Bangladesh

দেশে বাড়ছে বেকারত্ব

কাজের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার হার বেড়েছে ষ চোখ ধাঁধাঁনো উন্নয়নে কর্মসংস্থান গড়ে না ওঠায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশ গিয়ে দেশে ফিরছেন না, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতি ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার শঙ্কায় গ্রার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের কাজ হারানোর ভয়, শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানে যে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগের প্রয়োজন তা হচ্ছে না :ড. সেলিম রায়হান ষ দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারত্ব, ছদ্ম বেকারত্ব, মৌসুমি বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে Ñড. এ কে এস মুরশিদ

দেশে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। চোখ ধাঁধাঁনো উন্নয়ন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে ট্যানেল, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ রাজধানীতে অসংখ্য ফ্লাইওভার গড়ে উঠলেও পর্যাপ্ত কর্মক্ষেত্র বাড়েনি। গত কয়েক বছরে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তেমন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়নি। ফলে প্রতিবছর পাস করে ছেলেমেয়েরা চাকরি না পেয়ে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কেউ বিদেশ চলে যাচ্ছেন; কেউবা ধুকেধুকে মরছেন। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে সরকারি পাটকল, চিনিকল বন্ধ করে দেয়া এবং গ্যাস বিদ্যুতের অভাবে বেসরকারি কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কমে যাওয়ায় শ্রমিকরা চাকরি হারাচ্ছেন এবং বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি কমে যাওয়া এবং যুক্তরাষ্টের জো বাইডেন প্রশাসনে শ্রমনীতিতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা চলছে। এ ছাড়াও রাজনৈতিক কারণে বিদেশীদের নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহী না হওয়ায় গার্মেন্টস শিল্পে বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।


জানতে চাইলে বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. এ কে এস মুরশিদ বলেন, মাসে একদিন কয়েক ঘণ্টা কাজ পেলেই তাকে আর বেকার বলা হয়না। দেশে ছদ্ম বেকারত্ব আছে। যেমন কৃষিজমিতে যেখানে পাঁচজন লোক দরকার সেখানে ১০ জন কাজ করছেন। মৌসুমি বেকারত্ব আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যারা উচ্চ শিক্ষা নেন তারা বেকার থাকেন বেশি। অন্যান্য পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা বেকারের সংখ্যা কম। এখানেই কোয়ালিটি এডুকেশনের প্রশ্ন আসে। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। চাহিদা আছে কিন্তু দক্ষতা না থাকায় তারা কাজ পাচ্ছেন না। তাই বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পে প্রচুর বিদেশি দক্ষ লোক কাজ করেন। বাংলাদেশিরা শিক্ষিতরা ওই কাজ পারলে নিশ্চয়ই প্রাধান্য পেতেন। তবে সবার জন্য নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করা আবশ্যক।


বিবিএসের ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, দেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা তিন কোটি ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৮১১ জন। যা মোট জনসংখ্যার ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে যুবগোষ্ঠীর বড় অংশ আর্থসামাজিক ঝুঁকির মধ্যে আছে। বৈষম্য আর গুণগত শিক্ষার অভাবে ৭৮ শতাংশ তরুণ মনে করেন, পড়াশোনা করে তারা চাকরি পাবেন না, গরিব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৯০ শতাংশ। চাকরি, পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণে নেই ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণের। বাংলাদেশউন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক জরিে দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশ তথা দুই-তৃতীয়াংশই বেকার থাকছেন। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখের বেশি। বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি। নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি না হওয়ায় প্রতিবছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছে (৩ ভাগের ২ ভাগ)। মাত্র ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্য কোনো বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজের উদ্যোগে কাজ করছেন। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই বেকার থাকছেন। অথচ পার্শ্ববর্তী ভারতে এই হার মাত্র ৩৩, পাকিস্তানে ২৮, নেপালে ২০ আর শ্রীলঙ্কায় মাত্র ৭ দশমিক ৮। এতেই বোঝা যায়, আমাদের দেশ থেকে আমাদের প্রতিবেশী দেশের বেকারত্বের হার কত কম।


দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় নতুন কর্মক্ষেত্র তেরি হচ্ছে না। মার্কিন ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ থাকলেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানিয়ে গত বছরের মাঝামাঝি সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছিলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা ও এখানে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির ইচ্ছার কথা জানতে পেরেছি। বাংলাদেশের বাজার খুবই আকর্ষণীয়। কিন্তু বিনিয়োগে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা বলেন। উদ্বিগ্ন যে, ডেটা সুরক্ষা আইন যদি ডেটা স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করার শর্ত দিয়ে অনুমোদন করা হয় (আইনে পরিণত করা হয়) তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানি বাংলাদেশের বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে।

একইভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারকারীদের তৈরি করা কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর কারণে অপরাধের দায় নিয়ে ফৌজদারি আইনের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে তারা এখানে তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকবে।’ ফলে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের পরিবেশ নির্বিঘœ না হওয়ায় নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না।
জনসংখ্যা নিয়ে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের তত্ত্ব বলছে, কোনো দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যদি আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা; তার সঙ্গে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উপযুক্ত কাজের সুযোগ তৈরি হয়, তাহলে মোট জাতীয় আয় বা উৎপাদন বৃদ্ধির সূচকও হবে ঊর্ধ্বমুখী, উন্নয়নের সুফল মিলবে ঘরে ঘরে। কিন্তু কর্মক্ষম মানুষের সুযোগ কাজে লাগাতে পারছেনা দেশ। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও বৈষম্যদুষ্ট বাজার অর্থনীতিকে দুষছেন অনেকেই। চীনা নেতা মাও সে তুংয়ের সেই বিখ্যাত উক্তি-‘অনেক হাত মানে অনেক শ্রম’। তিনি জনসংখ্যাকে সমস্যা না ভেবে, শক্তিতে পরিণত করার ডাক দিয়েছিলেন। তাতে জনসংখ্যার গুরুত্ব বেড়েছিল। অনাহার-দুর্ভিক্ষ মুছে ফেলে তারা হয়ে উঠেছিল বিশ্বের এক প্রধান শক্তি।
অথচ বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। এ দেশের কর্মসংস্থানেও তারুণ্যের ভূমিকা অসামান্য। স্বাধীনতার পর প্রায় সব খাতেই এগিয়েছে দেশ, বাড়ছে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতিও। তবে শিক্ষার হার বাড়লেও বাড়ছে না কর্মসংস্থানের। আর তাই শিক্ষিত তরুণরা আজ বেকার হয়ে বসে আছে।

মেধাবীরা বিদেশ চলে যাচ্ছেন।
প্রতিবছর নতুন নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে বেকারত্বের ঘরে। বর্তমান তরুণসমাজের বড় অংশই বেকার, অনিশ্চিত জীবনের পথে। কোনো দেশের জনশক্তির তুলনায় কর্মসংস্থানের স্বল্পতার ফলে সৃষ্ট সমস্যাই বেকার সমস্যা। বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, বেকার সমস্যা এর মধ্যে অন্যতম।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) একটি প্রতিবেদনে বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশই বেকার। মাত্র ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্য কোনো বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজের উদ্যোগে কাজ করছেন। অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই বেকার থাকছেন। অথচ পার্শ্ববর্তী ভারতে এই হার মাত্র ৩৩, পাকিস্তানে ২৮, নেপালে ২০ আর শ্রীলঙ্কায় মাত্র ৭ দশমিক ৮। এতেই বোঝা যায়, আমাদের দেশ থেকে আমাদের প্রতিবেশী দেশের বেকারত্বের হার কত কম।


বর্তমানে দেশে ২৬ লাখের বেশি বেকারের মধ্যে শিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই বেশি। বিভিন্ন সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে, বছরে চাকরিপ্রত্যাশী প্রায় ২০ লাখ মানুষ। কিন্তু কাজ না পাওয়ায় বাড়ছে দিন দিন বেকার সমস্যা। আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি দুই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাই বেড়েছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্র না বাড়ায় উচ্চশিক্ষা শেষে বেকারদের সংখ্যাও বাড়ছে।
দেশে জনসংখ্যা বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়ছে না কর্মসংস্থানের সুযোগ। সরকারি হিসাব বলছে, প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে বাড়ি ছাড়ছে ৬১ জনের বেশি মানুষ। এর মধ্যে চাকরি ও উপার্জনের উদ্দেশ্যে প্রায় সাড়ে ২৭ শতাংশ দেশ ও দেশের বাইরে স্থানান্তরিত হচ্ছে।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স-২০২২ শীর্ষক জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে। জরিপটিতে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়েছে ৩ লাখের বেশি খানা (পরিবার)। জরিপে বলা হয়েছে-চাকরি, বিয়ে, ডিভোর্স, শিক্ষা, নদীভাঙন ও পরিবারের সঙ্গে থাকতে এবং নতুন পরিবার গড়তে মানুষ বাড়ি ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছে বিদেশ। যাচ্ছে দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায়।


দেশে কাজ না থাকায় বিদেশে পাড়ি জমানোর হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ যেমন কাজের সন্ধানে বিদেশ যাচ্ছেন; তেমনি মেধাবী শিক্ষার্থীরাও পাস করে দেশে কাজ পাবেন না সে আশঙ্কা থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন। এদের বেশির ভাগই শিক্ষা লাভের পর দেশে ফিরছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে কাজ না থাকায় কর্মক্ষম মানুষের ৭২ শতাংশই কাজের সন্ধানে বিদেশ যাচ্ছেন। এক জরীপে দেখা যায়, কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে পাড়ি জমানোর হার ৭১ দশমিক ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি (৪৫ শতাংশ) মানুষ সউদী আরব যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে যাচ্ছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ মানুষ। কুয়েত যাচ্ছে ৪ দশমিক ১৬, সিঙ্গাপুর ৩ শতাংশ, মালয়েশিয়া ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ, ভারতে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইরাকে ১ শতাংশ মানুষ বৈধ পথে যাচ্ছেন।


সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশে খাত ভিত্তিক কর্মসংস্থানের কোনো শ্রম জরিপ নেই। আমরা করেনার সময় দেখেছি বেকারত্ব বেড়েছে। দেশে শতকরা ২০ ভাগের মতো ছদ্ম বেকার রয়েছে। যাদের উৎপাদনশীলতা এবং আয় খুবই কম। আবার বিপূল সংখ্যক মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। তাদের কাজও গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের নয়। আর শিক্ষিত বেকারের চাপ বাড়ছে। কারণ তাদের কর্মসংস্থানের জন্য যে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগের প্রয়েঅজন তা হচ্ছে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto