Bangladesh

জ্বালানি তেলের দাম কমার সুফল মিলছে না

আজিমপুর থেকে কুড়িল বিশ্ব রোড পর্যন্ত চলাচল করে দেওয়ান পরিবহন। রোহান নামের এক বাসযাত্রী নিয়মিত চলাচল করেন ওই পরিবহন বাসে। প্রায় প্রতিদিন তিনি কাওরান বাজার থেকে আজিমপুর যাতায়াত করেন। জানান, গত বছর তেলের দাম বাড়ানোর পরে কাওরান বাজার থেকে আজিমপুর রুটে ভাড়া ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হয়। পরিবহনটি এখনো তা বলবৎ রেখেছে। দু’দিন আগে পরিবহনটিতে চলতে গিয়ে সরজমিন দেখা যায়, কাওরান বাজার থেকে আজিমপুর ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতাণ্ডা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম কমার পরে আগের নির্ধারিত ভাড়া দিতে চাইছেন না অনেক যাত্রী। এই নিয়ে চলে বাসের মধ্যে প্রচণ্ড হৈচৈ। এসময়ে বাস শ্রমিককে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, লিটারে কয় পয়সা কমিয়েছে। ভাড়া এক টাকাও কম দিতে পারবেন না। না দিলে কাওরান বাজার থেকে ওঠা যাত্রীদেরকে বাংলামোটর নেমে যাওয়ার পরামর্শ দেন বাস কন্ট্রাক্টর। বিহঙ্গ পরিবহনে নিয়মিত চলাচল করেন এমন একজন যাত্রীও একই অভিযোগ করে জানান, জ্বালানি তেলের দাম কমার সুফল তো আমরা সাধারণ জনগণ পাইনি। তাহলে ঢাকঢোল বাজিয়ে দাম কমানোর ঘোষণা দিয়ে লাভ কী হলো। 

শুধু এসব পরিবহনেই নয়, অন্যান্য পরিবহনে ভাড়া কমার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জ্বালানি তেলের দাম কমায় নিত্যপণ্যের দাম কমেনি বলে সাধারণ ভোক্তারা জানিয়েছেন। দেশে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ চালু করেছে সরকার। প্রথমবারের মতো স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে চলতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম সামান্য কমেছে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রতি মাসেই মূল্য সমন্বয় করা হবে। আগামী মাসে জ্বালানির তেলের দাম কমবে নাকি বাড়বে এমন প্রশ্নও এখন অনেকের মাঝে। 

গত ৮ই মার্চ থেকে নতুন দর কার্যকর হয়েছে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই দাম সমন্বয় করার কথা বলছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনে দাম কমেছে ৭৫ পয়সা। পেট্রোলে কমেছে ৩ টাকা ও অকটেনে কমেছে ৪ টাকা। এতে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৯ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা। ভেজাল প্রতিরোধে কেরোসিনের দাম ডিজেলের সমান রাখা হয়। অকটেনের দাম ১৩০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১২৬ টাকা। আর পেট্রোলের দাম ১২৫ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১২২ টাকা।

মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক মো. তারিকুল ইসলাম এব্যাপারে বলেন, বিআরটিএ’র আদেশের নিরিখে আমরা চলাচল করি। কিন্তু সরকারের জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পর বিআরটিএ থেকে ভাড়া কমানোর কোনো আদেশ বা চিঠি আমরা পাইনি। সরকার প্রতি লিটার ডিজেলে দাম কমিয়েছে মাত্র ৭৫ পয়সা। এটা বড় বড় পরিবহন ছাড়া বাস্তবতার নিরিখে ছোট পরিবহনের পক্ষে মানা সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি জানান, এখন যাত্রী সংখ্যা খুবই কম। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগে ভোক্তা পর্যায়ে তেমন কোনো সুফল মিলছে না। তেলের দাম কমলেও পরিবহন ভাড়া কমে না কোথাও। কিন্তু দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থাৎ যখন বিশ্ববাজারে দাম কম এবং দেশে বেশি থাকে, তখন বাড়তি মুনাফা আলাদা তহবিলে রাখতে হবে। আবার যখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়বে, তখন দেশে দাম না বাড়িয়ে ওই তহবিলের অর্থ দিয়ে সমন্বয় করতে হবে। 

জ্বালানি তেল সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে পরিবহন খাতে। কিন্তু দাম কমানোর ফলে পরিবহন মালিকরা গণপরিবহনের ভাড়া কমানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে যাদের ব্যক্তিগত পরিবহন আছে, তাদের খরচ সামান্য কিছু কমেছে। ব্যক্তিগত অনেক মালিকদের বলতে শোনা গেছে দাম কমায় সামান্য কয়েক ফোঁটা তেল বেশি পাওয়া যায়। এতে তেমন লাভ হয়নি তাদের।

জ্বালানি তেলের দাম কমায় সাধারণ ভোক্তারা কী সুফল পাচ্ছেন-জানতে চাইলে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, এতে সাধারণ মানুষ কোনো সুফল পায়নি। জ্বালানির বিষয়ে ভোক্তার মৌলিক বিষয় হলো সঠিক দাম নির্ধারণ, সঠিক মানের এই পণ্যটি পাওয়া। তা রাষ্ট্র সুরক্ষা করতে পারেনি। দাম নির্ধারণ করার কথা ছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। জ্বালানি বিষয়ে  অধিকার খর্ব  করা হয়েছে। আইন রহিত করার ফলে আমরা কোনো সুফল পাচ্ছি না। জ্বালানির  সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।

ক্যাব  বলেছে, বিশ্ববাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। এর মানে হলো প্রায় সময়ই দাম ওঠানামা করবে।  কারণ তেলের দাম কমা, বাস বা ট্রাকের ভাড়া কমেনি। কিন্তু তেলের দাম বাড়ানো হলে পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাবে। অর্থাৎ দাম ওঠানামার কার্যক্রমের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং মানুষ এখনো অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। ক্যাবের সুপারিশ ছিল জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে হবে। যখন বিশ্ববাজারে দাম কম থাকবে, কিন্তু আমাদের দেশে থাকবে বেশি, সেই সময় বাড়তি মুনাফা আলাদা একটি তহবিলে রাখতে হবে। আবার যখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়বে, তখন দেশে দাম না বাড়িয়ে ওই তহবিলের অর্থ দিয়ে সমন্বয় করতে হবে। না হলে ভোক্তারা সুফল পাবে না।
জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয় গত ২৯শে ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রোল ব্যক্তিগত যানবাহনে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাসদ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসেবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রোলের দাম বেশি রাখা হয়। অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি করে সব সময়ই মুনাফা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি। মূলত ডিজেলের ওপর বিপিসি’র লাভ-লোকসান নির্ভর করে। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল। দীর্ঘ সময় ধরে ডিজেল বিক্রি করেও মুনাফা করছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে বর্তমানে ডিজেল থেকে তেমন মুনাফা হচ্ছে না। খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও আগেই দাম কমানোর সুযোগ ছিল।

ভর্তুকির চাপ এড়াতে ২০২২ সালের আগস্টে গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৩ দিনের মাথায় ওই মাসের শেষ দিকে প্রতি লিটারে ৫ টাকা করে কমানো হয় দাম। ডিজেলের দাম কমলে বাস ও ট্রাক মালিকদের খরচ কমবে। সেচের ব্যয়ও কমবে। অকটেন ও পেট্রোলের দাম কমলে ব্যয় কমবে গাড়ি ও মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের। যদি বাস ও ট্রাকভাড়া না কমে, তাহলে পণ্যের পরিবহন ব্যয়ও কমবে না। সাধারণ মানুষ সুফল পাবে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto