Bangladesh

তপ্ত দ্বীপে পরিণত হচ্ছে ঢাকা

  • ২৫ শতাংশ গাছপালা দরকার থাকলেও আছে মাত্র ৮ শতাংশ
  • তাপ বাড়ানোর সব উপাদান এখানে বিদ্যমান: পরিবেশবিদ

সবুজের সমারোহ বিলীন হয়ে ক্রমেই ধূসর হচ্ছে রাজধানী ঢাকা। সবুজ ভূমির ঢাকা সময়ের বিবর্তনে হয়ে গেছে কংক্রিটের শহর। ফলে এ শহরের তাপমাত্রাও দিন দিন মরুভূমির মতোই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ শহর থেকে সবুজ ও জলাশয় রক্ষায় উদ্যোগ না নেওয়ায়, তাপমাত্রা আরো বেশি ভোগাচ্ছে আমাদের। নতুন করে গাছ না লাগিয়ে গাছ কাটাসহ সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারিতাও এর জন্য দায়ী। মানুষের বাড়তি চাপে নানা স্থাপনা তৈরির ফলে উন্মুক্ত প্রান্তরও কমছে। পানির স্তরও নেমে যাচ্ছে। ঢাকা হয়ে উঠছে ‘হিট আইল্যান্ড’ অথবা তপ্ত দ্বীপ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, কোনো এলাকায় সবুজ এলাকা কম থাকলে এবং কংক্রিটের পরিমাণ বেশি থাকলে তাপমাত্রাও বেশি থাকে। অধিক তাপমাত্রার এই এলাকাগুলোই ‘হিট আইল্যান্ড’ হয়ে ওঠে। ঢাকাও দিন দিন সেদিকেই যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকার বাসযোগ্যতা ফেরাতে সবুজ এলাকা ও জলাশয় রক্ষা করতে হবে। এ ধরনের এলাকা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ঢাকা শহর থেকে প্রতি বছর গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আদর্শ একটি শহরে মোট আয়তনের অন্তত ২৫ শতাংশ সবুজ থাকার কথা। উদ্বেগজনক হলেও সত্যি—কোটি মানুষ অধ্যুষিত ঢাকায় বর্তমানে রয়েছে ৮ শতাংশের কম।। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) ২০২০ সালের জরিপে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে ঢাকার কেন্দ্রীয় এলাকায় সবুজ ও খোলা জায়গার পরিমাণ ছিল ২১ শতাংশ। ক্রমান্বয়ে তা কমতে কমতে ২০২০ সালে ঢাকার সবুজ ও খেলার মাঠের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ শতাংশ। বর্তমানে সেটি সাড়ে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

গত বছর বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ ‘ঢাকা নগরীর সবুজ এলাকা এবং এর রাজনৈতিক অর্থনীতি’ নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়,   ঢাকা মহানগরে ২০ শতাংশ সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন, সেখানে আছে সাড়ে ৮ ভাগের কম। তা-ও এসব এলাকা সীমানাপ্রাচীরসহ নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

একই বছর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপ) ল্যান্ডসেট স্যাটেলাইট বিশ্লেষণ করে এক গবেষণায় উল্লেখ করে, গত ২৮ বছরে ঢাকা থেকে অন্তত ৪৩ শতাংশ সবুজ এলাকা ধ্বংস হয়েছে। একই সময়ে ঢাকা থেকে ৮৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। এই সময়ে নির্মাণ এলাকা বা স্থাপনা বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। অর্থাত্ গবেষণা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, সবুজ গাছপালা এবং জলাশয় ধ্বংস করে কংক্রিটের স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। এমনকি পার্ক ও খেলার মাঠসহ খোলা জায়গাগুলো কংক্রিট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় বিআইপি। একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে ঢাকা থেকে সবুজ বিলীন হয়ে গেছে। এ মহানগরীতে এখন সবুজ বলতে রয়েছে গুটিকয় উদ্যান ও পার্ক। এগুলোর অধিকাংশেরই আবার নেই কোনো রক্ষণাবেক্ষণ।

ঢাকার সবুজায়নে ভূমিকা রাখে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এসব সংস্থার মাঠ-পার্ক রয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেকের খোলা জায়গা রয়েছে। সেসব খোলা জায়গা এবং সবুজায়ন ধ্বংস করে বহুতল ভবন করা হয়েছে। পরিবেশের প্রতি নজর নেই সিটি করপোরেশনেরও। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২০২১-২২ অর্থবছরে উদ্যান ও খেলার মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল মাত্র ৫ হাজার টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাখা হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন খালের উন্নয়ন, সীমানা নির্ধারণ ও বৃক্ষায়ন খাতে ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৪ কোটি, যদিও সংশোধিত বাজেটে সেটা দাঁড়ায় মাত্র ৬ কোটিতে। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। তবে দুই সিটি করপোরেশনের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুধু বিদ্যমান পার্ক এবং খেলার মাঠের চারপাশেই সীমাবদ্ধ।

সিটি করপোরেশন রাস্তার দুই পাশে বা মিডিয়ানে যে গাছ লাগানোর কর্মসূচি নিয়ে থাকে, সেখানেও পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, একটা রাস্তায় বা মিডিয়ানে কোনো গাছ লাগালে সেটি বাঁচবে, আর কোনো গাছ লাগালে পরবর্তী সময়ে ঝড়ে উপড়ে পড়বে—এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা ছাড়াই যে যার ইচ্ছেমতো গাছ লাগায়। এতে কিছু দিন পর আবার সেই গাছ কেটে ফেলতে হয়। আবার কিছু গাছ অঙ্কুরেই মারা যায়। তাছাড়া গাছ লাগানোর পর ফটোসেশন শেষ হলেই সেগুলোর পরিচর্যা কিংবা অস্তিত্বের কথাই আর মনে রাখে না সংশ্লিষ্টরা।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান ও পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘তাপ বাড়ার যত কারণ, সবই ঢাকায় আছে। কিন্তু তাপ কমানোর যত উপাদান আছে, তার কোনোটিই নেই। ধারণক্ষমতার চেয়ে তিন গুণ বেশি মানুষ বাস করছে এ শহরে। ৫ থেকে ৬ লাখ যানবাহনের ক্যাপাসিটি থাকলেও চলছে ১৬ লাখের বেশি। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় ভূমি শীতল হচ্ছে না। যার কারণে মাটিও তাপ শোষণ করতে পারছে না।  তিনি বলেন, দিনের বেলায় যে তাপমাত্রা থাকে, রাতের বেলা তা কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি রাতের ঢাকাও উত্তপ্ত থাকছে। এগুলো হচ্ছে আরবান হিট আইল্যান্ড প্রক্রিয়ার কারণে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports