানিগুলো। তবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের অভিযোগ, ঔষধ প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পদক্ষেপ না থাকায় কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফার্মেসিগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতার কাছ থেকে প্রতিটি ওষুধের বর্ধিত মূল্য আদায় করছেন বিক্রেতারা।

নগরীর ঝাউতলা এলাকার মরিয়াম ফার্মেসির বিক্রেতা মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, দুই সপ্তাহ ধরে ধাপে ধাপে প্রতিটি কোম্পানি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে।

ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসিন্দা ওষুধ ক্রেতা মোক্তার হোসেন বলেন, ‘বাড়িতে অসুস্থ বয়স্ক মা ও শিশু সন্তানের জন্য প্রতি মাসে ওষুধ কেনা বাবদ ৪-৫ হাজার টাকা রাখতে হয়। মা কয়েক বছর ধরেই হৃদরোগ, রক্তচাপ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে সংসার চালাতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডা. আবদুল বাকি আনিছ বলেন, ‘ওষুধ উৎপাদনগোষ্ঠীর শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওষুধের মূল্য কমানোর উদ্যোগ কখনই নেয়নি। করোনার অজুহাতে ওষুধের যে দাম বৃদ্ধি করা হয়, তা এখনো কমানো হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমদানির অজুহাতে ওষুধের উৎপাদন খরচ বাড়ানো হয়, সেখানে সরকার চাইলে ভর্তুকি দিতে পারে। এ ছাড়া ওষুধ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা নিয়ন্ত্রণ না করলে সাধারণ মানুষ এভাবে ভুগতে থাকবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক সালমা সিদ্দিকা বলেন, ‘ওষুধের বাজারে নৈরাজ্য ঠেকাতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকি। তবে সম্প্রতি ওষুধ ও কসমেটিক আইন হয়েছে, যা এখনো তফসিলভুক্ত না হওয়ায় অভিযান পরিচালনা নিয়ে প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। আইনটি তফসিলভুক্ত হলেই জোরেশোরে অভিযান চালানো হবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports