International

গুণগত মানের কারণে চীনা অস্ত্রবাজারে আঘাত লাগতে পারে

বিশ্বে শীর্ষ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম চীন। তাদের অস্ত্র সাশ্রয়ী মূল্যের। এ জন্য তা সহজে কিনতে পারে বিভিন্ন দেশ। এটা সম্ভব হয়েছে বেইজিংয়ের রাজনৈতিক প্রবণতা এবং অনুকূল চুক্তির শর্তাবলীর কারণে। তবে ক্রেতাদের সতর্ক করার একটি বিষয় আছে। কারণ, খদ্দেররা অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণ অথবা চীনা কোম্পানির সমর্থিত নয় এমন উৎস থেকে তা ক্রয় করে থাকে। অনলাইন এএনআই’তে প্রকাশিত দীর্ঘ এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) ডাটা অনুযায়ী ২০২২ সালে বিশ্বের শীর্ষ একশত অস্ত্র উৎপাদনকারীর মধ্যে চীনের আটটি কোম্পানি আছে। সেগুলো হলো এভিআইসি, নোরিনকো, চায়না সাউথ ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ করপোরেশন, চায়না এরোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন (সিএএসআইসি), চায়না এরোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি করপোরেশন (সিএএসসি) এবং চায়না ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি গ্রুপ করপোরেশন (সিইটিসি)। তাদের সম্মিলিত রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ১০৮০০ কোটি ডলার।

আগের বছরের তুলনায় এই অর্থ শতকরা ২.৭ ভাগ বেশি। তবে ২০১৩-২০১৭ সময়ের তুলনায় ২০১৮-২০২২ সময়কালে চীনের অস্ত্র বিক্রি কমে গেছে শতকরা ২৩ ভাগ। 
গুণগত মান এটাই পরামর্শ দেয় যে, চীন থেকে কেনাকাটায় ঝুঁকি থাকে। একটি বড় উদাহরণ হলো, ২০১৬ সালে জর্ডানের ৬টি সিএইচ-৪বি অস্ত্রবাহী ড্রোন কেনা। অবিশ্বাস্যভাবে তা অপারেশনে নামানোর তিন বছরের কম সময়ের মধ্যে সেসব ড্রোন বিক্রি করে দিতে উদ্বুদ্ধ হয় জর্ডান। চীনের তৈরি ড্রোনগুলোর দুর্ঘটনার হারও তুলনামূলকভাবে বেশি। ইরাকের ২০টি সিএইচ-৪বি ড্রোনের মধ্যে আটটি অপারেশনের দু’এক বছরের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়েছে। বাকিগুলোর খুচরা যন্ত্রপাতির অভাবে গ্রাউন্ডেড করে রাখা হয়েছে। 

একইভাবে আলজেরিয়া মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তিনটি সিএইচ-৪বি হারিয়েছে। মজার বিষয় হলো মরক্কো, নাইজেরিয়া এবং তুর্কমেনিস্তানের মতো চীনা ড্রোনের অন্য ব্যবহারকারীরা চীনের পরিবর্তে তুরস্কে তৈরি ড্রোন বা এয়ারক্রাফটের দিকে চলে গেছে। 

গত বছর সিঙ্গাপুরে স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের এস রাজারত্নম প্রকাশিত একটি রিপোর্টে প্রয়াত রিচার্ড বিটজিঙ্গার একটি প্রশ্ন তুলেছেন- অস্ত্র রপ্তানিতে সফলতার গোপন কাহিনী কি? ব্যবসার পুনরাবৃত্তি। পারফরমেন্স, নির্ভরতা, দাম, রাজনৈতিক জোট এবং আরও অনেক কারণে দেশগুলো সুনির্দিষ্ট দেশের কাছ থেকে অস্ত্র কেনে। একটি অস্ত্র উৎপাদনকারী হিসেবে সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একটি বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদেশি গ্রাহক সৃষ্টি করা। এসব গ্রাহক ওইসব দেশ, যারা বছরে পর বছর আরও অস্ত্র কিনতে ফিরে আসেন। বিটজিঙ্গার আরও বলেন, এটা সত্য যে, বিশ্বজুড়ে যেসব অস্ত্র ব্যবসা হয় তার শতকরা ৫ ভাগ চীনের। এর অর্থ হলো এখনও বিশ্ব বাজারে অস্ত্রের একটি বড় বাজার হিসেবে রয়ে গেছে চীন। তারা খুব অল্প সংখ্যক দেশে অস্ত্র বিক্রি করে। প্রকৃতপক্ষে গত ২০ বছরে চীনের যত অস্ত্র বিক্রি হয়েছে তার শতকরা কমপক্ষে ৬০ ভাগ অস্ত্র কিনেছে তিনটি দেশ। তারা হলো বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং পাকিস্তান। 

এটা উল্লেখ করার বিষয় যে, কিছু দেশ যারা এক সময় চীন থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অস্ত্র কিনতো, তারা এখন তা বন্ধ করে দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আলজেরিয়া, মিশর, ইরান, শ্রীলঙ্কা এবং তুরস্কের নাম। বিটজিঙ্গার বলেন, যদি চীনের অস্ত্র ব্যবস্থা বাস্তবেই ভাল হতো তাহলে তাদের বাজারের আবেদন এতটা সীমিত কেন? এখনও কেন তাদের প্রচলিত কাস্টমারের ভিত্তি এত ছোট? কেউ মনে করতে পারেন চীনা অস্ত্র আগের চেয়ে অবশ্যই ভাল। কিন্তু এখনও তা যথেষ্ট ভাল নয়। অন্য বিদেশি অস্ত্র তৈরিকারকরা যেমন পশ্চিমা, রাশিয়ান এবং ইসরাইল এসব ক্ষেত্রে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। 
অসন্তুষ্ট ক্রেতার তালিকা দীর্ঘ। এটা রিপোর্ট করা হয়েছে যে, চীনের কাছ থেকে সেকেন্ড-হ্যান্ড যে দুটি মিং-শ্রেণির সাবমেরিন কিনেছে বাংলাদেশ তা ব্যবহারের অযোগ্য। অন্যদিকে চীনে তৈরি ওয়াই-১২ এবং এমএ৬০ পরিবহন এয়ারক্রাফট ফেরত দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কে-৮ডব্লিউ প্রশিক্ষণ জেটবিমান নিয়ে গোলাবারুদ নিক্ষেপের বিষয়ে অভিযোগ করেছে। 

একইভাবে ইন্দোনেশিয়া চীনের কাছ থেকে কিনেছিল সি-৭০৫ এন্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু মহড়ার সময় তা যথাযথ টার্গেটে আঘাত করতে ব্যর্থ হয়। আরেকটি উদাহরণ হলো, ২০০৯ সালে নাইজেরিয়ার কেনা এফ-৭ যুদ্ধবিমান। কয়েকটি বিধ্বস্ত হয়েছে। বাকি সাতটি ভালভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০২০ সালের দিকে চীনের কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছে। 

২০১৬ সালে চীনের কাছ থেকে ১৬টি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান কেনে মিয়ানমার। কিন্তু এর গাঠনিক এবং ইঞ্জিনের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। একই সঙ্গে এটাতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার রাডারের সঙ্গে যথার্থভাবে কাজ করে না। ২০২২ সালের নভেম্বরের রিপোর্টে বলা হয়, মিয়ানমার তার জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান গ্রাউন্ডেড করে রেখেছে। একই সঙ্গে তার এগারটি ডেলিভারি বিমানকে অপারেশনের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। চীনে তৈরি এসব যুদ্ধবিমান বা অস্ত্র নিয়ে চীনের ওপর নির্ভর করতে না পেরে কিছু ক্রেতা প্রয়োজনীয় সমর্থন পেতে তৃতীয় দেশে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এভাবে জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানকে সক্রিয় ও যোগ্য করে তুলতে পাকিস্তানি প্রযুক্তিবিদদের সহায়তা নেয় মিয়ানমার। 
এ রকম সমস্যা যে শুধু এয়ারক্রাফট নিয়ে তা নয়। পাকিস্তানের নৌবাহিনী চীনের কাছ থেকে চারটি এফ-২২পি ফ্রিগেট কিনেছে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে এতে দুর্বল পারফরমেন্স, খারাপ ইঞ্জিন এবং নানাবিধ টেকনিক্যাল সমস্যার বিষয়ে রিপোর্ট করে ইসলামাবাদ। জাহাজের এফএম৯০এন ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ব্যবস্থা অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তাদের আইআর১৭ ইনফ্রারেড বাতিল করতে হয়েছে। কারণ এগুলো টার্গেটে আঘাত করতে পারে না। বেইজিং এসব ফ্রিগেটকে মেরামত করে দিতে অনাগ্রহ দেখানোর পর পাকিস্তান তা আপগ্রেড করতে তুরস্কের সহায়তা চায়। 

উপরন্তু চীনা এসব সরঞ্জাম পশ্চিমা ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে বেমানান। এতে আরও ক্লেশ তৈরি করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছর চীনের কাছ থেকে একটি টাইপ ০৭১ই উভচর অ্যাসল্ট ভেসেল সংগ্রহ করে রয়েল থাই নেভি। কোনো অস্ত্র, সেন্সর এবং যুদ্ধ বিষয়ক ব্যবস্থাপনা ছাড়াই তা সরবরাহ দেয়া হয়। এতে যেসব সরঞ্জাম মিসিং আছে তা মেরামত করতে পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর কাছে যাবে থাইল্যান্ড। এতে খরচও অনেক। একইভাবে রাডার এবং পুরাতন চীনা তৈীর ফ্রিগেডের যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম আপগ্রেড করতে সা’ব-এর মতো কোম্পানির কাছে যেতে হয়েছে থাইল্যান্ডকে। ২০২৩ সালে চীনা সামরিক বিষয়ে এক রিপোর্টে পেন্টাগন বলেছে, বিশ্ব মানের বা তার কাছাকাছি স্থল ব্যবহারের জন্য অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম চীন। যদিও কিছু কাস্টমার রপ্তানি করা পণ্যগুলোর গুণগত মান নিয়ে অসন্তুষ্ট। এর ফলে চীনের রপ্তানি বাজার প্রসারণে বাধা সৃষ্টি করে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, বিশ্বে পঞ্চম বৃহৎ অস্ত্র সরবরাহকারী চীন। বহু উন্নয়নশীল দেশ চীনা অস্ত্র কেনে। কারণ, তুলনামূলক অস্ত্রের চেয়ে এসব অস্ত্রের দাম কম। যদিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাস্টমার চীনে তৈরি অস্ত্রকে নিম্ন মান এবং এর ওপর নির্ভরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে চীনে ব্যবস্থায় বেশ কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যেমন দান, পাওনা পরিশোধের সহজ পদ্ধতি। এসবের কারণে ক্রেতাদের কাছে তাদের আবেদন তৈরি করছে। 

বিটজিঙ্গার একমত যে, কয়েক দশকের মতো শক্তিশালী অস্ত্র রপ্তানি হিসেবে অবস্থান এখনও বিদ্যমান চীনের। তারা এসব সরঞ্জাম অনেক কম দাম ধরে। বিশেষ করে বেইজিং সেই ধরনের অস্ত্রের ওপর আধিপত্য করার চেষ্টা করে, যেগুলোকে কমোডিটি বা পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এখানে খরচ, প্রযুক্তি বা ক্ষমতার বিপরীতে প্রায়শই মূল নির্ধারক ফ্যাক্টর এসব। এমন উদাহরণের মধ্যে আছে ছোট অস্ত্র, গোলাবরুদ, আর্টিলারি রাউন্ড এবং হালকা সাঁজোয়া যান। সশস্ত্র ড্রোন বিক্রির ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে লাভজনক স্থান তৈরি করেছে চীন। 

নতুন সরঞ্জামের জন্য চুক্তি, রপ্তানি গ্রাহকদের জন্য হতাশার হতে পারে, যারা চীনা কোম্পানির কাছ থেকে কেনার পর তাদের সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করছে। সময়মত সহায়তা দেয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর জন্য সামান্য প্রণোদনা নেই। কারণ, চুক্তিগুলি হয় সরকারের মাধ্যমে এবং তারা দুর্বল গ্রাহক সেবার কারণে বাণিজ্যিকভাবে পরাজিত হতে আসে না। অন্যদিকে চীনা প্রতিরক্ষা শিল্পের দ্রুত সরঞ্জাম প্রস্তুত করার ক্ষমতা বা এর সরঞ্জাম প্রযুক্তিগত স্পর্শকাতরতার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। 

প্রধানত চীনের অস্ত্র বিক্রি হয় আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার অল্প কিছু উন্নয়নশীল দেশে। পশ্চিমাদের ওপর নির্ভর করতে চায় না, এমন কিছু দেশের কাছেও চীন অস্ত্র বিক্রি করে। কার কাছে অস্ত্র বিক্রি করা হচ্ছে এ বিষয়ে বিশেষভাবে বিচক্ষণ নয় বেইজিং। তারা মিয়ানমারের মতো স্বৈরাচারের কাছে অস্ত্র সরবরাহ দিতে পেরে খুশি। সেখানে সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে কিভাবে অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে বা দেশে মানবাধিকারের দুর্বল রেকর্ড থাকার বিষয়ে তারা মোটেও আমলে নেয় না। আসল বিষয় হলো এক্ষেত্রে কয়েকটি স্ট্রিং সংযুক্ত করা হয়েছে, বিশেষ করে যদি যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের সঙ্গে তুলনা করা হয়। 

প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অস্ত্র সরবরাহকারীদের পরিবর্তে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে চীন। সম্ভবত তারা এক্ষেত্রে কাস্টমারদের লুফে নিচ্ছে। কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধে দখলদারদের অস্ত্র সরবরাহ দিচ্ছে রাশিয়ার প্রস্তুতকারকরা। তাদের নিজেদের যুদ্ধ কৌশলে সরঞ্জাম দিচ্ছে। এসব বিষয় বাস্তবায়িত হয় কিনা তা ভবিষ্যৎ ডাটাই বলে দেবে। 

অস্ট্রেলিয়া, জাপান অথবা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে যুক্ত হয়েছে একই রকম চুক্তি করেনি চীন। সবকিছুকে উপেক্ষা করে তারা রাজনৈতিক সংযোগকে শক্তিশালী করতে অস্ত্র বিক্রিকে ব্যবহার করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবমুক্ত করার চেষ্টা করেছে। তারা তাদের ‘সফট পাওয়ার’কে শক্তিশালী করতে চায়। এজন্য প্রতিরক্ষা বিক্রয় ব্যবহার করছে। তারা ক্রেতাদেরকে তাদের যাবজ্জীবনের সরঞ্জামের জন্য নির্ভরশীল করছে। 

পেন্টাগন বলছে, চীনের অস্ত্র বিক্রি হয় প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রীয় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এভিআইসি এবং নোরিনকোর মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। চীনের পররাষ্ট্র নীতির একটি অংশ হলো অস্ত্র বিক্রি করা। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রনীতিতে অস্ত্র বিক্রির সঙ্গে অন্যান্য ধরণের সহযোগিতাকেও যুক্ত করে। 

চীন ২০১০ দশকের শুরুর দিকে অস্ত্র রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে আইনে পরিণত করে। তারপর থেকে এটি তাদের জাতীয় পর্যায়ের আইনি এবং নীতি কাঠামো গঠনের জন্য রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কারের জন্য কাজ করেছে। এরই মধ্যে ২০২০ সালের ১লা ডিসেম্বর সরকার একটি নতুন এক্সপোর্ট কন্ট্রোল ল নামে আইন বাস্তবায়ন করেছে। এই আইনে মূলত তিনটি মূলনীতি আছে। তা হলো- নিশ্চিত করতে হবে যে অস্ত্র রপ্তানি হতে হবে একটি দেশের বৈধ আত্মরক্ষার সক্ষমতার সহায়ক, রপ্তানিতে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে এতে যেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চল এবং বিশ্বের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট না করে এবং গ্রহীতার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। ২০২০ সালের ৪ঠা অক্টোবর আর্মস ট্রেড ট্রিটি’তে (এটিটি) যুক্ত হয় চীন। এই গ্রুপটি কৌশলগত বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলে এবং তা চীনকে বাস্তবায়ন করতে হবে। ন্যূনতম একটি পেপার অনুযায়ী এটিটির আইন দ্বারা অস্ত্র হস্তান্তর না করার জন্য বাধ্য চীন, যেখানে সেগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে বা যেখানে সেগুলি নিষিদ্ধ ব্যবহারকারীদের দিকে সরানো যেতে পারে। 
চীনের সামনে এখনও অনেক পথ বাকি আছে। স্মল আর্মস ট্রেড ট্যান্সপারেন্সি ব্যারোমিটার ২০২২ সালে চীনকে বিশ্বের সবচেয়ে বাজে অস্ত্র রপ্তানির আট নম্বর হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। একই তালিকায় সবচেয়ে নিচের তালিকায় আছে ইরান ও উত্তর কোরিয়া। জাতিসংঘের রেজিস্টার অব কনভেনশনাল আর্মসকে কোনো ডাটা সরবরাহ দেয় না চীন। 

দুর্ভাগ্যজনকভাবে চীনা অস্ত্রগুলো আফ্রিকার মতো জায়গায় রাষ্ট্রীয় নয় এমন ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছেছে। সেখানে ক্রেতাদের দুর্বল নজরদারি বা সম্ভবত চীনা বিক্রেতাদের সরাসরি জড়িত থাকার কারণে এমন হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সুদানের দারফুরে এবং কঙ্গোতে রাষ্ট্রীয় নয় এমন ব্যক্তিদের হাতে পাওয়া গেছে চীনা অস্ত্র। 

২০১৮ সালের আগস্টে ইএক্সএক্স আফ্রিকার এক রিপোর্টে ইঙ্গিত দেয়া হয় যে, আফ্রিকার অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধি পাচ্ছে চীনের। ২০২১ সালে ফরাসি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক রিপোর্ট লিখেছেন বার্নার্দো মারিয়ানি। তিনি বলেছেন, চীনের তৈরি অস্ত্র আফ্রিকা মহাদেশে প্রবেশ করছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সময়কালে সাব-সাহারান আফ্রিকায় দ্বিতীয় বৃহৎ অস্ত্র বিক্রেতা ছিল চীন। সেখানে বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে চীনা অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এর মধ্যে আছে বিরাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী। তারা বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। 

আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করা সত্ত্বেও প্রকৃতপক্ষে কি পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি হয় সে ব্যাপারে তথ্য প্রকাশে চীনের বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও কিছু দেশ চীনা অস্ত্র সস্তায় পাওয়ার জন্য তাদেরকে বেছে নিচ্ছে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor