দেড় দশকে কোটিপতি বেড়েছে এক লাখ: ব্যাংকের ৩০ ভাগ আমানত কোটিপতিদের দখলে
দেশে অস্বাভাবিক হারে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত দেড় দশকে (২০০৯-২০২৩) কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক লাখ। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে এর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১৭ হাজার। এ সময়ে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক লাখ, যা শতকরা হিসাবে ৫১৫ ভাগ। গত তিন মাসেই কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। গত সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬ জন। এ কোটিপতিদের ব্যাংক হিসাবে টাকার পরিমাণ ৫ লাখ ১৭ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। আর এ অর্থ ব্যাংকের মোট ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৩২ কোটি টাকা আমানতের প্রায় ৩০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন আকারের আমানতের হিসাব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ প্রতিবেদন তৈরি করেছে গত ডিসেম্বরভিত্তিক পরিসংখ্যান নিয়ে। ওই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতে শুধু এক কোটি এক টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার ওপরে মজুদ রয়েছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯২ হাজার ৫১৬টি। এসব অ্যাকাউন্টের বিপরীতে অর্থ মজুদ রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। আর ৭৫ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট আছে আরো ৭৭ হাজার ৫১৬টি। এর বিপরীতে অর্থমজুদ রয়েছে প্রায় ৬৯ হাজার কোটি টাকা। ১২ হাজার ৬৫২টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে ৫ কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত হিসাবধারীদের। তাদের অ্যাকাউন্টে মোট টাকা রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকিং খাতে ১০ কোটি টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত এমন অ্যাকাউন্টধারী রয়েছে চার হাজার ৮২ জন। যাদের আকাউন্টে টাকা রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। আবার ১৫ কোটি টাকা থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট রয়েছে দুই হাজার দুইটি। যাদের অ্যাকাউন্টে রয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ২০ কোটি টাকা থেকে ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট রয়েছে এক হাজার ৩৪৫টি। তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি টাকা রয়েছে ৫০ কোটি টাকার ওপরে হিসাবধারীদের। তাদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে এক হাজার ৮১২টি। এর বিপরীতে অর্থ মজুদ রয়েছে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৭ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পণ্যমূল্যে মানুষ যখন দিশেহারা, তখনো দেশে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা। এর অর্থ হলো টাকা কিছু মানুষের কাছে পুঞ্জীভূত হয়ে যাচ্ছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে নানা সঙ্কট আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির যাঁতাকলে পিষ্ট নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে পারছে না। ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারছে না। ব্যাংকে টাকা জমানো তো দূরের কথা, অনেকে আগের জমানো অর্থ ভেঙে খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতেও একশ্রেণীর মানুষের আয় বেড়েছে। এরা বিত্তশালী বা বড় প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।